নেত্রকোনায় পুলিশ ও বিএনপির সংঘর্ষের ঘটনায় আটক ১২

নেত্রকোনায় পুলিশ ও বিএনপির নেতা-কর্মীরদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে শহরের ছোটবাজার এলাকায় বিএনপির দলীয় কার্যালয়ের সামনে
ছবি: প্রথম আলো

নেত্রকোনায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের ১২ নেতা-কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে শহরের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাঁদের আটক করা হয়। নেত্রকোনা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খন্দকার শাকের আহমেদ প্রথম আলোকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

আটক ব্যক্তিরা হলেন মৌগাতি ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান শেখ; মেদনী ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আবদুল খালেক; বিএনপি নেতা আবু সাঈদ খান; জেলা ছাত্রদলের সহসভাপতি রকি মিয়া; ছাত্রদলের কর্মী মো. রাকিব, মো. মোকারম হোসেন, মো. নাঈম, মো. শারিফ, বাকী হোসেন, জনি মিয়া, মো. রকি মিয়া ও মো. দিপু মিয়া।

প্রত্যক্ষদর্শী, পুলিশ ও বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিএনপির ৪৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আজ সকাল ১০টার দিকে জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে শহরের ছোটবাজার এলাকায় দলীয় কার্যালয়ে আসছিলেন। এ সময় শহরের প্রধান সড়কে সহস্রাধিক নেতা-কর্মী জড়ো হওয়ায় যানজটের সৃষ্টি হয়। পুলিশ নেতা-কর্মীদের রাস্তা থেকে সরে যেতে বলে কিন্তু উত্তেজিত নেতা-কর্মীরা পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে মিছিল করতে থাকেন। পরে পুলিশ বাঁশি বাজিয়ে তাঁদের ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিপেটা করলে বিএনপির নেতা-কর্মীরা পুলিশের দিকে ইটপাটকেল ছুড়তে শুরু করেন। এতে পুলিশ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মোহাম্মদ ফকরুজ্জামান জুয়েল, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মুরশেদা খাতুন, নেত্রকোনা মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. সোহেল রানাসহ অন্তত ১৫ পুলিশ সদস্য আহত হন।

এ সময় পুলিশ চার রাউন্ড কাঁদানে গ্যাসের শেল ও রাবার বুলেট ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এতে আহত হন বিএনপি নেতা আবদুল খালেক; পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা; জেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক লতিফুল হক চৌধুরী; নেত্রকোনা সরকারি কলেজ শাখার ছাত্রদলের আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান; পৌর ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মশিউর রহমান; যুবদল নেতা ফারুক হোসেন; ছাত্রদল নেতা হৃদয় পাঠান, অন্তর পাঠানসহ বিএনপির ২০ নেতা-কর্মী। আহত ব্যক্তিরা নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতালসহ ময়মনসিংহের বিভিন্ন ক্লিনিকে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

নেত্রকোনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক এস এম মনিরুজ্জামান মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি চলাকালে পুলিশ এসে লাঠিপেটা করে আমাদের ওপর হামলা চালায়। পরে রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে। এতে আমাদের ২০ নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। এখন পুলিশ নেতা-কর্মীদের ধরপাকড় চালাচ্ছে।’

পুলিশের গ্রেপ্তার এড়াতে আহত কয়েকজনকে ময়মনসিংহের একটি সেবাকেন্দ্রে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে বলে জানান মনিরুজ্জামান। সেখানে কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স আহত ব্যক্তিদের দেখতে এসেছেন। সৈয়দ এমরান সালেহ প্রথম আলোকে মুঠোফোনে বলেন, ‘নেত্রকোনায় বিএনপির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে সরকার রাষ্ট্রযন্ত্র পুলিশকে ব্যবহার করে আমাদের নেতা-কর্মীদের আহত করেছে। এ ঘটনায় আমরা মর্মাহত, উদ্বিগ্ন ও ক্ষুব্ধ। সরকারের গুম, হামলা-মামলা করে আর শেষ রক্ষা হবে না। জনগণ এখন জেগে উঠেছে।’

নেত্রকোনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফকরুজ্জামান জুয়েল বলেন, বিএনপির দলীয় কার্যালয়টি শহরের প্রধান সড়কের পাশে। সেখানে সহস্রাধিক নেতা-কর্মী রাস্তা বন্ধ করে সমাবেশ করছিলেন। পুলিশ তাঁদের রাস্তা বন্ধ না করে রাস্তার পাশে কর্মসূচি পালন করতে বলায় বিএনপির নেতা-কর্মীরা পুলিশের ওপর হামলা করে। এতে তিনিসহ ১৫ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করবে। এ ঘটনায় জড়িত অভিযোগে ১২ জনকে আটক করা হয়েছে।