মূল ক্যাম্পাসে ফেরা ও বৈষম্য দূর করার দাবিতে প্রশাসনিক ভবনে তালা দিয়েছেন চারুকলার শিক্ষার্থীরা। আজ বিকেলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটে
মূল ক্যাম্পাসে ফেরা ও বৈষম্য দূর করার দাবিতে প্রশাসনিক ভবনে তালা দিয়েছেন চারুকলার শিক্ষার্থীরা। আজ বিকেলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটে

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

ক্যাম্পাস স্থানান্তরের দাবিতে আবার আন্দোলনে চারুকলার শিক্ষার্থীরা

মূল ক্যাম্পাসে ফেরা ও বৈষম্য দূর করার দাবিতে আবার আন্দোলনে নেমেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা। এসব দাবিতে গত দুই বছরে এই নিয়ে তৃতীয় দফায় আন্দোলন করছেন এই ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা।

আজ মঙ্গলবার বেলা আড়াইটায় ইনস্টিটিউটের প্রশাসনিক ভবনে তালা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ইনস্টিটিউটের প্রশাসনিক কার্যক্রম বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছেন তাঁরা। তবে সেশনজট কমাতে ক্লাস ও পরীক্ষায় অংশ নেবেন।

জানতে চাইলে ইনস্টিটিউটের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী খন্দকার মাসরুল আল ফাহিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আগে আন্দোলন করা শিক্ষার্থীদের নানানভাবে হয়রানি করা হচ্ছে। পরীক্ষায় নম্বর কম দেওয়া হচ্ছে। কাউকে কাউকে ফেল করিয়ে দেওয়া হচ্ছে। পরীক্ষার এক বছর পরে ফলাফল দিচ্ছে। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের প্রতি নানা অসংগতি ও বৈষম্য করছেন শিক্ষকেরা। এসবের প্রতিবাদেই আমরা তালা দিয়েছি।’

খন্দকার মাসরুল আল ফাহিম বলেন, তাঁরা আর চারুকলায় কোনো ধরনের বৈষম্য চান না। স্বৈরচারের দোসররা এই ইনস্টিটিউটে একনায়কতন্ত্র কায়েম করেছে। মূল ক্যাম্পাসে স্থানান্তর না হওয়া পর্যন্ত এই বৈষম্য দূর হবে না।

চারুকলা ইনস্টিটিউটের পরিচালক উত্তম কুমার বড়ুয়া প্রথম আলোকে বলেন, যাঁরা ফেল করেছেন এবং ফলাফল খারাপ হয়েছে, তাঁরা তালা দিয়েছেন। তিনি বিষয়টি প্রক্টরকে জানিয়েছেন। প্রক্টর ব্যবস্থা নেবেন।

বারবার আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা

বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের যাত্রা শুরু হয় ১৯৭০ সালে। বিভাগের প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি ছিলেন শিল্পী রশিদ চৌধুরী। ২০১০ সালের ২ আগস্ট নগরের সরকারি চারুকলা কলেজের সঙ্গে এক হয়ে গঠিত হয় চারুকলা ইনস্টিটিউট। এই ইনস্টিটিউটের অবস্থান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে নগরের মেহেদীবাগের বাদশা মিয়া সড়কে। বর্তমানে ইনস্টিটিউটে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৪০০।

শ্রেণিকক্ষের ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ার পরিপ্রেক্ষিতে ১১ দাবিতে ২০২২ সালের নভেম্বরে ক্লাস বর্জন করে বিক্ষোভ শুরু করেন ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা। এর পর থেকে তাঁদের ক্লাস বর্জন অব্যাহত থাকে। পাশাপাশি তাঁরা বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেন। একপর্যায়ে ইনস্টিটিউট নগর থেকে মূল ক্যাম্পাসে ফিরিয়ে নিতে তাঁরা এক দফা দাবি দেন। প্রশাসন দাবি না মানায় ১৬ নভেম্বর ইনস্টিটিউটের মূল ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন শিক্ষার্থীরা।

পরে কর্তৃপক্ষকে সাত দিনের সময় বেঁধে দিয়ে শর্ত সাপেক্ষে ২৩ জানুয়ারি ক্লাসে ফিরেছিলেন শিক্ষার্থীরা। কিন্তু দাবি আদায় না হওয়ায় ৩১ জানুয়ারি থেকে তাঁরা আবারও অবরোধ কর্মসূচি শুরু করেন। একই দিন শিক্ষার্থীদের একটি পক্ষ ক্লাসে ফেরার দাবি জানায়। এ অবস্থায় চলতি বছর ১ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাতে চারুকলায় ইনস্টিটিউটের হোস্টেলে তল্লাশি চালায় পুলিশ ও প্রক্টরিয়াল বডি।

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যে গত বছর ২ ফেব্রুয়ারি চারুকলায় সশরীর শ্রেণি কার্যক্রম এক মাসের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের চারুকলা ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়। ভবন সংস্কারের কথা বলে কর্তৃপক্ষ এমন সিদ্ধান্ত নেয়। পরে শিক্ষার্থীরা মূল ক্যাম্পাসেই বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করতে থাকে। তবে ৯ ফেব্রুয়ারি শিক্ষার্থীদের এই কর্মসূচিতে হামলা চালায় নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা।

এরপরও শিক্ষার্থীরা মূল ক্যাম্পাসে ফেরার দাবিতে আন্দোলন করতে থাকেন৷ তবে একপর্যায়ে সেশনজট কমাতে গত বছর ৩ মে ক্লাসে ফেরার সিদ্ধান্ত নেন শিক্ষার্থীরা। আজ থেকে তাঁরা আবার আন্দোলন শুরু করেছেন।