সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলা আওয়ামী লীগের অন্তঃকোন্দলকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের সংঘর্ষ হয়েছে। এতে উভয় পক্ষের অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। শনিবার বিকেলে উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে।
বিবদমান দুটি পক্ষ হচ্ছে স্থানীয় সংসদ সদস্য সিরাজগঞ্জ-৫ (বেলকুচি-চৌহালী) আবদুল মোমিন ও বেলকুচির পৌর মেয়র সাজ্জাদুল হক।
সংঘর্ষে আহত ব্যক্তিরা হলেন সংসদ সদস্য পক্ষের আওয়ামী লীগ নেতা আলমাসুর রহমান, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পাভেল শেখ, উপজেলা যুব মহিলা লীগের সভাপতি সুমা খাতুন, সাধারণ সম্পাদক শিরিন আক্তার, অর্থ সম্পাদক আন্না খাতুন, সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান সুলতানা রাজিয়া, সাবেক শ্রমিক লীগ নেতা মোতালেব সরকার। পৌর মেয়র পক্ষের সাবেক ছাত্রলীগ নেতা শিপন আহাম্মেদ, যুবলীগ নেতা রিপন বাবু, মনসুর আহাম্মেদ, সাব্বির হোসেন, নাবিল মণ্ডল, আবদুস সালাম, রতন, ওমর ফারুকসহ অন্যরা।
আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে বেলকুচি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও সিরাজগঞ্জ ২৫০ শয্যা বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনার সংবাদ সংগ্রহের সময় সংবাদকর্মী উজ্জ্বল অধিকারীকে মারধর ও আবদুর রাজ্জাককে লাঞ্ছিত করেন সংসদ সদস্য পক্ষের লোকজন।
আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা–কর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত ৩০ এপ্রিল বেলকুচি পৌর এলাকার সিরাজগঞ্জ-এনায়েতপুর আঞ্চলিক সড়কের ওপরে ও দুই পাশে স্থানীয় সংসদ সদস্যের ব্যানার-তোরণ সরাতে নোটিশ দেন পৌর মেয়র ও উপজেলা যুবলীগের সাবেক আহ্বায়ক সাজ্জাদুল হক।
ওই নোটিশের প্রতিবাদে শনিবার বিকেলে পৌর ছাত্রলীগের উদ্যোগে আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে প্রতিবাদ সভার আয়োজন করা হয়। সভার বিষয়টি জানতে পেরে পৌর মেয়র সাজ্জাদুল হক তাঁর সমর্থিত লোকজন নিয়ে সেই প্রতিবাদ সভার স্থানে উপস্থিত হলে উভয় পক্ষের নেতা–কর্মীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এতে উভয় পক্ষের অন্তত ২০ জন আহত হন।
খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সংঘর্ষের পর এ হামলার প্রতিবাদে সংসদ সদস্যের সমর্থকেরা সড়কে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন।
বেলকুচি পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি হাকিম মণ্ডল অভিযোগ করে বলেন, মেয়র সাজ্জাদুল হকের নেতৃত্বে প্রথম হামলার ঘটনা ঘটেছে। হামলায় সংসদ সদস্যদের ব্যক্তিগত সহকারী সেলিম রেজাসহ কয়েকজন নেতা–কর্মী আহত হয়েছেন। পরিকল্পিতভাবে এ হামলা মেয়র ঘটিয়েছেন।
বেলকুচি পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি আক্তার হামিদ বলেন, ছাত্রলীগ শান্তিপূর্ণ সামাবেশ শুরুর আগেই মেয়র সাজ্জাদুল হক ও তাঁর সমর্থকেরা আওয়ামী লীগ কর্যালয়ে এসে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা–কর্মীদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। এটি এক পর্যায়ে সংঘর্ষে রূপ নেয়। তাতে বেশ কিছু নেতা–কর্মী আহত হন।
এ বিষয়ে বেলকুচি পৌরসভার মেয়র সাজ্জাদুল হক বলেন, ‘বেলা তিনটার দিকে উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে দলীয় নেতা–কর্মী নিয়ে চা চক্র ও রাজনৈতিক আলোচনা করছিলাম। এ সময় সংসদ সদস্য আবদুল মোমিনের অনুসারীরা পরিকল্পিতভাবে সংসদ সদস্যের ব্যক্তিগত সহকারী (পিএস) সেলিমের নেতৃত্বে বেলকুচি থানার ওসির সহযোগিতায় আমাদের নেতা–কর্মীর ওপর সন্ত্রাসী হামলা চালায়। এতে কয়েকজন নেতা–কর্মী আহত হয়েছেন।’
এ বিষয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য আবদুল মোমিন মণ্ডল বলেন, ‘উপজেলা নেতা–কর্মীরা ওই তোরণ নির্মাণ করলেও নোটিশ দেওয়া হয় আমাকে। এ নিয়ে শনিবার বিকেলে তারা প্রতিবাদ সমাবেশ করতে দলীয় অফিসে জমায়েত করার চেষ্টা করে। মেয়র ও তার লোকজন তাদের বেধড়ক মারপিট করে। রেজার নেতৃত্বে মহিলা এক নেত্রীকে শারীরিক হেনস্তা করা হয়। যেমনটি মোটেই কাম্য নয়।’
বেলকুচি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসলাম হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে সংঘর্ষের ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে। এলাকায় পরিস্থিতি এখন শান্ত রয়েছে।