সিলেট-১ (নগর-সদর) আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। এখানে দলের তিনবারের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন (সিরাজ) স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন। এরপর মোমেন-মিসবাহের হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিল। তবে ‘আচমকা’ মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে আলোচনা থামিয়ে দেন মিসবাহ নিজেই। এখন মোমেন অনেকটা খালি মাঠেই গোল দেবেন বলে মনে করছেন ভোটাররা।
আসনটিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছাড়াও ইসলামী ঐক্যজোটের ফয়জুল হক (মিনার), ন্যাশনাল পিপলস পার্টির ইউসুফ আহমদ (আম), বাংলাদেশ কংগ্রেসের মোহাম্মদ সোহেল আহমদ চৌধুরী (ডাব) ও বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের আবদুল বাছিত (ছড়ি) প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এঁদের মধ্যে নৌকার প্রার্থী ছাড়া অন্যদের খুব একটা প্রচারণা আজ পর্যন্ত দেখা যায়নি।
আওয়ামী লীগের স্থানীয় একাধিক নেতা জানান, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট-১ আসনে দলীয় মনোনয়নে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য হন এ কে আব্দুল মোমেন। পরে তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। তবে দলের মুষ্টিমেয় কিছু নেতা ছাড়া অনেকের সঙ্গেই মোমেনের ভেতরে-ভেতরে ‘দূরত্ব’ আছে। সূত্র জানায়, এবারের নির্বাচনে মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ায় দলের ভেতরে-বাইরে অনেকেই নড়েচড়ে বসেন। প্রকাশ্যে না এলেও তখন অনেক নেতা মানসিকভাবে মোমেনের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে ‘উচিত শিক্ষা’ দেওয়ার পরিকল্পনাও আঁটেন। তবে হঠাৎ মিসবাহ মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিয়ে মোমেনবিরোধীদের পরিকল্পনায় ‘জল ঢেলে’ দেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে মহানগর আওয়ামী লীগের এক নেতা প্রথম আলোকে বলেন, গত নির্বাচনে অংশ নেওয়ার আগে স্থানীয়ভাবে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন না আবদুল মোমেন। তিনি মনোনয়ন পাওয়ায় তখন দলের অনেকেই ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন। এরপর তিনি মন্ত্রী হলে প্রকাশ্যে কেউ বিরোধে জড়ালেও অনেকেই ভেতরে-ভেতরে তাঁর বিরোধী হন। এবার মিসবাহ প্রার্থী হওয়ায় অনেকেই আড়ালে মোমেনের বিরুদ্ধে তৎপর ছিলেন। কিন্তু পরে মিসবাহ সমঝোতায় চলে যান।
তবে কোনো ধরনের সমঝোতায় মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেননি বলে দাবি করেছেন মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘সাড়ে ৪ দশক ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করছি। কখনোই নৌকার বিপক্ষে যাইনি। যদিও নেত্রী এবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার বিষয়টি উন্মুক্ত করে দিয়েছেন, এরপরও মনের খচখচানি দূর হচ্ছিল না। নৌকার বিপক্ষে প্রচারণা চালাতে হবে, বিষয়টি আমাকে পীড়া দিচ্ছিল। এমন মনোভাব থেকেই মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নৌকার পক্ষে প্রচারণায় নেমেছি।’
সিলেটের একাধিক রাজনৈতিক বিশ্লেষকের ভাষ্য, আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবার শুরু থেকেই প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচনের কথা বলে আসছেন। তবে সিলেটে আওয়ামী লীগের পাশাপাশি আরও চারটি দলের প্রার্থী থাকলেও তাঁদের সেই অর্থে কোনো তৎপরতা নেই। ওই প্রার্থীরা তুলনামূলকভাবে ভোটারদের কাছে অনেক অপরিচিত। ফলে অনেকটা একতরফা নির্বাচন হবে বলে মনে হচ্ছে। এতে মোমেনের জয়ের পাল্লাই ভারী।
এদিকে মাঠে শক্তিশালী প্রার্থী না থাকলেও আব্দুল মোমেন ঠিকই জোরেশোরে প্রচারণা শুরু করেছেন। তিনিসহ তাঁর কর্মী-সমর্থকেরা পৃথকভাবে আজ এলাকার বিভিন্ন স্থানে নৌকার পক্ষে গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ করেছেন। বেলা ১১টায় নগরের ১ নম্বর ওয়ার্ডের শাহজালাল মাজার-সংলগ্ন এলাকায় গণসংযোগ করেন নৌকার প্রার্থী আব্দুল মোমেন।
গণসংযোগকালে মোমেন বলেন, নৌকা বাংলার জনগণের আস্থা ও উন্নয়নের প্রতীক। আগামী ৭ জানুয়ারি নির্বাচনে দলে দলে নৌকায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে জয়ী করতে হবে। বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থাকে সমুন্নত রেখে উন্নয়ন অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে নৌকার বিকল্প নেই।
গণসংযোগের সময় মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ফয়জুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক মো. জাকির হোসেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আজাদুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আরমান আহমদ, জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সৈয়দ এপতার হোসেন, মহানগর যুবলীগের সভাপতি আলম খান, জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সালমা সুলতানা, নগরের ১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার সাদাত প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।