আজ বাদে কাল সারা দেশে উদ্যাপিত হবে পবিত্র ঈদুল ফিতর। পরিবার–পরিজনের সঙ্গে ঈদ উদ্যাপন করতে কর্মজীবীসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষ ছুটছেন নাড়ির টানে। একযোগে এত মানুষ ছুটে চলায় গত দুই দিন ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যানবাহনের চাপ বেড়ে যায় কয়েক গুণ। এতে সৃষ্টি হয় দীর্ঘ যানজটের। দুই দিনের চরম ভোগান্তির পর আজ বুধবার সকাল থেকে গাজীপুরের দুই মহাসড়ক একেবারেই ফাঁকা। স্বল্প কিছু যানবাহন চলাচল করতে দেখা গেছে স্বাভাবিক গতিতে। পর্যাপ্ত যাত্রী না পাওয়ায় দেরি করে ছাড়া হচ্ছে বাস।
তবে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা ত্রিমোড় ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের চান্দনা চৌরাস্তা এলাকার বাসস্ট্যান্ডে ঘরমুখী কিছু মানুষের ভিড় দেখা গেছে। বাসের চালক ও সহযোগীরা জানান, অল্প যাত্রীতে বাস ভরছে না। ফলে আরও যাত্রীর জন্য অপেক্ষা করছেন তাঁরা।
চন্দ্রা এলাকার শ্যামলী পরিবহনের কাউন্টারের সুপারভাইজার আসলাম হোসেন বলেন, বেশ কিছু বাস দাঁড়িয়ে আছে কিন্তু যাত্রী নেই। ১০-১২ জন যাত্রী নিয়ে রওনা দিলে তেলের টাকাও উঠবে না। তাই বাসগুলো দাঁড়িয়ে আছে। আজ ঈদ হতে পারে ভেবে বেশির ভাগ মানুষ যে যেভাবে পেরেছেন চলে গেছেন।
চন্দ্রার বাসস্ট্যান্ডের ন্যাশনাল ট্রাভেলসের সামনে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে দাঁড়িয়ে ছিলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার মানদহ গ্রামের বাসিন্দা এরশাদ হোসেন। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যানজটের কথা চিন্তা করে বাড়িতে যাওয়ার ইচ্ছা ছিল না। গত রাতে শুনলাম রাস্তা খালি হয়ে গেছে, তাই সকাল সাতটায় চন্দ্রায় চলে আসি। রাস্তা খালি ঠিক আছে কিন্তু দুই ঘণ্টা হয়ে গেছে এখনো গাড়ি পাচ্ছি না। এখন ভাবতাছি ট্রাকে উঠে বগুড়া গিয়ে তারপর আরেক বাসে উঠব।’
পাবনার পীরগঞ্জ উপজেলার পাঁচগাছি গ্রামের খায়রুল ইসলাম স্ত্রী কবিতা বেগম ও এক মেয়েকে নিয়ে চন্দ্রা এলাকার বাস কাউন্টারে বসে ছিলেন প্রায় আড়াই ঘণ্টা। অবশেষে তিনি ৯টায় একটি বাস পেয়েছেন। বাসে ওঠার সময় তিনি বলেন, ‘দেরি করে হলেও বাসে উঠতে পেরেছি, এটাই শান্তি। রাস্তায় যানজট নেই, তাই আজ আরামে এবং তাড়াতাড়ি চলে যেতে পারব।’
হাইওয়ে পুলিশ ও ট্রাফিক পুলিশ জানায়, ঈদ উপলক্ষে কর্মস্থল থেকে গত বৃহস্পতিবার শুরু হয় মানুষের বাড়িতে যাওয়া। এ সময় ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যানবাহনের সংখ্যা বেড়ে যায় সাধারণ সময়ের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি। যানবাহনের চাপে গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা, সফিপুর, মৌচাক এবং নবীনগর সড়কের জিরানী বাজার পর্যন্ত ছাড়িয়ে যায় যানজট।
একই অবস্থা ছিল ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে। এই সড়কের গাজীপুর মহানগরীর চান্দনা চৌরাস্তা, ভোগড়া, ছয়দানা, বোর্ডবাজার পর্যন্ত থেমে থেমে যানজটের সৃষ্টি হয়। বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ডে অতিরিক্ত যাত্রীর ভিড়ে সৃষ্টি হয় জনজটের। বিশেষ করে গত দুই দিন যানজট আর জনজট তীব্র রূপ নেয়।
গতকাল মঙ্গলবার বিকেল থেকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে থাকে। এদিন সন্ধ্যার পর থেকেই দুই মহাসড়কে কোনো প্রকার ভোগান্তি ছাড়াই স্বস্তিতে ঈদযাত্রা করছেন যাত্রীরা। তবে গণপরিবহনের সংখ্যা কম থাকায় অনেকে ট্রাক-পিকআপে গন্তব্যে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। আজ সকাল থেকে সড়ক অনেকটাই ফাঁকা। দূরপাল্লার স্বল্প কিছু যানবাহন এবং লোকাল পরিবহন চলাচল করছে।
নাওজোড় হাইওয়ে পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. শাহাদাত হোসেন জানান, কয়েক দিন ধরে পুলিশ সদস্যদের ঘুম নেই। দিন আর রাত রাস্তাতেই কেটেছে। ঘরমুখী মানুষ অন্যান্য বছরের চেয়ে এবার অনেক স্বস্তিতে যেতে পেরেছেন। গতকাল সন্ধ্যা থেকে সড়ক–মহাসড়ক ফাঁকা হতে শুরু করেছে। আজ একেবারেই ফাঁকা। তারপরও সড়কের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।