হাওরের উন্নয়নে হাওর মাস্টারপ্ল্যান সময়োপযোগী করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী আইনজীবী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। আজ সোমবার সুনামগঞ্জে ‘হাওরের বাঁধ, কৃষি, নদী ও পরিবেশ সংকট নিরসনে করণীয়’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
সুনামগঞ্জ সার্কিট হাউস মিলনায়তনে অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এএলআরডি), বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) ও বাংলাদেশ পানি অধিকার ফোরাম যৌথভাবে আলোচনা সভার আয়োজন সভার করে। সকাল ১০টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত সভায় সুনামগঞ্জের হাওরপারের বাসিন্দা, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা, হাওর আন্দোলনের নেতা, গণমাধ্যমকর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ১৩০ জন প্রতিনিধি অংশ নেন। প্রধান অতিথি ছিলেন সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী। সভাপতিত্ব করেন এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা।
বেলার প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান আলোচনা অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন। তিনি বলেন, সেন্ট মার্টিনে পর্যটকদের রাত্রিযাপনের সুযোগ দিয়ে সেটিকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। হাওরেও তাই হচ্ছে। হাওরে হাউসবোট ও পর্যটকদের নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। যারা হাওর নদীতে পরিবেশের জন্য ক্ষতি করবে, তাদের শাস্তি দিতে হবে। কিন্তু এটা কম হয়। হাওরের উন্নয়নে হাওর মাস্টারপ্ল্যান সময়োপযোগী করতে হবে। দাবি আছে, এ–সংক্রান্ত কোনো প্রতিষ্ঠান হলে সেটার প্রধান কার্যালয় হতে হবে সুনামগঞ্জে।
মুক্ত আলোচনায় বক্তারা বলেন, হাওরে নানা সংকট আছে। হাওরের ফসল নিয়ে প্রতিবছর চিন্তায় থাকেন কৃষকেরা। বাঁধ নির্মাণের নামে প্রতিবছর সরকারি টাকা লুটপাট হয়। টাঙ্গুয়ার হাওরে রামসার সাইট ঘোষণার পর গত ২০ বছরে কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন হয়নি। হাওরে প্রাকৃতিক পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। নদী ও হাওরে পলি পড়ে ভরাট হচ্ছে। কৃষিজমি কমছে। পরিকল্পনায় কোনো উদ্যোগ নেই।
টাঙ্গুয়ার হাওর নিয়ে যা হচ্ছে, সেটি পায়ের মাপে জুতা না বানিয়ে জুতার মাপে পা বানানোর মতো বলেও মন্তব্য করেন সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি আরও বলেন, ‘হাওরে মাছের উৎপাদন বাড়ানোর বিষয়ে সচেতন হতে হবে। ইজারা দিতে আমরা নিষেধ করি না। কিন্তু ইজারার শর্ত যখন ভঙ্গ হয়, বিল-হাওর সেচে মাছ ধরা হয়, তখনো আমরা দেখি প্রশাসন নীরব। মৎস্য বিভাগকে আমরা কখনো সোচ্চার দেখি না। কখনো ইজারা বাতিল করতে দেখি না।’
সুনামগঞ্জের যাদুকাটা নদে বালু উত্তোলন প্রসঙ্গে সৈয়দা রিজওয়ান হাসান বলেন, বালু ব্যবসায়ীদের স্বার্থের চেয়ে জনগণের স্বার্থ বড়, এটা বুঝতে হবে। এই স্থানটি পর্যটকদের কাছে অতিপ্রিয়। কিন্তু সেখানে অবাধে বালু উত্তোলনের ফলে নানা সংকট দেখা দিয়েছে। প্রশাসনকে বলব, কর্মসংস্থানের দোহাই দেবেন না। দরকার হলে এক বা দুই বছর বালু উত্তোলন বন্ধ রাখেন। শুধু ফিতা দিয়ে মাপ দিয়ে এলেই হবে না। এই মাপ ইজারাদারেরা মানেন না। নদীকে জীবন্ত সত্তা মানলে নদী রক্ষায় কাজ করতে হবে।
আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু সাঈদ, জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. শামশুল ইসলাম, পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) সুনামগঞ্জ কার্যালয়ের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. শমসের আলী। বিষয়ভিত্তিক নির্ধারিত আলোচক ছিলেন সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষিতত্ত্ব ও হাওর কৃষি বিভাগের অধ্যাপক মো. নজরুল ইসলাম, সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যাপক সৈয়দ মহিবুল ইসলাম ও হাওর বাঁচাও আন্দোলন নামে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক বিজন সেন রায়।
মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন সুনামগঞ্জ জেলা পরিষদের সদস্য সেলিনা বেগম, তাহিরপুর উপজেলার টাঙ্গুয়ার হাওরপারের বাসিন্দা আবুল হোসেন, হুসাইন শরীফ, জেলা কৃষক লীগের সদস্যসচিব, বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার কৃষক আবদুল গনি আনসারী, দিরাই উপজেলার বাসিন্দা হাওর বাঁচাও আন্দোলন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক কাজী নুরুল আজিজ চৌধুরী, ছাতক উপজেলার সাধারণ সম্পাদক শাহ আখতারুজ্জামান, জামালগঞ্জ উপজেলা হাওর বাঁচাও আন্দোলন সংগঠনের সভাপতি শাহানা আল আজাদ, নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের জেলা সভাপতি মহিম তালুকদার প্রমুখ।