জামালপুরের মেলান্দহে বৃদ্ধ মা–বাবাকে বাড়িছাড়া করতে ছেলে ও পুত্রবধূর বিরুদ্ধে কৌশলে সব সম্পত্তি লিখে নেওয়া ও ব্যাপক মারধরের অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলার ঝাউগড়া ইউনিয়নের শেখ সাদী গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে। এলাকাবাসী ওই বৃদ্ধ-বৃদ্ধাকে উদ্ধার করে হাসপাতালেও ভর্তি করেন। পরে এলাকাবাসী ঐক্যবদ্ধ হয়ে গতকাল বুধবার মেলান্দহ থানায় মামলা করিয়েছেন। ওই মামলায় পুত্রবধূকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। অভিযুক্ত ছেলে পলাতক।
ভুক্তভোগী ব্যক্তিরা হলেন ইয়াদ আলী (৭৫) ও তাঁর স্ত্রী মনোয়ারা বেগম (৬৫)। এই বৃদ্ধ দম্পতির দুই ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। বড় ছেলে মো. মোস্তফা (৪২) শারীরিক প্রতিবন্ধী। মেয়ে বিলকিসের (৩৭) বিয়ে হয়ে গেছে। সবার ছোট ছেলে মো. উমর ফারুক (৩৫) ও তাঁর স্ত্রী মোর্শেদা বেগম (৩০) বাড়িতে থাকেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ইয়াদ আলী দরিদ্র মানুষ। কখনো কলা বিক্রি বা মাটি কাটার কাজ করে তিনি পুরো সংসার চালাতেন। এখন বয়সের ভারে শারীরিকভাবে অক্ষম হয়ে যাওয়ায় কাজকর্ম করতে পারেন না। তাঁর সাড়ে ৩৯ শতাংশ জমি ছিল। সেখানে তিনি বসবাস করতেন। তাঁর ছোট ছেলে উমর ফারুক ২ শতাংশ জমি লিখে নেওয়ার কথা বলে পুরো সাড়ে ৩৯ শতাংশ জমি লিখে নিয়েছেন। বিষয়টি বুঝতে পেরে ওই বৃদ্ধ জমির দলিল বাতিল চেয়ে আদালতে মামলা করেছেন। এতেই চরমভাবে ক্ষুব্ধ হয় ছেলে উমর ফারুক মা–বাবাকে শুরু করেন নির্যাতন। গত সোমবার বৃদ্ধ ও বৃদ্ধাকে ব্যাপকভাবে মারধর করেছেন।
পুলিশ পুত্রবধূ মোর্শেদা বেগমকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে। ছেলে উমর ফারুক পলাতক রয়েছেন।
এলাকাবাসী জানান, ইয়াদ আলী বয়সের ভারে অনেকটাই ন্যুব্জ। আয়রোজগার করার মতো অবস্থা তাঁর নেই। মানুষের কাছ থেকে চেয়েচিন্তে দিন চলে তাঁর। তিন সন্তানের মধ্যে বড় ছেলে শারীরিক প্রতিবন্ধী, নিজেই চলতে কষ্ট হয়। মেয়েটির বিয়ে হয়ে গেছে। ছোট ছেলে মো. উমর ফারুক বাড়িতে থাকেন। কিন্তু উমর ফারুক তাঁর মা–বাবাকে ভরণপোষণ দেন না। কিন্তু কৌশলে সব জমিজমা লিখে নিয়ে বাড়িছাড়া করতে স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে মা–বাবার ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালান। গত সোমবার সকালে মা–বাবাকে প্রথমে চড়থাপ্পড় শুরু দেওয়া শুরু করেন ছেলে। একপর্যায়ে ছেলে ও পুত্রবধূ লাঠি দিয়ে বৃদ্ধ-বৃদ্ধাকে ব্যাপক মারধর করেন। খবর পেয়ে স্থানীয় লোকজন আহত অবস্থায় তাঁদের উদ্ধার করেন। স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় গতকাল বিকেলে বৃদ্ধ ইয়াদ আলী ছেলে উমর ফারুক ও পুত্রবধূ মোর্শেদা বেগমের নামে থানায় মামলা করেন। পুলিশ পুত্রবধূ মোর্শেদা বেগমকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে।
ইয়াদ আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই সন্তানদের মানুষ করতে কতই না কষ্ট করেছি। নিজে না খেয়ে সন্তানদের মুখে খাবার তুলে দিয়েছি। লালন-পালন করে বড় করেছি। কিন্তু দুর্ভাগ্য, আজ সেই সন্তান একবারও জিজ্ঞেস করে না, কেমন আছি। তারা রান্না করে খায়, কখনো জিজ্ঞেস পর্যন্ত করে না, আমরা খেয়েছি কি না। তার চেয়ে বড় কথা, সেই সন্তান এখন মারধর করে। সন্তানের মারধরে সারা শরীরে আঘাত। লাঠি দিয়ে পিটিয়েছে বাড়ি থেকে বের করে দিতে। আমার কষ্টের টাকায় কেনা জমি লিখে নিয়েছে। এখন বাড়িতেও থাকতে দেবে না। আমরা দুজন এই বয়সে কই যাব? কী লাভ সন্তানদের মানুষ করে। বুড়ো বয়সে সন্তানের হাতে মার খেতে হয়।’ এ কথা বলে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন।
মেলান্দহ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দেলোয়ার হোসেন বলেন, বৃদ্ধ মা–বাবাকে মারধরের অভিযোগে থানায় মামলা হয়েছে। মামলায় ছেলে ও পুত্রবধূকে আসামি করা হয়েছে। পুত্রবধূকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঘটনার পর থেকে ছেলে পলাতক। তাঁকেও দ্রুত সময়ের মধ্যে গ্রেপ্তার করা হবে।