‘কুষ্টিয়া মডেল থানা ভাঙার বিষয়ে যা বলেছি, তা সঠিক নয়। যা বলেছি, তা অসাবধানতায় ভুল করে বলেছি। এ জন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি।’ আজ সোমবার দুপুরে সদর উপজেলার কবুরহাটে নিজ বাড়িতে সংবাদ সম্মেলন করে কুষ্টিয়া জেলা যুবদলের প্রধান সমন্বয়ক আবদুল মাজেদ এসব কথা বলেন। তিনি সেখানে এক পাতার লিখিত বক্তব্যের পর সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবও দেন।
এর আগের ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে মাজেদকে বলতে শোনা যায়, ‘শহীদদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আজকে এই শেখ হাসিনার সরকার পালাতে বাধ্য হয়েছে। কুষ্টিয়ায় লাস্টের দিন (৫ আগস্ট) যেদিন ক্ষমতা হস্তান্তর হয়, সর্বপ্রথম, যারা এখানে আন্দোলনকারী আছে জিজ্ঞাসা করেন, কুষ্টিয়া থানা আমি মাজেদ নেতৃত্ব দিয়ে ভাঙিছি। এমন একটা দিন নাই, আমার তিনটা ছেলে, আমার পরিবার, আপনাদেরই চাচি, সে নিজেও এই আন্দোলন-সংগ্রামে যুক্ত হয়েছে। আপনারা আপনাদের ছেলেপেলেদের মারেও ঠেকাতে পারেন নাই। রক্তে যখন টান দেয়, তখন জনগণের স্রোত ঠেকানো যায় না। তাই জনগণের স্রোতে হাসিনা চলে গেছে।’
এই বক্তব্যের পর জেলাজুড়ে সমালোচনার সৃষ্টি হয়। প্রথম আলো অনলাইনসহ কয়েকটি গণমাধ্যমে সংবাদটি প্রকাশিত হয়।
আজ লিখিত বক্তব্যে মাজেদ বলেন, খাজানগর দেশের বৃহৎ চালের মোকাম। খাজানগরসহ আশপাশের এলাকায় পাঁচ শতাধিক চালকল রয়েছে। এসব চালকলের মালিকদের হুমকি-ধমকি দিয়ে চাঁদা আদায় করার চেষ্টা চলছে, এমন অভিযোগ ওঠে। এর পরিপ্রেক্ষিতে চালকলমালিক ও এলাকাবাসী একত্র হয়ে সচেতনতার জন্য গত ৭ আগস্ট বিকেলে উপজেলার খাজানগর ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে একটি সমাবেশ হয়। সেখানে তিনি বক্তব্য দেন।
আবদুল মাজেদ বলেন, ‘সমাবেশে অনেক বিষয় তুলে ধরে ১০ থেকে ১১ মিনিটের বক্তব্য দিয়েছি। ওই বক্তৃতায় ভুলবশত থানা ভাঙার বিষয়ে যা বলেছি, তা সঠিক নয়। থানা ভাঙার সাথে আমার কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না। বরং বক্তৃতার পুরো অংশটি প্রচার না করে খণ্ডিত বক্তব্য দিয়ে আমাকে হেয় করা হচ্ছে। থানায় হামলার দিনের ভিডিও ফুটেজ পর্যালোচনা করলে প্রকৃত সত্যতা বের হয়ে আসবে। যারা মডেল থানায় হামলা চালিয়ে ভাঙচুর, লুটপাট ও আগুন দিয়ে থানা পুড়িয়েছিল, তা অধিকতর তদন্ত করে এতে জড়িত সকলের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হোক।’
সংবাদ সম্মেলনে জেলা বিএনপির কোষাধ্যক্ষ জয়নাল আবেদীন প্রধানসহ স্থানীয় যুবদল নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে যুবদল নেতা আবদুল মাজেদের বক্তব্যের দায়ভার সংগঠন বহন করবে না বলে জানিয়েছেন জেলা যুবদলের সভাপতি আল আমিন কানাই ও সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দিন। গতকাল রোববার রাতে তাঁরা সংবাদ সম্মেলন করে এ ঘোষণা দেন।
জেলা যুবদলের সভাপতি আল আমিন কানাই প্রথম আলোকে বলেন, ‘তিনি (আবদুল মাজেদ) যুবদলের সমন্বয়ক টিমের প্রধান। অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন, তাঁর এ বক্তব্যের সঙ্গে আমাদের সম্পৃক্ততা কী? আমি পরিষ্কার করে বলতে চাই, তাঁর বক্তব্যর সঙ্গে জেলা যুবদলের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। সেটা তাঁর একান্তই ব্যক্তিগত মতামত। এর দায়ভার নিজেকে বহন করতে হবে। কারও ব্যক্তিগত দায়ভার সংগঠন বহন করবে না।’
আল আমিন কানাই আরও বলেন, ‘আমি ও সাধারণ সম্পাদক দুজনেই অসুস্থ ছিলাম। তাই আন্দোলন-সংগ্রাম এগিয়ে নেওয়ার জন্য প্রতিটি থানা ও পৌর কমিটির সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য কেন্দ্র থেকে তিন সদস্যের একটি সমন্বয়ক টিম গঠন করা হয়েছিল। কিন্তু জেলা যুবদলের কমিটি বহাল রয়েছে। কেন্দ্রকে আমরা সমন্বয়ক কমিটি নিয়ে সমস্যার সমাধান করার জন্য জানিয়েছিলাম। তাঁরা খুব দ্রুত বিষয়টি সমাধান করে দেবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন।’