মাগুরা–১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সাকিব আল হাসানের বাবাকে কেন হত্যা মামলায় আসামি করা হয়নি—এই প্রশ্ন তুলেছেন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন। আজ বুধবার বেলা ১১টার দিকে মাগুরা সরকারি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় করার সময় এই প্রশ্ন করেন তিনি।
নাছির উদ্দিন বলেন, ‘৪ আগস্ট মাগুরা শহরে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের নির্বিচার চালানো গুলিতে ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান (রাব্বী) ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফরহাদ হোসেন নিহত হন। আমরা গণমাধ্যমে দেখেছি এবং ওই আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও সুশীল সমাজের লোকদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছি, ওই দিন ঘটনার নেতৃত্ব দেওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন সাকিব আল হাসানের বাবা (খন্দকার মশরুর রেজা)। কিন্তু ওই ঘটনায় দায়ের করা দুটি হত্যা মামলার একটিতেও সাকিব আল হাসানের বাবাকে আসামি করা হয়নি। এতে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল খুবই উদ্বেগ প্রকাশ করছে।’
অনুষ্ঠানে নাছির উদ্দিন আরও বলেন, গত ১৫ বছরে মাগুরায় এমপি সাইফুজ্জামান শিখর ও বীরেন শিকদার বিএনপির নেতা–কর্মীদের ওপর অমানুষিক নির্যাতন করেছেন। জানুয়ারির ডামি নির্বাচনে সাকিব আল হাসান এমপি হওয়ার পর তাঁর বাবা সেই ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছেন। বিশেষ করে ৪ আগস্ট তাঁর বাবার নেতৃত্বে ছাত্র–জনতার ওপর হামলা করা হয়েছে।
গণমাধ্যমকর্মীদের উদ্দেশে নাছির উদ্দিন বলেন, মাগুরার ঘটনায় হওয়া দুটি হত্যা মামলায় এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। এটা রহস্যজনক।
যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের যৌথ কর্মী সভায় অংশ নিতে গতকাল মঙ্গলবার মাগুরায় আসেন কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন। আজ সকালে তিনি আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত জেলা ছাত্রদলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসানের কবর জিয়ারত করেন। এরপর সরকারি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজসহ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক। এ সময় শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘ছাত্রলীগের মতো জোর করে মিছিলে নেওয়া, শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা, মারধর, শিক্ষকদের ওপর নির্যাতনের ঘটনায় যুক্ত হবে না ছাত্রদল।’
৪ আগস্ট আন্দোলনের সময় মাগুরা শহরের ঢাকা রোড ও পারনান্দুয়ালী গ্রামের মাঝামাঝি এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন ছাত্রদলের জেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফরহাদ হোসেন। এ দুটি ঘটনায় মাগুরা সদর থানায় দুটি হত্যা মামলা হয়েছে। মেহেদী হাসান নিহত হওয়ার ঘটনায় ১৪ আগস্ট তাঁর ভাই ইউনুস আলী বাদী হয়ে মামলা করেন। ওই মামলায় ১৩ জন আসামির নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া অজ্ঞাতনামা আসামি হিসেবে আছেন ১৫০ থেকে ২০০ জন। মামলায় ১ ও ২ নম্বর আসামি করা হয়েছে সাবেক সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান শিখর ও বীরেন শিকদারকে।
অন্যদিকে ফরহাদ হোসেন নিহত হওয়ার ঘটনায় তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা করা হয়নি। ২১ আগস্ট মাগুরা সদর উপজেলার উত্তর বীরপুর গ্রামের বাসিন্দা জামাল হোসেন বাদী হয়ে হত্যা মামলা করেন। ওই মামলায় সাইফুজ্জামান শিখর ও বীরেন সিকদারকে ১ ও ২ নম্বর আসামি করা হয়েছে। এ দুজনসহ মোট আসামি ৬৯ জন। অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে আরও ১০০ থেকে ১৫০ জনকে।