পঞ্চগড়ে ৯ মাস বয়সী শিশু নুরীকে দত্তক দিয়ে ফিরিয়ে নেওয়া মা শরিফা খাতুনের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে বোদা উপজেলা প্রশাসন।
সোমবার দুপুরে বোদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহরিয়ার নজির চাল-ডাল, শাকসবজি ও কম্বল নিয়ে উপজেলার মুসলিমবাগ এলাকায় শরিফা খাতুনের ভাড়া বাড়িতে হাজির হন। এ সময় স্থানীয় ময়দানদীঘি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আব্দুল জব্বারসহ উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে গত রোববার প্রথম আলো অনলাইনে ও আজ সোমবার প্রথম আলো প্রিন্টে ‘পঞ্চগড়ে ৯ মাস বয়সী শিশু নুরীকে নিয়ে চার দিনে যা হলো’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
ইউএনও শাহরিয়ার নজির মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘গতকাল (রোববার) আপনার (প্রথম আলো) প্রতিবেদন দেখেছি। এ ছাড়া সদর উপজেলা ইউএনওর কাছেও বিষয়টি জেনেছি। ওই নারীর (শরিফা খাতুন) সঙ্গে কথা বলে মনে হয়েছে, মূলত খাবার জোগাড় করা নিয়েই তিনি হতাশায় ভুগছেন। আমরা প্রাথমিকভাবে পরিবারটিকে ৩০ কেজি চাল ও শাকসবজিসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় মালামাল কিনে দিয়েছি। সেই সঙ্গে তাঁদের কম্বলও দেওয়া হয়েছে। ওই নারীকে ইউনিয়ন পরিষদ ও মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের মাধ্যমে ভালনারেবল উইমেন বেনিফিট কার্যক্রমের আওতায় সহায়তা করা হবে। এ ছাড়া তাঁর বড় যে ছেলে-মেয়ে দুটি আছে, তাদের স্কুলে পড়াশোনার জন্য সহায়তা করা হবে।’
শিশু নুরীর মা শরিফা খাতুন বোদা উপজেলার ময়দানদীঘি ইউনিয়নের জেমজুট কারখানাসংলগ্ন মুসলিমবাগ এলাকায় মায়ের সঙ্গে একটি ভাড়া বাড়িতে থাকেন। শরিফার প্রথম স্বামীর ঘরে একটি ১৪ বছর বয়সী ছেলে আছে। এ ছাড়া দ্বিতীয় স্বামীর ঘরে সাত বছর ও ৯ মাস বয়সী দুটি মেয়ে আছে। জেমজুট কারখানার শ্রমিক মায়ের সঙ্গে থাকেলেও স্বামী (নুর ইসলাম) অন্যত্র থাকায় ভিক্ষাবৃত্তি করে তিন সন্তানকে নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন তিনি।
এর আগে গত মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে পঞ্চগড় পৌরসভার দক্ষিণ তেলীপাড়া এলাকায় সড়কের পাশে একটি হলুদখেতে শিশু নুরীকে ফেলে রেখে পালাচ্ছিলেন শরিফা। এ সময় স্থানীয় লোকজনের সন্দেহ হওয়ায় তাঁকে আটক করলে তিনি শিশুটির ভরণপোষণ দিতে পারছেন না বলে জানান। তাঁর এমন কষ্টের কথা শুনে শিশুটিকে লালন-পালনের দায়িত্ব নিতে রাজি হন স্থানীয় রুনা আক্তার নামে এক গৃহবধূ। পরে সবার উপস্থিতিতে রুনা আক্তারকে স্ট্যাম্পে লিখিতভাবে শিশুটিকে দিয়ে চলে যান শরিফা। এ সময় তাঁরা খাওয়ার জন্য শরিফাকে ৬০০ টাকা দেন।
তবে শিশুটিকে দিয়ে বাড়ি ফিরে এলোমেলো হয়ে যান শরিফা। নির্ঘুম রাত কাটানোর পাশাপাশি খাওয়াদাওয়া ছেড়ে দিয়ে ঘুরতে শুরু করেন পাগলের মতো। পরে পরিবারের লোকজন শিশুটির সন্ধান পেয়ে ফেরত নিতে এলে শিশুটিকে ফেরত দিতে অস্বীকৃতি জানায় রুনার পরিবার। পরে গত শুক্রবার বিকেলে সদরের ইউএনও জাকির হোসেনের হস্তক্ষেপে শিশু নুরী তার মায়ের কাছে ফেরে।
পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক মো. সাবেত আলী প্রথম আলোকে বলেন, ওই পরিবারটিকে প্রাথমিকভাবে সহায়তার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে ওই নারীর জন্য স্থায়ীভাবে একটি কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দেওয়ার বিষয়টি ভেবে দেখা হচ্ছে।