৯ মাসের ব্যবধানে জাতীয় সংসদের ব্রাহ্মণবাড়িয়া ২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনে দ্বিতীয়বারের মতো উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। আসন্ন উপনির্বাচনে প্রার্থী হতে চান সদ্য প্রয়াত সংসদ সদস্য উকিল আবদুস সাত্তার ভূঁইয়ার একমাত্র ছেলে মাঈনুল হাসান ভূঁইয়া। আজ মঙ্গলবার প্রথম আলোকে এমন ইচ্ছার কথা তিনি জানিয়েছেন।
আসনটিতে আলোচিত আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া গত শনিবার মারা যান। পর দিন আসনটি শূন্য ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত মোতাবেক আগামী ৫ নভেম্বর এ আসনে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে চলতি বছরের ১ ফেব্রুয়ারিতেও এ আসনে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। তখন নির্বাচিত হন আবদুস সাত্তার।
মাঈনুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘দল যদি আমাকে নির্বাচন করতে বলে তবে আমি নির্বাচন করতে প্রস্তুত আছি।’ দল বলতে কোন দলকে বোঝাচ্ছেন, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা এখন আর বিএনপি করি না। বিএনপির সঙ্গে নাই। বিএনপির সঙ্গে আসার প্রশ্নই উঠে না। গত উপনির্বাচেনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আমার আব্বুকে সমর্থন দিয়েছে। এখন আমাদের দল বলতে আমরা আওয়ামী লীগকেই বুঝি। তবে এখনো আওয়ামী লীগ থেকে আমার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ হয়নি।’
বাবার জনপ্রিয়তা ধরে রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করে মাঈনুল হাসান বলেন, ‘আমার বাবা এখান থেকে ছয়বার নির্বাচিত হয়েছেন। অবশ্যই আমার বাবার জনপ্রিয়তা ছিল। আমি তো তাঁরই সন্তান। উনার সন্তান হিসেবেই আমরা তো আশা করতেই পারি। বাবার অবস্থান আমরা ধরে রাখতে পারব। এলাকার মানুষ আমার বাবাকে প্রচণ্ড ভালোবাসতেন। আমরা আশা করি, সেই ভালোবাসা ধরে রাখতে পারব। আবার বাবা ছয়বার প্রার্থী হয়ে প্রতিবারই জয়ী হয়েছেন। ওনি জনপ্রিয় ছিলেন বলেই এমনটি সম্ভব হয়েছে। রাজনীতি করলে কিছু ভুলত্রুটি বা সমালোচনা থাকতেই পারে। আমি ভালো করব বলে আশা করি।’
এবারের উপনির্বাচনে প্রার্থী হতে চাইছেন সরাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নাজমুল হোসেন। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘আমি আগামী উপনির্বাচনে দলের মনোনয়ন প্রাত্যাশী। দীর্ঘ ৪৪ বছর ধরে দলের সঙ্গে আছি। তবে দল যাঁকে মনোনয়ন দেবে, আমি তাঁকেই মেনে নেব।’
উকিল আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া ছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার প্রত্যন্ত এবং হাওরবেষ্টিত পাকশিমুল ইউনিয়নের পরমানন্দপুর গ্রামের বাসিন্দা। দলীয় ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া জাগদলের (বিএনপির সাবেক নাম) রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ১৯৭৯ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে কুমিল্লা–১ আসন (নাসিরনগর-সরাইলের একাংশ) থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী (হুক্কা প্রতীক) হিসেবে নির্বাচন করে বিজয়ী হন। পরে বিএনপিতে যোগদান করেন।
এরপর পঞ্চম, ষষ্ঠ, সপ্তম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া–২ আসন থেকে বিএনপির দলীয় প্রতীক নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আবদুস সাত্তার। মাঝখানে চারদলীয় জোটের আমলে (২০০১-০৬) সালে তিনি টেকনোক্রেট প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেছেন। ২৭ বছর ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন।
গত ১১ ডিসেম্বর আবদুস সাত্তার বিএনপির দলীয় সিদ্ধান্তে জাতীয় সংসদ থেকে পদত্যাগ করেন। পরে ওই আসনে উপনির্বাচনে অংশগ্রহণে ইচ্ছা প্রকাশ করলে তাঁকে বহিষ্কার করে বিএনপি। এরপর গত ১ ফেব্রুয়ারিতে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের প্রত্যক্ষ সমর্থন নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী (কলার ছড়ি প্রতীক) হয়ে তিনি ওই বিজয়ী হন।
ওই নির্বাচনের ৯ মাসের মাথায় আবদুস সাত্তার মারা গেলেন। আসনটি শূন্য হওয়ায় আবার সেখানে উপনির্বাচন আয়োজনের উদ্যোগ নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। আজ মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশন থেকে উপনির্বাচনে তফসিল ঘোষণাও করা হয়েছে। তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র জমার শেষ তারিখ ১১ অক্টোবর, বাছাই হবে ১২ অক্টোবর এবং প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ১৯ অক্টোবর। ভোট হবে ৫ নভেম্বর। আগের উপনির্বাচনে ইভিএমে ভোট হলেও এবার হবে ব্যালট পেপারে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া–২ আসনটি সরাইল উপজেলার নয়টি এবং আশুগঞ্জ উপজেলার আটটি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। এখানে মোট ভোটারের সংখ্যা ৪ লাখ ১০ হাজার ১১২। এর মধ্যে সরাইলে ভোটারের সংখ্যা ২ লাখ ৬৬ হাজার ৫৯৭, আর আশুগঞ্জে ভোটারের সংখ্যা ১ লাখ ৪৩ হাজার ৫১৫।
ফেব্রুয়ারির উপনির্বাচনে আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া ৪৪ হাজার ৯১৬ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছিলেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় পার্টির আবদুল হামিদ ভাসানী পেয়েছিলেন ৯ হাজার ৬৩৫ ভোট। ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আবদুস সাত্তার বিএনপির দলীয় প্রার্থী হয়ে ৮৩ হাজার ৯৯৭ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছিলেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মঈন উদ্দিন। তিনি পেয়েছিলেন ৭৫ হাজার ৪১৯ ভোট।