সড়কটি চালু হওয়ার পথে বাধা ছিল এক কাউন্সিলরের মালিকানাধীন ভবন। সেটি অপসারণ করা হলেও এবার বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে পল্লী বিদ্যুতের চারটি খুঁটি। খুঁটিগুলো অপসারণ না করায় যানবাহন চলাচল শুরু হচ্ছে না ২১ কোটি ৮৯ লাখ টাকায় নির্মিত সড়কটিতে। আশপাশের বাসিন্দারা সড়কটিকে গৃহস্থালির কাজে ব্যবহার করছেন। কেউ ধান মাড়াই করছেন, কেউ খড় বা ধান শুকাচ্ছেন। এই চিত্র রাজশাহীর গোদাগাড়ী থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমনুরা পর্যন্ত আঞ্চলিক সড়কের।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সড়কটি নির্মাণ করেছে। রাজশাহীর গোদাগাড়ীর রেলবাজারে সড়কটির একটি নামফলক রয়েছে। তাতে লেখা, ‘রেলবাজার থেকে আমনুরা সড়ক ভায়া মাওলানার গেট, ধুলিশংক রাতাহারি’। ৭০ কিলোমিটার দীর্ঘ এ সড়কের সাড়ে ১৯ কিলোমিটার পড়েছে গোদাগাড়ীতে। গত বছরের নভেম্বরেই সড়কের নির্মাণকাজ শেষ হয়ে যায়। কিন্তু গোদাগাড়ীর সাগুয়ান ঘুন্টি এলাকায় গোদাগাড়ী পৌরসভার এক কাউন্সিলরের ভবন ছিল সড়কের মাঝখানে। এ জন্য সড়কটি চালু করা যাচ্ছিল না। এ নিয়ে গত ৮ জানুয়ারি ‘কাউন্সিলরের ভবনে আটকা সড়ক’ শিরোনামে প্রথম আলোতে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
এরপর গত ৩০ মে সেই ভবন ভেঙে সড়ক উন্মুক্ত করা হয়। এলাকাবাসীর প্রত্যাশা ছিল এবার সড়ক দিয়ে যানবাহন চলাচল শুরু হবে। স্থানীয় লোকজনের জীবনযাত্রার মানের পরিবর্তন হবে। কিন্তু ৬ সেপ্টেম্বর সড়কটিতে গিয়ে দেখা যায়, সড়কের মাঝখানে বিদ্যুতের যে খুঁটি ছিল, সেই খুঁটি রেখেই কার্পেটিংয়ের কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। অন্তত চারটি খুঁটি না সরালে সড়ক দিয়ে যানবাহন চলাচল করতে পারবে না।
সড়কটি ব্যবহারের উপযোগী না হওয়ার কারণে স্থানীয় লোকজন সড়কে গৃহস্থালির নানা কাজ করছেন। সাগুয়ান ঘুন্টি এলাকায় দেখা গেল, উজ্জ্বল নামের এক কৃষক জমি থেকে ধান কেটে সড়কে স্তূপ করে রেখেছেন। সেখানেই মাড়াইযন্ত্র বসিয়ে ধানমাড়াইয়ের কাজ করছেন।
সেখান থেকে গোদাগাড়ীর রেলবাজারের দিকে আসতে আসতে দেখা গেল পুরো সড়কেই ধানমাড়াই, ধানের খড় ও ধান শুকানোর কাজ চলছে। সড়কে ধানমাড়াই প্রসঙ্গে কৃষক উজ্জ্বল বলেন, এক বছর হয়ে গেছে সড়ক হওয়ার। কোনো গাড়ি চলে না। তাই অনেকে ধানমাড়াইয়ের কাজ সড়কেই করছেন। এতে তো কারও অসুবিধা হচ্ছে না। রাস্তাজুড়ে দেখা গেল দলে দলে নারীরা ধান শুকানো, ধান ঝাড়া ও খড় শুকানোর কাজ করছেন। ছবি তুলতে বা কথা বলতে গেলে তাঁরা দৌড়ে বাড়ির ভেতর ঢুকে যাচ্ছেন।
কেন সড়ক নির্মাণের সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুতের খুঁটি সরানো হয়নি জানতে চাইলে এলজিইডির গোদাগাড়ী উপজেলা প্রকৌশলী মনসুর রহমানের ভাষ্য, প্রথমে তিনি এই প্রকল্পের সঙ্গে ছিলেন না। পরে এসেছেন। তিনি বলেন, এই সড়ক নির্মাণ প্রকল্প শেষ হয়ে গেছে। ওই প্রকল্পের মধ্যে বিদ্যুতের খুঁটি সরানোর বরাদ্দ ধরা ছিল না। কয়টি খুঁটি সরাতে হবে, তা আগে সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হয়নি। প্রথমে পুরোনো একটি রেললাইন ছিল। তখন এটা–সেটা সরানোর একটা প্রকল্প করা হয়েছিল। এরপর রাস্তার প্রকল্প। তারপর রাস্তার মাঝখানে একটা ভবন ছিল। সেটা সরানোর বরাদ্দ ছিল না। ভবন অপসারণের পর এখন বিদ্যুতের খুঁটির প্রসঙ্গ এসেছে।
প্রকৌশলী মনসুর আরও বলেন, প্রথমে অনেকগুলো খুঁটি সরানোর কথা ছিল। প্রাক্কলন করা হয়েছিল ১১ থেকে ১২ লাখ টাকা। তারপর সাত লাখ টাকা। সবশেষে ১ লাখ ১০ হাজার টাকার প্রাক্কলন করা হয়েছে। গত সপ্তাহে সেই টাকা জমা দেওয়া হয়েছে। পল্লী বিদ্যুতের কাঁকনহাটের উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) বিষয়টি দেখছেন। এখন চারটি খুঁটি সরাতে হবে। এগুলো সরাতেও সময় লাগবে। একটা খুঁটির সঙ্গে অনেকগুলো লাইনের সংযোগ রয়েছে।
পল্লী বিদ্যুতের কাঁকনহাটের উপমহাব্যবস্থাপক তরিকুল ইসলাম বলেন, এলজিইডি এই সড়কের খুঁটি সরানোর জন্য তাঁদের কাছে চার থেকে পাঁচবার আবেদন করেছে, কিন্তু তাদের বাজেট না থাকার কারণে টাকা জমা দেয়নি। প্রথমে অনেকগুলো খুঁটি সরানোর কথা চিন্তা করে সেই মোতাবেক আবেদন করেছিল। এখন দেখা যাচ্ছে, মাত্র চারটি খুঁটি সরালেই রাস্তা দিয়ে যানবাহন চলাচল করতে পারবে। সেই টাকা এবার তারা জমা দিয়েছে। এখন খুঁটি সরানোর বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।