জাতীয় হিন্দু মহাজোটের কেন্দ্রীয় মহাসচিব গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক বলেছেন, ‘অতীতের অনেক সময়ের চেয়ে এ বছর অনেক শান্তিপূর্ণভাবে পূজা উদ্যাপিত হয়েছে। এরপরও ভেতরে-ভেতরে অনেক উসকানি ছিল, হিন্দুদের বাড়িঘরে হামলা করে ম্যাসাকার করে বিশ্বব্যাপী দেখিয়ে তারা আবার শেখ হাসিনাকে প্রত্যাবর্তন করাবে। দুর্গাপূজার সময় দেশের মন্দির ও হিন্দুদের বাড়িঘরে হামলা চালানোর ষড়যন্ত্র করেছিল আওয়ামী লীগ। মন্দিরে হামলা চালিয়ে আগুন ধরিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে ভারতকে দিয়ে সামরিক অভিযান চালিয়ে সরকারকে ব্যর্থ করে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় বসানোর পাঁয়তারা করা হয়েছিল। ওই হামলা চালানোর জন্য টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছিল। সরকারের সঙ্গে হিন্দুরা সতর্ক থেকে তা নস্যাৎ করে দেওয়া হয়েছে।’
আজ শনিবার শরীয়তপুরে কেন্দ্রীয় মন্দিরে ‘বিজয়া পুনর্মিলনী’ অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথির বক্তব্যে গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক এসব কথা করেন। তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন জায়গা থেকে আমরা জেনেছিলাম, আওয়ামী লীগ অনেক টাকা বিনিয়োগ করেছে, পূজামণ্ডপে যেন হামলা হয়। হামলা হলেই ভারত একটি সামরিক অভিযান চালাবে। বলবে, এ সরকার ব্যর্থ। আবার শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় আনা হোক। এ জন্যই আমরা হিন্দুদের বলেছি, তাদের ফাঁদে পা দেওয়া যাবে না। মূলত আমাদের ঘাড়ে পা দিয়ে আওয়ামী লীগ বিভিন্ন সময় সুবিধা নিয়েছে। এটা আওয়ামী লীগের একটা কৌশল। তারা ভারতকে ব্ল্যাকমেল করে। ভারতের নেতারাও এতটা বুঝতে পারেন না, শেখ হাসিনা কতটা ধুরন্ধর।’
গোবিন্দ চন্দ্র আরও বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় বসার জন্য হিন্দুদের ব্যবহার করে। কিন্তু হিন্দুদের কল্যাণে কোনো কাজ করে না। আওয়ামী লীগের আমলে হিন্দুদের জমি সবচেয়ে বেশি দখল হয়েছে। ৭১-পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকতে হিন্দুরা সবচেয়ে বেশি দেশত্যাগ করেছেন। তাই এখন হিন্দুদের ঘুরে দাঁড়ানোর সময় এসেছে। এখন আর হিন্দুরা তাদের ফাঁদে পা দেবেন না।
শরীয়তপুরে ১০২টি মন্দিরে শারদীয় দুর্গাপূজা সুন্দরভাবে সম্পন্ন হওয়ায় বিজয়া পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। জাতীয় হিন্দু মহাজোট শরীয়তপুর জেলা কমিটির উদ্যোগে জেলা কেন্দ্রীয় মন্দির পালং হরিসভায় অনুষ্ঠানটি উদ্যাপন করা হয়। এ উপলক্ষে বেলা ১১টার দিকে শহরে একটি শোভাযাত্রা বের করা হয়। কেন্দ্রীয় মন্দির থেকে শোভাযাত্রাটি শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে পুনরায় কেন্দ্রীয় মন্দির পালং হরিসভায় গিয়ে শেষ হয়। শোভাযাত্রায় নেতৃত্ব দেন গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক। এরপর পুনর্মিলনীর অনুষ্ঠানটি উদ্বোধন করেন জাতীয় হিন্দু মহাজোট কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আইনজীবী দীনবন্ধু রায়। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনটির মহাসচিব গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক। জেলার বিভিন্ন মন্দিরের পূজারি ও ভক্তরা দুর্গাপূজার সময়ে তাঁদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন অনুষ্ঠানটিতে। স্থানীয় শিল্পীরা সংগীত ও নৃত্য পরিবেশন করেন।
শরীয়তপুর জেলা কমিটির সভাপতি নারায়ণ চন্দ্র ব্যাপারীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন কবি শ্যামসুন্দর দেবনাথ, মহাজোটের যুগ্ম মহাসচিব হেমন্ত দাস, জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক নৃপেন দেবনাথ, জেলা বিএনপির সহসভাপতি মোফাজ্জল ফকির, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন বাদল, সাংগঠনিক সম্পাদক মাহাবুবুর রহমান তালুকদার, জামায়াতে ইসলামীর নেতা আবুল বাসার প্রমুখ। হিন্দুদের নানান কৃষ্টি ও ইতিহাস তুলে ধরে পূজা সম্পন্ন করায় অনুষ্ঠানে জেলার তিনটি মন্দিরকে পুরস্কার ও সম্মাননা স্মারক তুলে দেওয়া হয়।