ফরিদপুরের ভাঙ্গা, আলফাডাঙ্গা ও সালথা উপজেলায় ঘূর্ণিঝড়ে কয়েকটি গ্রামের শতাধিক কাঁচা-পাকা বসতঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। উপড়ে পড়েছে তিন শতাধিক গাছপালা ও বেশ কয়েকটি বিদ্যুতের খুঁটি। এ ছাড়া ভাঙ্গায় ঘরের ওপর গাছ পড়ে ঝর্ণা বেগম (২১) নামের এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা সোয়া তিনটা থেকে সন্ধ্যার মধ্যে আলফাডাঙ্গা, ভাঙ্গা ও সালথার বিভিন্ন এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। ভাঙ্গায় মারা যাওয়া ঝর্ণা বেগম ছোট হামিরদী গ্রামের শাহাবুদ্দিন শেখের স্ত্রী। ভাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আজিমউদ্দিন বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন।
প্রত্যক্ষদর্শী ও সংশ্লিষ্ট এলাকার বাসিন্দারা জানান, টিনের ঘরের ওপর গাছ উপড়ে পড়ায় ঘরের চাল ভেঙে ছোট হামিরদী গ্রামে ওই গৃহবধূর মৃত্যু হয়। এ ছাড়া ঝড়ে আজিমনগর ইউনিয়নের পুকুর পাড়, কর্ণিকান্দা, তাড়াইল, ঈশ্বর্দী গ্রাম, চান্দ্রা ইউনিয়নের পুলিয়া গ্রাম ও হামিরদী ইউনিয়নের ছোট হামিরদী, বড় হামিরদী গ্রামের শতাধিক বাড়িঘর লন্ডভন্ড হয়েছে। এ সময় কয়েক শ গাছ ভেঙে পড়ে। ভাঙ্গার হামিরদী এলাকায় ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে কয়েকটি বড় গাছ ভেঙে পড়ায় প্রায় দেড় ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ থাকে। ভাঙ্গা ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা মহাসড়ক থেকে গাছ সরিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক করেন।
হামিরদী গ্রামের সায়েম মিয়া (৪৫) বলেন, দুপুর থেকে ভারী বর্ষণ হচ্ছিল। সন্ধ্যার দিকে হঠাৎ ৫-১০ মিনিটের ঝড়ে দুই গ্রামের ৫০টির বেশি বাড়িঘর ও কয়েক শ গাছ ভেঙে যায়।
ইউএনও আজিমউদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের তালিকা করা হচ্ছে। জেলা প্রশাসক মো. কামরুল আহসান তালুকদার আজ দুপুরে আজিমনগর ইউনিয়নের ৩০টি পরিবারকে ১০ কেজি করে চাল, দুই কেজি করে ডাল, এক লিটার করে তেল বিতরণ করেছেন। ক্ষতিগ্রস্ত বাকিদের সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের মধ্যে পরে টিনও বিতরণ করা হবে।
অন্যদিকে ঝড়ে আলফাডাঙ্গা উপজেলার সদর ইউনিয়নের বিদ্যাধর, ব্রাহ্মণ-জাটিগ্রাম, বেজিডাঙ্গা; টগরবন্ধ ইউনিয়নের মালা, কৃষ্ণপুর-টগরবান, তিতুরকান্দি গ্রামের কাঁচা-পাকা বাড়িঘর, গাছপালা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আলফাডাঙ্গা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ কে এম জাহিদুল হাসান বলেন, গতকাল সকাল থেকেই প্রচণ্ড বৃষ্টি হচ্ছিল। বিকেলে মাত্র এক মিনিটের ঝড়ে দুই ইউনিয়নের ছয়টি গ্রামের প্রায় শতাধিক কাঁচা–পাকা বাড়িঘর ভেঙে গেছে। এ ছাড়া শতাধিক গাছপালা উপড়ে পড়েছে। অনেকেই খোলা আকাশের নিচে অবস্থান নেন। তাঁদের নিরাপদ স্থান ও আশপাশের এলাকায় অস্থায়ীভাবে রাখা হয়েছে।
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আলফাডাঙ্গা উপ-আঞ্চলিক কার্যালয়ের কর্মকর্তা ফাহিম হাসান বলেন, ঘূর্ণিঝড়ে কয়েকটি গ্রামে বিদ্যুৎ সঞ্চালন বন্ধ আছে। বিদ্যুতের তিনটি খুঁটি ভেঙে গেছে। অনেকগুলো আঁকাবাঁকা হয়ে পড়েছে। আজকালের মধ্যে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া সম্ভব হবে।
এদিকে সালথার বল্লভদী ইউনিয়নের সোনাতুন্দী গ্রামে মাত্র তিন মিনিটের ঝড়ে ২০টি কৃষক পরিবারের অন্তত ৩০টি বসতঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। বল্লভদী ইউপির চেয়ারম্যান খন্দকার সাইফুর রহমান বলেন, ঝড়ে ২০টি পরিবারের অনেকগুলো বসতঘর তছনছ হয়ে গেছে। তার ছিঁড়ে পুরো গ্রাম বিদ্যুৎবিহীন আছে। প্রাথমিকভাবে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে পরিষদের পক্ষ থেকে ত্রাণ দেওয়া হয়েছে।
সালথার ইউএনও আনিছুর রহমান বলেন, ‘আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। ঝড়ে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে ১০টির মতো বসতঘর লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত ৩০টি পরিবারকে সহায়তা দেওয়ার জন্য তালিকা করা হচ্ছে।’
জেলা প্রশাসক মো. কামরুল আহসান তালুকদার বলেন, ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের খোঁজখবর নিয়ে তালিকা করে সহযোগিতার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।