‘জলদস্যুরা ঘিইরা ফালাইয়া, মোবাইল কাইড়া নিতাছে’

রোকন উদ্দিন
ছবি: সংগৃহীত

‘আমাদের জাহাজ জলদস্যুরা ঘিইরা ফালাইছে। প্রচুর গোলাগুলিও করতাছে। মোবাইল কাইড়া নিতাছে। মনে হয় আর কথা বলতে পারব না। দোয়া করিও’—এ কথা বলতে বলতেই সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এটাই ছিল রোকন উদ্দিনের (৩২) সঙ্গে স্ত্রী তানিয়া আক্তারের শেষ কথা। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে তাঁদের মধ্যে ওই কথা হয়। এর পর থেকে রোকন উদ্দিনের ফোন বন্ধ।

রোকন ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর একজন নাবিক। গতকাল মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময় বেলা দেড়টার দিকে জলদস্যুরা জাহাজটির নিয়ন্ত্রণ নেয়। এটি মোজাম্বিক থেকে দুবাই যাচ্ছিল। এতে ২৩ বাংলাদেশি রয়েছেন।

রোকন উদ্দিনের বাড়ি নেত্রকোনা সদর উপজেলার বাঘড়া গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের কৃষক মিরাজ আলীর ছেলে। তিন ভাই ও দুই বোনের মধ্যে রোকন উদ্দিন চতুর্থ।
মেরিন একাডেমিতে পড়ালেখা শেষে রোকন উদ্দিন ২০১৯ সালে জাহাজে চাকরি নেন। গত বছর মার্চে রোকন উদ্দিন ও তানিয়া আক্তারের বিয়ে হয়। আজ বুধবার দুপুরে তানিয়া আক্তার মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘গতকাল মঙ্গলবার বেলা দেড়টার দিকে স্বামীর সঙ্গে শেষ করা হয়। এর পর থেকে তার ফোন বন্ধ। জানি না সে কেমন অবস্থায় রয়েছে।’

রোকন উদ্দিনের বড় বোন শাহীমিনা আক্তার জানান, এমভি আবদুল্লাহ নামের যে জাহাজ জলদস্যুদের কবলে পড়েছে, সেই জাহাজের থার্ড ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কর্মরত রোকন। তিন দিন আগে তাঁর সঙ্গে কথা হয়েছিল। ফোন করে পরিবারের সবার খোঁজখবর নিয়েছিল। তাঁর ভাইসহ বন্দী সবার জন্য দোয়া চান তিনি, যেন তাঁরা দ্রুত মুক্তি লাভ করতে পারেন।

রোকন উদ্দিনের বড় ভাই সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা তার (রোকন) সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করতে পারতাছি না। প্রতিটি মুহূর্ত এখন আতঙ্কে কাটতাছে। কী হইব, কিছুই বুঝতে পারতাছি না। আল্লাহ জানেন, তারা এখন কেমন আছে। আমার ভাইয়ের কিছু হয়ে গেলে আমার আব্বা-আম্মা বাঁচতো না।’

গতকাল বাংলাদেশ সময় বেলা দেড়টার দিকে জলদস্যুরা বাংলাদেশের পতাকাবাহী জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর নিয়ন্ত্রণ নেয়। চট্টগ্রামের কবির গ্রুপের এই জাহাজ পরিচালনা করছে গ্রুপটির সহযোগী সংস্থা এস আর শিপিং লিমিটেড।