চরের খেত থেকে পাকা তরমুজ তুলে ট্রাকে ভরছেন কৃষক-শ্রমিকরা। চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের কাজীর তালুক চরে
চরের খেত থেকে পাকা তরমুজ তুলে ট্রাকে ভরছেন কৃষক-শ্রমিকরা। চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের কাজীর তালুক চরে

যে মাঠ থেকে প্রতিদিন বিক্রি হয় ২০ লাখ টাকার তরমুজ

দিনভর মাঠজুড়ে মানুষের হাঁকডাক। কেউ লতা থেকে পাকা তরমুজ ছিঁড়ছেন। কেউ তা জড়ো করে রাখছেন এক জায়গায়। আবার কয়েকজন কিছু শ্রমিক স্তূপ করে রাখা এসব রসাল ফল ট্রাকে তুলতে ব্যস্ত। তরমুজ বোঝাই হলেই তা নিয়ে ট্রাক ছুটছে দূরের কোনো শহরের পথে। ২০ দিন ধরে দৈনিক ১০-১৫টি বড় ট্রাক তরমুজ বোঝাই করে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যাচ্ছে। তরমুজ নিয়ে দিনভর এমন কর্মযজ্ঞের চিত্র চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার কাজীর তালুক চরে।

তরমুজচাষি ও উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্র জানায়, মিরসরাই উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের উপকূলীয় চরে তিন বছর ধরে নোয়াখালীর সুবর্ণচর থেকে একদল কৃষক এসে তরমুজ চাষ করছেন। এ বছরও উপজেলার ইছাখালী ও সাহেরখালী ইউনিয়নের কয়েকটি চরে সুবর্ণচর থেকে আসা অন্তত ১০০ কৃষক বড় পরিসরে তরমুজ চাষ করেছেন। এসব চরের একটি সাহেরখালী ইউনিয়নের কাজীর তালুক চর। কাজীর তালুক গ্রামের পশ্চিম পাশের এ চরেই এবার তরমুজ চাষ হয়েছে সবচেয়ে বেশি। উপযুক্ত মাটি ও অনুকূল আবহাওয়ায় এ চরে এবার তরমুজের ব্যাপক ফলন হয়েছে। চৈত্রের শেষ দিকে ফল তোলার একটু আগে আগে কয়েক দফা বৃষ্টি চাষিদের কিছুটা ক্ষতি করলেও ভালো ফলনে দারুণ খুশি এখানে আসা কৃষকেরা।

কাজীর তালুক চরে তরমুজ চাষের বিষয়ে মিরসরাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রতাপ চন্দ্র রায় প্রথম আলোকে বলেন, এবার এখানে তরমুজের বাম্পার ফলন হয়েছে। ওই চর থেকে এখন প্রতিদিন গড়ে ২০ লাখ টাকার তরমুজ যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন শহরে।

মিরসরাই উপজেলা কৃষি কার্যালয়ের তথ্যমতে, এবার উপজেলায় ১৯০ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১৩০ হেক্টর চাষ হয়েছে কাজীর তালুক চরে।

সম্প্রতি সরেজমিনে কাজীর তালুক চরে গিয়ে দেখা যায়, চারদিকে কৃষকদের তরমুজ তোলার ধুম। মাঠে ট্রাক আর কাভার্ড ভ্যান নামিয়ে তাতে বোঝাই করা হচ্ছে সবুজের ওপর ডোরাকাটা তরমুজ।

সেখানেই দাঁড়িয়ে কথা হলো তরমুজচাষি মো. সুমনের সঙ্গে। নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলার চর জব্বার থেকে আসা এ তরুণ কৃষক বলেন, গরমে তরমুজের বাজার রমরমা। তাই খেত থেকে সবাই একসঙ্গে তরমুজ ওঠাতে ব্যস্ত। স্থানীয় লোকজনের কাছ থেকে প্রতি একর জমি ১২ থেকে ১৪ হাজর টাকায় ইজারা নিয়ে তাঁরা ৬০ জন কৃষক প্রায় ৩০০ একর জমিতে তরমুজের আবাদ করেছেন। এখানকার বালিযুক্ত মাটি তরমুজ চাষের জন্য বেশ ভালো। ১৭ লাখ টাকা খরচ করে তিনি ১৬ একর জমিতে তরমুজ চাষ করেছেন। এখন পর্যন্ত পাঁচ ট্রাক মাল বিক্রি হয়েছে। প্রতিদিন ২৬ জন শ্রমিক খাটছেন তাঁর এখানে। অসময়ের বৃষ্টি একটু ক্ষতি করলেও পুঁজি তুলে কিছু লাভ নিয়ে বাড়ি যেতে পারবেন বলে মনে করেন তিনি।

স্থানীয় বাসিন্দা ও ১১ নম্বর মঘাদিয়া ইউনিয়নের মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মো. নূর হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, কাজীর তালুক চরের সব জমিই তিন ফসলি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরের জন্য এ চর অধিগ্রহণ করেছে সরকার। চরটিতে এখন সোনা ফলছে। প্রতিদিন ট্রাকে ট্রাকে তরমুজ যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন শহরে। এখন ফসল ফললেও কিছুদিন পরেই শিল্পকারখানায় ঢেকে যাবে এ চর।