আসনটিতে মোট প্রার্থী আটজন। তবে লড়াই হবে নৌকার প্রার্থী আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত ও লাঙ্গলের প্রার্থী লিয়াকত হোসেনের মধ্যে।
দিন যত ঘনিয়ে আসছে, ততই জটিল হচ্ছে নারায়ণগঞ্জ-৩ (সোনারগাঁ) আসনে ভোটের হিসাব–নিকাশ। একদিকে জাতীয় পার্টি (জাপা) ছেড়ে আওয়ামী লীগে ভিড়ছেন দলটির ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতা–কর্মীরা। অপর দিকে চলছে বিএনপির নির্বাচনবিরোধী প্রচারণা। ভোটাররা বলছেন, বিএনপির লোকজন কেন্দ্রে গেলে ফলাফল নির্ধারণ করে দেবে তাঁদের ভোট।
কয়েক দফায় সোনারগাঁয়ের বিভিন্ন অঞ্চল ঘুরে শতাধিক ভোটারের সঙ্গে কথা হয়েছে এ প্রতিবেদকের। আসনটির অধিকাংশ ভোটারের মধ্যেই ভোট নিয়ে একধরনের অনাগ্রহ দেখা গেছে। কেউ কেউ জানিয়েছেন বিএনপি ও সরকারবিরোধী দলগুলো নির্বাচনে না আসায় ভোট নিয়ে তাঁদের আগ্রহ কম। অনেকে আবার বলেছেন, শেষ পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ পরিবেশ থাকলে ভোটকেন্দ্রে যাবেন তাঁরা।
গত সোমবার সকালে মেঘনাপারের জনপদটিতে গেলে হিমেল হাওয়ায় শর্ষে ফুল আর পাকা ধানের গন্ধ নাকে আসে। বারদী এলাকায় কথা হয় কৃষক ফজর আলীর সঙ্গে। মাঠ থেকে আমন ধান ঘরে তুলতে ব্যস্ত এই কৃষক। স্থানীয় কয়েকজন বিএনপির নেতা–কর্মীকে দেখা গেল ফসলের মাঠে থাকা কৃষকদের মধ্যে নির্বাচনবিরোধী প্রচারপত্র বিলি করতে। এই বিএনপি নেতারা জানালেন দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নিয়মিতই ভোটবিরোধী প্রচার চালাচ্ছেন তাঁরা। মানুষও তাঁদের ডাকে সাড়া দিচ্ছে।
ফজর আলীর কাছে তাঁর নির্বাচনবিষয়ক ভাবনা জানতে এই বৃদ্ধ জানান, ভোট মানেই তাঁর কাছে উৎসব। তবে প্রায় ১০ বছর ধরে তিনি সেই উৎসবের দেখা পাচ্ছেন না। গেল দুইবারের তুলনায় এবার সোনারগাঁয়ের নির্বাচনের মাঠ কিছুটা সরগরম। ভোট দিতে কেন্দ্রে যাবেন কি না, সে বিষয়ে এখনই মনস্থির করেননি।
জামপুর ইউনিয়নের সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক গণি মিয়া, মোগড়াপাড়ার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলী আর সোনারগাঁ পৌরসভার চা–দোকানি ফয়েজ আহাম্মদও ফজর আলীর মতো প্রায় একই কথা জানালেন। তবে আসনটির নৌকা ও লাঙ্গল প্রতীকের সমর্থকেরা মনে করছেন সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগা এসব ভোটারের ভোটই শেষ পর্যন্ত জয়–পরাজয় নির্ধারণে বড় হয়ে উঠবে।
এর আগে গত রোববার জামপুর তালতলা এলাকায় কথা হয় আরও কয়েকজন ভোটারের সঙ্গে। তাঁরা নৌকা প্রতীকের একটি নির্বাচনী সভায় এসেছেন। এবারের ভোটের মাঠে নৌকার পাল্লা ভারী বলে মনে করেন এই দুই ভোটার। তবে তাঁদের শঙ্কা, নৌকার পাল্লা ভারী হলেও প্রচার-প্রচারণার বাইরে থাকা বিএনপি নেতা–কর্মী ও দলটির সমর্থকেরা কেন্দ্রে গেলে ফলাফল কী হবে, তা বোঝা যাচ্ছে না।
কেবল ফলাফল নয়, নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতার প্রশ্নেও বিএনপির ভোটারদেরই গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেন সোনারগাঁয়ের লেখক ও সংস্কৃতিকর্মী শাহেদ কায়েস। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘বিএনপি যদি সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগা ভোটারদের কেন্দ্রে যাওয়া আটকাতে পারে, তবে ভোটের গ্রহণযোগ্যতার প্রশ্নটা আরও শক্তিশালী হবে। আর কেন্দ্রে গেলে তাঁদের ভোট ফলাফল নির্ধারণে অত্যন্ত শক্তিশালী ভূমিকা রাখবে।’
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার দেওয়া তথ্যানুযায়ী এবারের নির্বাচনে সোনারগাঁয়ে মোট আটজন প্রার্থীর মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ হয়েছে। নারী–পুরুষ মিলিয়ে আসনটিতে ভোটার রয়েছেন ৩ লাখ ৪৫ হাজার ৬৩৮ জন। আসনটিতে সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাতের নৌকার সঙ্গে বর্তমান সংসদ সদস্য লিয়াকত হোসেন ওরফে খোকার লাঙ্গল প্রতীকের মধ্যে মূল লড়াই হবে।
নৌকা ও লাঙ্গলের উভয় প্রার্থীই বিএনপির ভোটারদের দুয়ারে ঘুরছে দাবি করে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপির সভাপতি আজহারুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘নির্বাচনে বিএনপির ভোট টানতে নৌকা ও লাঙ্গল উভয় পক্ষই বিএনপি নেতা–কর্মীদের কাছে ধরনা দিচ্ছে। আমরা সাফ জানিয়ে দিয়েছি সমর্থন তো দূরের কথা, ভোটারদের কেন্দ্রে যাওয়া রুখতেই আমরা প্রচার চালাব।’
সোনারগাঁয়ে নির্বাচনের আগে জাতীয় পার্টি ছেড়ে আওয়ামী লীগে যোগ দিচ্ছেন দলটির ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতা–কমীরা। গত কয়েক দিনে সোনারগাঁ পৌরসভা জাতীয় পার্টির একজন সহসভাপতি, একটি ইউনিয়নের সভাপতিসহ অন্তত ৩০ জনের বেশি বর্তমান ও সাবেক ইউপি সদস্যের আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত কয়েক দিনে সোনারগাঁ পৌর জাতীয় পার্টির সহসভাপতি মো. শাহজালাল ও সাদিপুর ইউনিয়ন জাতীয় পার্টির সভাপতি আবুল হাশেম তাঁদের নেতা–কর্মীদের নিয়ে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন। এ ছাড়া মোগরাপাড়া, বৈদ্যের বাজার, বারদী, নোয়াগাঁও ও পিরোজপুর ইউপির সাবেক ও বর্তমান সদস্যদের অনেকেই আনুষ্ঠানিকভাবে দল বদল করে আওয়ামী লীগে এসেছেন।
তবে গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত আসনটিতে শান্তিপূর্ণভাবেই প্রচার–প্রচারণা চলেছে। নৌকা ও লাঙ্গলের সমর্থকেরা একে অন্যের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ করলেও কায়সার হাসনাত ও লিয়াকত হোসেন প্রচারণায় একে অন্যের বিরুদ্ধে কোনো কথা বলছেন না। তাঁরা একে অপরকে চাচা ও ভাতিজা বলে সম্বোধন করছেন।