লোডশেডিংয়ে উৎপাদন ব্যাহত

জেলায় ১ লাখ ২৫ হাজার তাঁত রয়েছে। প্রতিটি তাঁতে দুই থেকে তিনজন শ্রমিকের প্রয়োজন।

সিরাজগঞ্জে ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে তাঁতিদের উৎপাদন কমে গেছে। ফলে রোজগার কমেছে তাঁদের। জেলার বেলকুচির তামাই গ্রামে সম্প্রতি

সিরাজগঞ্জে ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে অনেক তাঁত কারখানা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। তাঁতিরা কারখানায় উৎপাদন সচল রাখতে ডিজেলচালিত জেনারেটর ব্যবহার করছেন। কিন্তু ডিজেলের দাম বাড়ায় লুঙ্গি, শাড়ি ও গামছা তৈরিতে অতিরিক্ত টাকা ব্যয় হচ্ছে। সে তুলনায় পণ্যের দাম না পাওয়ায় কারখানা সচল রাখা তাঁদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না।

বাংলাদেশ পাওয়ারলুম অ্যান্ড হ্যান্ডলুম ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন সিরাজগঞ্জ শাখা সূত্রে জানা গেছে, জেলার ৯টি উপজেলায় প্রায় ১ লাখ ২৫ হাজার তাঁত রয়েছে। এই তাঁত কারখানায় সুতা তৈরি, সুতায় রং দেওয়া, সুতা শুকানো ও কাপড় উৎপাদনের জন্য প্রতিটি তাঁতে দুই থেকে তিনজন শ্রমিকের প্রয়োজন। মালিক ও শ্রমিক মিলে প্রায় সাড়ে তিন লাখ মানুষ এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত।

কামারখন্দ উপজেলার তাঁতি আবুল হোসেন বলেন, জেলায় বারবার লোডশেডিং হওয়ায় এবং একই সঙ্গে জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় অধিকাংশ তাঁত কারখানা এখন বন্ধ হতে চলেছে। যেখানে ১০ জন শ্রমিক কাজ করতেন, লোডশেডিংয়ের কারণে বর্তমানে সেখানে তিনজন শ্রমিক কাজ করছেন। এতে উৎপাদন কম হচ্ছে। আবার যতটুকু উৎপাদিত হচ্ছে, সেগুলো মূল্যবৃদ্ধির কারণে হাটবাজারে বিক্রি হচ্ছে না।

বেলকুচি উপজেলার বানিয়াগাঁতী গ্রামের শাড়ি তৈরির শ্রমিক আবু হেলাল জানান, আগে দিনে তিন-চারটি শাড়ি তৈরি করা যেত। লোডশেডিংয়ের কারণে এখন সারা দিনে দুটি শাড়ি তৈরি করা যায় না। গত বছরের এই সময়ে একজন শ্রমিক সপ্তাহে তিন থেকে চার হাজার টাকার কাজ করত। এখন এক থেকে দেড় হাজার টাকার কাজ করা যাচ্ছে।

তাঁতিরা বলেন, সারা দিনে চার থেকে পাঁচবার বিদ্যুৎ চলে যায়। একবার বিদ্যুৎ চলে গেলে এক ঘণ্টার আগে আসে না। রাতে আবার তিনবার লোডশেডিং হয়। রাতের বেলা বিদ্যুৎ গেলে টানা দুই থেকে তিন ঘণ্টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ পাওয়া যায় না।

সিরাজগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২–এর মহাব্যবস্থাপক রমেন্দ্র চন্দ্র রায় বলেন, জেলায় দিনের বেলায় প্রয়োজন হয় ৬০ থেকে ৬৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। আর সেখানে পাওয়া যাচ্ছে ৪০ থেকে ৪৫ মেগাওয়াট। এ ছাড়া রাতে প্রয়োজন হয় ১০০ থেকে ১০৫ মেগাওয়াট, সেখানে পাওয়া যাচ্ছে ৭০ থেকে ৭৫ মেগাওয়াট। ফলে স্বাভাবিকভাবে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

শাহজাদপুর উপজেলার রুপনাই গ্রামের শ্রমিক জেলহস হোসেন জানান, প্রায় এক যুগ ধরে তাঁতের শ্রমিক হিসেবে কাজ করে ১০ জনের সংসার চালান। কাজ যতই কম থাকুক না কেন, প্রতি সপ্তাহে কমপক্ষে দুই থেকে তিন হাজার টাকা বিল পেতেন। এখন লোডশেডিংয়ের কারণে তা–ও রোজগার হচ্ছে না।

তামাই গ্রামের তাঁত ব্যবসায়ী আমিরুল ইসলাম বলেন, ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে জেনারেটর দিয়ে কারখানা চালু রাখা হতো। হঠাৎ তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় জেনারেটরও চালানো যাচ্ছে না। চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা জেনারেটর চালু রাখলে পাঁচ থেকে সাত লিটার তেল প্রয়োজন। এই কয়েক ঘণ্টার জন্য এক হাজার টাকা খরচ হয়। এতে উৎপাদন খরচ অনেক গুণ বেড়ে যায়।

সদর উপজেলার সুতা ব্যবসায়ী আসলাম সরকার বলেন, একদিকে লোডশেডিং, অন্যদিকে সুতার মূল্যবৃদ্ধি। এতে তাঁতিদের লোকসান গুনতে হচ্ছে। ৫০ কাউন্টের ১ বস্তা সুতা ১ বছর আগে ছিল ১৪ হাজার ৫০০ টাকা, এখন সেটির মূল্য হয়েছে ২২ হাজার ২০০ টাকা। এমন পরিস্থিতে ব্যবসা টিকিয়ে রাখাই কঠিন হয়ে পড়েছে।

বাংলাদেশ পাওয়ারলুম অ্যান্ড হ্যান্ডলুম ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন সিরাজগঞ্জ শাখার সভাপতি বদিউজ্জামান বলেন, লোডশেডিং ও জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় অধিকাংশ সময় কারখানায় উৎপাদন বন্ধ থাকছে। এই শিল্পকে বাঁচাতে দ্রুত সরকারকে বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।