বরিশাল সিটি নির্বাচন

ভাইয়ের ফেরার অপেক্ষায় ‘একা’ খায়ের আবদুল্লাহ

আবুল খায়ের আবদুল্লাহ
আবুল খায়ের আবদুল্লাহ

বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবুল খায়ের আবদুল্লাহ দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার পর ২৭ দিন পার হলেও জেলা ও নগর আওয়ামী লীগের নেতারা তাঁর পাশে নেই। এমন পরিস্থিতির মধ্যেও তিনি নির্বাচনী মাঠে দিনরাত নিজেকে ব্যস্ত রাখছেন।

মনোনয়ন নিয়ে শুরুতেই ভাতিজা বর্তমান মেয়র সাদিক আবদুল্লাহর সঙ্গে যে দূরত্ব তৈরি হয়েছে, তা নিরসনে খায়ের আবদুল্লাহ গত সোমবার ৩১ সদস্যের নির্বাচন পরিচালনয় উপদেষ্টা কমিটি গঠন করেন। কমিটির প্রধান উপদেষ্টা করেছেন বড় ভাই ও সাদিক আবদুল্লাহর বাবা আবুল হাসানাত আবদুল্লাহকে। এই কমিটি ঘোষণার তিন দিন পরও হাসানাত আবদুল্লাহর ঘনিষ্ঠদের কাছ থেকে কোনো সাড়া পাননি দলীয় প্রার্থীর সমর্থকেরা।

আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর ঘনিষ্ঠজনেরা বলছেন, তিনি শিগগিরই বরিশালে ফিরবেন, নির্বাচনী কাজে অংশ নেবেন। তবে কবে নাগাদ আসবেন, তা কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না।

দলীয় সূত্র জানায়, বর্তমান মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ এবারও দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। তবে দল মনোনয়ন দিয়েছে আবুল খায়ের আবদুল্লাহকে। এতে ক্ষুব্ধ ও হতাশ আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ ও সাদিক আবদুল্লাহর সমর্থকেরা। গত ১৫ এপ্রিল দলীয় মনোনয়ন ঘোষণার পর থেকে খায়ের আবদুল্লাহর পাশে নেই জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের নেতারা। এমনকি ৩০টি ওয়ার্ডের নেতারাও নির্বাচনী কাজে অংশ নিচ্ছেন না।

জেলা ও নগর আওয়ামী লীগের নেতারা শুরু থেকেই বলে আসছেন, হাসানাত আবদুল্লাহ ও সাদিক আবদুল্লাহ শিগগিরই বরিশালে আসবেন। এরপর জেলা ও নগর আওয়ামী লীগের যৌথ সভা করে সবাই নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় নামবেন। কিন্তু ২৭ দিন অতিবাহিত হলেও তাঁরা বরিশালে ফেরেননি।

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তালুকদার মো. ইউনুস প্রথম আলোকে বলেন, ‘শিগগিরই আমাদের অভিভাবক আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ বরিশালে ফিরবেন। তিনি নির্বাচনী কাজে অংশ নেবেন।’ কবে নাগাদ ফিরবেন—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘না, এখনো দিনক্ষণ নির্ধারণ হয়নি।’

আবুল খায়ের আবদুল্লাহর সমর্থক নেতারা বলছেন, ৩১ সদস্যের উপদেষ্টা কমিটির অধিকাংশ সদস্যই তাঁদের সঙ্গে আছেন। কিছু সদস্য আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর নির্দেশনার জন্য অপেক্ষা করছেন। এ ছাড়া নগর কমিটি এবং ৩০টি ওয়ার্ড কমিটির অনেক নেতা দলীয় প্রার্থীর পক্ষে প্রকাশ্যে নামতে চান। তবে সাদিক আবদুল্লাহর নির্দেশনা ছাড়া তাঁরা নামতে পারছেন না।

আবুল খায়ের আবদুল্লাহর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য ও নগর আওয়ামী লীগের সাবেক দপ্তর সম্পাদক লস্কর নুরুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, আমাদের নেতা আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ বরিশালে আসবেন এবং তাঁর ছোট ভাইয়ের পক্ষে নির্বাচনী কাজে পরামর্শ দিয়ে এগিয়ে নেবেন।’ উপদেষ্টা কমিটি ঘোষণার পর এমন কোনো সাড়া পেয়েছেন কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘না, এখনো পাইনি, তবে ৩১ সদস্যের কমিটির অধিকাংশই আমাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। কয়েকজন আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর আসার অপেক্ষায় আছেন।’

২০১৮ সালে বরিশাল সিটির মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর নগর আওয়ামী লীগের একক নিয়ন্ত্রক হন মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ। তিনি তাঁর অনুগত লোকদের দিয়ে নগর ও নগরের ৩০টি ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কমিটি করেন। আর তাঁর বাবা আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হওয়ায় জেলা নেতারাও সাদিকের পক্ষে। ফলে আবুল খায়ের শুরু থেকেই দলের নেতাদের সহযোগিতা ছাড়াই নির্বাচনী কার্যক্রমে মাঠে আছেন। তাঁর সঙ্গে আছেন দল থেকে ছিটকে পড়া এবং দলে কোণঠাসা এমন নেতা-কর্মীরা। এ ছাড়া আছেন প্রয়াত মেয়র শওকত হোসেন হিরণ ও সদর আসনের সংসদ সদস্য ও পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুকের সমর্থকেরা।

অনেকে মনে করেছেন, সাদিক আবদুল্লাহ দলীয় মনোনয়ন না পাওয়ায় তাঁর বাবা আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর রাজনীতি অনেকটা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। ফলে খুব সহজেই বিষয়টিকে মেনে নতুন প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী মাঠে শামিল হওয়াটা তাঁদের জন্য কঠিন। ফলে তাঁরা নির্বাচনী মাঠে নামলেও দলের ভেতরে যে বিভাজন সৃষ্টি হয়েছে, তা সহজে দূর হওয়ার নয়।

খায়ের আবদুল্লাহর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য ও নগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মীর আমিন উদ্দীন প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই সমীকরণটা এখন খুব স্পষ্ট। এটা অবশ্যই খুব সহজে সম্ভব নয়। এরপরও আমরা আন্তরিকভাবে চাইব, আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ বরিশালে আসবেন এবং আমাদের সবার সর্বজনীন নেতা হিসেবে আবির্ভূত হবেন এই নির্বাচনের মাধ্যমে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা চাই না বরিশালের প্রয়াত মেয়র শওকত হোসেন হিরণের মতো দুঃখজনক পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি এখানে ঘটুক। এতে দল ও বরিশালবাসী ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’

তবে এ ধারণাকে অমূলক বলে মন্তব্য করেছেন আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত বরিশাল নগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও বর্তমানে আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির সদস্য গোলাম আব্বাস চৌধুরী। গত বুধবার বিকেলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ এমন একজন নেতা, যিনি বিভাজনে নয়, দলের ঐক্য প্রতিষ্ঠায় আজীবন কাজ করেছেন।

আবুল খায়ের আবদুল্লাহর ৩১ সদস্যের উপদেষ্টা কমিটির এই সদস্য আরও বলেন, মঙ্গলবারও আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে। তিনি বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে ফিরেছেন, এখন তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তিনি অচিরেই বরিশালে ফিরে ছোট ভাইয়ের নির্বাচনী কাজে অংশ নেবেন। তবে কবে নাগাদ আসবেন, তা নিশ্চিত করে জানাতে পারেননি তিনি।