বগুড়া-৪ আসনের উপনির্বাচনের আগের দিন ফেসবুক লাইভে এসে আলোচিত স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল হোসেন ওরফে হিরো আলমকে গাড়ি উপহার দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন হবিগঞ্জের এক শিক্ষক। প্রথম দিকে বিষয়টি গুরুত্ব দেননি হিরো আলম। যোগাযোগও করেননি। কয়েক দিন পর আবার আক্ষেপ প্রকাশ করে ভিডিও দেন এম মখলিছুর রহমান নামের ওই শিক্ষক। এরপর যোগাযোগ করেন হিরো আলম। অবশেষে সেই গাড়ি আনতে কাল মঙ্গলবার হবিগঞ্জ যাচ্ছেন তিনি।
হিরো আলম ১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনের উপনির্বাচনে একতারা প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে মাত্র ৮৩৪ ভোটে পরাজিত হয়ে দেশব্যাপী আলোচনার জন্ম দিয়েছেন। রাজনীতির মাঠেও তাঁকে নিয়ে চলছে আলোচনা।
এম মখলিছুর রহমান হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার নরপতি গ্রামের হাজী আবদুল জব্বার জি এল একাডেমি অ্যান্ড হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক। উপনির্বাচনের এক দিন আগে ৩১ জানুয়ারি ফেসবুক লাইভে এসে তিনি হিরো আলমকে নিজের ব্যবহৃত নোহা মাইক্রোবাসটি উপহার দেওয়ার ঘোষণা দেন।
ভিডিওতে মখলিছুর রহমান বলেন, ‘হিরো আলম একসময় জিরো ছিলেন। জিরো থেকে তিনি হিরো হয়েছেন। হিরো আলম এখন সোনার টুকরা। দুই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। বগুড়ার মানুষ জানের চাইতে তাঁকে বেশি ভালোবাসেন। তিনি বগুড়ার মানুষের মন জয় করে নিয়েছেন। নির্বাচনে ফল যেটাই আসুক না কেন, সিলেট বিভাগের পক্ষ থেকে গাড়িটি তাঁকে উপহার দিতে চাই।’
আজ সোমবার মখলিছুর রহমানের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে চাননি। তাঁর সহকারী পরিচয় দিয়ে একজন বলেন, নোহা মডেলের মাইক্রোবাসটি মখলিছুর রহমান সাড়ে ছয় লাখ টাকায় কিনেছিলেন। সিলেটবাসীর পক্ষ থেকে হিরো আলমকে তিনি গাড়িটি উপহার দেওয়ার ওয়াদা করেছেন। নির্বাচনে হারলেও সিলেটবাসীকে কলঙ্কিত করবেন না। ওয়াদা রাখবেন। হিরো আলম মঙ্গলবার মাইক্রোবাস নিতে আসছেন।
হিরো আলম আজ প্রথম আলোকে বলেন, শিক্ষক মখলিছুর রহমান কথার ছলে এটা বলেছেন ভেবে প্রথম দিকে বিষয়টি গুরুত্ব দেননি। পরে আরেকটি ভিডিওতে এসে ওই শিক্ষক তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ না করায় আক্ষেপ প্রকাশ করেন। এ কারণে ভোটের দুই দিন পর গত শুক্রবার তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ হয়। গাড়ি উপহার দেওয়ার কথা জানিয়ে বাড়িতে যাওয়ার জন্য নিমন্ত্রণ জানিয়েছেন। তাঁর নিমন্ত্রণ রক্ষার জন্য মঙ্গলবার চুনারুঘাট যাচ্ছেন।
হিরো আলম বলেন, বগুড়া-৬ ও ৪ আসনের উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র থেকে একতারা প্রতীকে প্রার্থী হওয়ার পর থেকেই লাখো মানুষের ভালোবাসায় তিনি মুগ্ধ। বহু মানুষ নানাভাবে উৎসাহ দিচ্ছেন ও সহযোগিতা করেছেন।
বগুড়া-৪ ও বগুড়া-৬ আসনের উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে একতারা প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। বগুড়া-৬ আসনে চমক দেখাতে না পারলেও বগুড়া-৪ আসনে ১৪-দলীয় জোটের অন্যতম শরিক জাসদের এ কে এম রেজাউল করিমের কাছে ৮৩৪ ভোটে হেরে যান তিনি। এরপর হিরো আলম অভিযোগ করেন, ভোটের ফলাফলে কারচুপি করে তাঁকে হারিয়ে দেওয়া হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রভিত্তিক ইভিএমের ভোটের প্রিন্ট কপি ও ৪৫টি কেন্দ্রের ভোট পুনর্গণনা চেয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে আবেদন করেন।
তবে আজ বগুড়া জেলার জ্যেষ্ঠ নির্বাচন কর্মকর্তা মাহমুদ হাসান প্রথম আলোকে বলেছেন, ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএমে) ভোট পুনর্গণনার কোনো সুযোগ নেই। হিরো আলমের আবেদন নির্বাচন কমিশনে পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হবে।
এমন অবস্থায় হাইকোর্টে রিট করার প্রস্তুতি নেওয়ার কথা জানিয়েছেন হিরো আলম।