নড়াইলে জনতার মুখোমুখি হয়ে ভূমি কার্যালয়ের দুর্নীতি, স্বাস্থ্যসেবা জোরদার, জলাবদ্ধতা নিরসন, সড়ক সংস্কারসহ নানা বিষয়ে স্থানীয়দের প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন নড়াইল-২ (লোহাগড়া-সদর একাংশ) আসনের সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মুর্তজা। এ সময় সংসদ সদস্যের কাছে বিভিন্ন দাবিদাওয়া পেশ করেন স্থানীয় লোকজন।
আজ বুধবার বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সদর উপজেলার হবখালী ইউনিয়নের হাড়িগাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে তিনি স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলেন। মাশরাফির নির্দেশনায় ‘জনতার মুখোমুখি জনতার সেবক’ স্লোগানে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে হবখালী ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি)।
সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর গত চার বছরে হবখালী ইউনিয়নে কী কী বরাদ্দ হয়েছে, কী কী উন্নয়ন হয়েছে এবং আরও কী কী পরিকল্পনা আছে, তা তুলে ধরেন মাশরাফি। এ ছাড়া উপস্থিত লোকজনের কাছে সমস্যা ও প্রয়োজনের বিষয়েও পরামর্শ চান তিনি। জনতার মুখোমুখি অনুষ্ঠানে শত শত মানুষ উপস্থিত হয়েছিলেন।
হবখালী ইউপির চেয়ারম্যান মো. টিপু সুলতানের সভাপতিত্বে শুরুতে মাশরাফি স্বাগত বক্তব্য দেন। এরপর স্থানীয় কৃষক, শিক্ষক, ছাত্র, ব্যবসায়ী ও জনপ্রতিনিধিসহ ২৩ জন ব্যক্তি নানা প্রশ্ন ও দাবিদাওয়া তুলে ধরেন। সবচেয়ে বেশি প্রশ্ন আসে স্থানীয় ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়ের দুর্নীতি নিয়ে। অন্তত পাঁচজন কৃষক ওই কার্যালয়ে নানা হয়রানির তথ্য তুলে ধরেন। এ সময় উপস্থিত জনতা হাততালি দিয়ে প্রশ্নের প্রতি সমর্থন জানান।
সাধুখালী গ্রামের কৃষক মতিয়ার রহমান বলেন, ‘মৌসুমের শুরুতেই পটাশ সার নেই, এ কথা প্রচার করে স্থানীয় ডিলাররা সারের দাম বেশি নিয়েছেন। এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেবেন কি না?’ ভান্ডারিয়া মাদ্রাসা মাঠে ডোবা ভরাটের জন্য এক লাখ টাকা বরাদ্দ হলেও কোনো কাজ হয়নি। এ প্রশ্ন করেন স্থানীয় কৃষক আব্দুর রহমান। স্থানীয় ইউপি সদস্য রিক্তা রানী ঘোষ বলেন, ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসক, নার্স ও ওষুধ—কিছুই পাওয়া যায় না।
প্রশ্নের জবাব ও দাবিদাওয়ার বিষয়ে মাশরাফি বলেন, ‘ভূমি অফিসের দুর্নীতি, সারের বেশি দাম নেওয়াসহ অন্যান্য দুর্নীতির বিষয়ে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেবেন। এ ছাড়া স্বাস্থ্যসেবা, কাঁচা রাস্তা পাকাকরণ, জলাবদ্ধতা নিরসন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মাদ্রাসা, মন্দির ও শ্মশানে বরাদ্দের বিষয়ে নোট নিয়েছি, দ্রুত ব্যবস্থা হবে।’
এর আগে বক্তব্যের শুরুতে মাশরাফি বিন মুর্তজা বলেন, ‘আমি আপনাদের সচেতন করতে এসেছি। এ ইউনিয়নে গত চার বছরে কী বরাদ্দ হয়েছে, কী উন্নয়ন হয়েছে, কীভাবে হয়েছে—এসব বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা দিতে এসেছি। আপনারা আমাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন। আমি আপনাদের যেকোনো প্রশ্নের জবাব দিতে বাধ্য। আপনাদের সেবার দায়িত্ব কাঁধে নিয়েছি। আমি তাই সরাসরি আপনাদের মুখোমুখি হয়েছি।’
মাশরাফি জনগণের উদ্দেশে প্রশ্ন রাখেন, ‘সংসদ সদস্যের মাধ্যমে বরাদ্দ হওয়া টিআর, কাবিখা, কাবিটা বা যেকোনো উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য কোনো টাকা নেওয়া হয়েছে কি না? আমি, আমার আত্মীয়স্বজন বা আমার পরিচয়ে কেউ কোনো টাকা নেন কি না? এ সময় উপস্থিত লোকজন হাত তুলে ‘না’ বলে জবাব দেন।
মাশরাফি বলেন, নড়াইল উন্নয়ন প্রকল্প নামে ডিপিপি তৈরি হয়েছে। এটি চূড়ান্ত অনুমোদন হলে নড়াইলের ৬০ শতাংশ সড়ক পাকা হবে। গত চার বছরে তাঁর আসনে যে উন্নয়ন প্রকল্প বরাদ্দ হয়েছে, তা গত ৫০ বছরে হয়নি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব বরাদ্দ দিয়েছেন। তাঁর জন্য দোয়া করবেন।
মাশরাফির বক্তব্যের পর জেলা পরিষদের প্রশাসক ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সুবাস চন্দ্র বোস তাঁর বক্তব্যে বলেন, মাশরাফি ক্রিকেট মঞ্চ থেকে জনতার মঞ্চে এসেছেন। জনতার মুখোমুখি হয়েছেন। তাঁর সৎ সাহস আছে বলেই এ ধরনের জনতার মুখোমুখি কর্মসূচি হাতে নিয়েছেন। নড়াইল পৌরসভার মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আঞ্জুমান আরা বলেন, জনগণের মুখোমুখি হওয়া দুঃসাহসিক ব্যাপার। চার বছর সংসদ সদস্য থাকার পর সততা ও সাহস না থাকলে জনগণের মুখোমুখি হওয়া যায় না।