পরশুরাম আ.লীগ

মাইক কাড়াকাড়ি থেকে হত্যার হুমকি, সভাপতি-সম্পাদকের বিরোধ প্রকাশ্যে

আওয়ামী লীগ
আওয়ামী লীগ

একটি জানাজায় অংশ নিতে গিয়ে মাইক কাড়াকাড়ি করেন দুই নেতা। পরে থানায় গিয়ে একে অপরের বিরুদ্ধে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন হত্যার হুমকির অভিযোগ এনে। এতটুকুতেও থামেননি দুজন। পৃথক সংবাদ সম্মেলন করে পরস্পরের বিরুদ্ধে করেছেন বিষোদ্‌গার। যার জের এখন গড়িয়েছে সংঘাতে।

ফেনীর পরশুরাম উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কামাল উদ্দিন মজুমদার ও সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন আহমেদ চৌধুরীর এমন কাণ্ডে সম্প্রতি প্রকাশ্যে এসেছে সংগঠনের অভ্যন্তরীণ বিরোধ। দলীয় পদের বাইরেও দুজন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি। কামাল উদ্দিন মজুমদার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এবং নিজাম উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী পৌরসভার মেয়রের দায়িত্ব রয়েছেন।

দুজনের বিরোধে এখন দলের নেতা-কর্মীদের একটি বড় অংশ বিভক্ত হয়ে পড়েছে। দলীয় কর্মসূচি বদলে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে মাঠে সক্রিয় তাঁরা। অভ্যন্তরীণ বিরোধ এরই মধ্যে গড়িয়েছে সংঘাতেও। কোন্দলের জেরে পিটিয়ে জখম করা হয়েছে উপজেলার সহসভাপতির দায়িত্বে থাকা একজন প্রবীণ নেতাকে। হামলার ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া আটজনের বেশির ভাগই দলের নেতা-কর্মী। যাঁদের মধ্যে উপজেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ও একজন ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি রয়েছেন। উপজেলা শাখার এমন কর্মকাণ্ডে বিব্রত দলের জেলা শাখার নেতারা।

জানতে চাইলে ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক এ কে শহীদুল্লাহ খোন্দকার বলেন, ‘যতটুকু শুনেছি খুবই দুঃখজনক ঘটনা। জেলা আওয়ামী লীগ এ বিষয়ে খোঁজখবর নিচ্ছে। সরেজমিনে গিয়ে স্থানীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে তদন্তের পর এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

দলীয় সূত্র জানায়, প্রায় এক বছর ধরে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কামাল উদ্দিন মজুমদার ও সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন আহমেদ চৌধুরীর বিরোধ চলে আসছে। এর আগে দলের অভ্যন্তরীণ বৈঠক ও কর্মকাণ্ডে সেটি প্রকাশ পেলেও গত মঙ্গলবার একটি জানাজায় অংশ নিতে গিয়ে দুজনের বাগ্‌বিতণ্ডায় সেটি প্রকাশ্যে আসে। ওই দিন একে অপরের বিরুদ্ধে গালিগালাজ ও হত্যার হুমকির অভিযোগে থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। পরে বৃহস্পতিবার পৃথকভাবে নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন দুজন।

সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, সভাপতি কামাল উদ্দিন মজুমদার সরকারি জায়গা দখল করে দোকান ও গুদাম নির্মাণ করেছেন। পৌরসভার ড্রেন করার সময় তাঁর দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হবে জেনে তিনি ক্ষিপ্ত হয়েছেন।

সংবাদ সম্মেলনে সভাপতি কামাল উদ্দিন মজুমদার বলেন, তাঁকে নানাভাবে বিভিন্ন সময় হেনস্তার চেষ্টা করেছেন নিজাম উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী। তাঁর ওপর হামলা হলে, তাঁর অস্বাভাবিক মৃত্যু হলে এর জন্য নিজাম উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী দায়ী থাকবেন।

সরকারি জায়গায় স্থাপনা নির্মাণের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি জেলা পরিষদ থেকে ইজারা নেওয়া কিছু জমি ও পৈতৃক জমিতে স্থাপনা করেছি। নিজাম উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী একনিষ্ঠ নেতা-কর্মীদের বাদ দিয়ে হাইব্রিডদের প্রাধান্য দেন, নেতা-কর্মীদের গায়ে হাত তোলেন- এসব অপকর্মের প্রতিবাদ করায় তিনি আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন।’

সংবাদ সম্মেলন ছাড়াও থানায় সাধারণ ডায়েরি করার পর থেকে সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন আহমেদের পক্ষে বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারে পরশুরামে একাধিক মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার সভাপতির ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত অনাদি রঞ্জন সাহাকে লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে জখম করা হয়।

আহত অনাদি রঞ্জন সাহা অভিযোগ করেন, সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী অনুসারীরা মুঠোফোনে তাঁকে ডেকে নিয়ে হামলা করেছেন। এ ঘটনায় উপজেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক একরামুল হক চৌধুরী ও পৌরসভার একটি ওয়ার্ড শাখার সভাপতি মো. ইব্রাহিমকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর দুজন নিজাম উদ্দিন আহমেদ চৌধুরীর অনুসারী।