মাদারীপুরে অপহরণের পর স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ

ধর্ষণ
প্রতীকী ছবি

মাদারীপুরে এক তরুণের বিরুদ্ধে নবম শ্রেণির এক স্কুলছাত্রীকে অপহরণের পর দুই দিন আটকে রেখে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। পরে মারধর করে ওই স্কুলছাত্রীকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। গতকাল শনিবার রাতে ওই স্কুলছাত্রীকে মাদারীপুর ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

পুলিশ, ভুক্তভোগী পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রায় আট মাস আগে এক বান্ধবীর বিয়েতে এক তরুণের (২৪) সঙ্গে পরিচয় হয় ওই শিক্ষার্থীর। পরে ওই তরুণের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে মেয়েটি। গত বৃহস্পতিবার বান্ধবীর এক ফুফু পরিবারকে না জানিয়ে ওই শিক্ষার্থীকে বাড়ি থেকে ঢাকার কেরানীগঞ্জের ইকুরিয়ায় নামক এলাকায় নিয়ে যান। পরে অভিযুক্ত ওই তরুণ বিয়ের আশ্বাস দিয়ে একটি কক্ষে নিয়ে ওই স্কুলছাত্রীকে একাধিকবার ধর্ষণ করেন বলে ওই স্কুলছাত্রী অভিযোগ করে। পরে ওই তরুণ ও তাঁর পরিবারের লোকজন ওই স্কুলছাত্রীকে বেদম মারধর করেন বলে অভিযোগ ওঠে। একপর্যায়ে অসুস্থ হয়ে পড়লে গতকাল ওই স্কুলছাত্রীকে তার বাড়ি মাদারীপুরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। বাড়িতে এসে পরিবারের কাছে বিষয়টি জানালে গতকাল রাতে আহত ওই স্কুলছাত্রীকে মাদারীপুর ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

হাসপাতালের চিকিৎসক রিয়াদ মাহামুদ বলেন, ওই স্কুলছাত্রীকে (১৩) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাকে মারধর করায় তার শরীরের কিছু স্থানে আঘাতের চিহ্ন দেখা গেছে। গাইনি চিকিৎসক দ্বারা তার চিকিৎসা চলছে। ধর্ষণের আলামত সংগ্রহ করে পরীক্ষাগারে নেওয়া হয়েছে।

হাসপাতালের শয্যায় ভুক্তভোগী ওই স্কুলছাত্রী প্রথম আলোকে বলে, ‘বান্ধবীর ফুফু প্রথমে কাউকে কিছু না বলেই আমাকে ঢাকায় নিয়ে যায়। সেখানে সাদা কাগজে স্বাক্ষর করিয়ে বিয়ের নাটক করা হয়। পরে আমাকে আটকে রেখে জোর করে শারীরিক সম্পর্ক করে ওই তরুণ। আমি বাড়ি যেতে চাইলে আমাকে ধরে মারতেন। দুই দিন আমাকে খুব মেরেছে ওরা। পরে আমি অসুস্থ হয়ে পড়লে ওরা আমাকে বাড়ির সামনে নামিয়ে দিয়ে পালিয়ে যায়। আমার সঙ্গে যারা এই অন্যায় করেছে, আমি তাদের বিচার চাই।’

মেয়েটির বাবা বলেন, ‘আমার মেয়েকে তুলে নিয়ে বিয়ের কথা বলে ধর্ষণ করা হয়েছে। ওরে মারধর করে বাড়িতে পাঠিয়ে দিছে। আমি এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করে পুলিশের কাছে যাই। কিন্তু মাদারীপুরের পুলিশ বলে ঢাকায় গিয়ে মামলা করতে। আমরা গরিব মানুষ, কীভাবে ঢাকায় গিয়ে মামলা করব। ঘটনার শুরু তো মাদারীপুর থেকে হয়েছে। এখানে কেন মামলা নেবে না। এর বিচার কি পাব না।’

এদিকে অভিযুক্ত ওই তরুণের বাড়ি ঢাকার কদমতলীর শ্যামপুর এলাকায়। কাজের সুবাধে ওই তরুণ দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের ইকুরিয়া বসবাস করেন। জানতে চাইলে ওই তরুণের বাবা প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার ছেলের সঙ্গে ওই মেয়ের বিয়ে দিতে পরিবার থেকে এই ঘটনা সাজানো হয়েছে। আমার ছেলে এ ধরনের কাজ করতে পারে না। তাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।’

ধর্ষণের ঘটনা দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে হওয়ায় এ ব্যাপারে মামলা নিতে গড়িমসি করছে মাদারীপুর সদর মডেল থানা পুলিশ। অন্যদিকে ঘটনাস্থলের শুরু মাদারীপুরে হওয়ায় সেখানেই মামলা করতে হবে বলে জানিয়েছে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা পুলিশ।

মাদারীপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এ এইচ এম সালাউদ্দিন বলেন, ‘ধর্ষণের অভিযোগ তো দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে। মাদারীপুরে ধর্ষণের ঘটনা না হওয়ায় এখানে মামলা নেওয়ার সুযোগ নেই। প্রেমের সম্পর্কের পর এমন ঘটনা ঘটেছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। ভুক্তভোগী পরিবার যদি উপযুক্ত প্রমাণসহ ধর্ষণের মামলা দিতে চায় তাহলে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জেই মামলা করতে হবে।’

ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জর থানার ওসি মামুমুর রশীদ মুঠোফোনে বলেন, ‘ঘটনার শুরু যেখানে, সেখানেই মামলা করতে হবে। মাদারীপুরে মামলা হলে আমরা আসামি ধরার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করব। এখানে মামলা হওয়ার কোনো সুযোগ আপতত নেই।’