রাজশাহীর পদ্মাপাড়ের টি-বাঁধে দুই সারিতে দাঁড়িয়ে আছেন তরুণ-তরুণীরা। তাঁদের চোখেমুখে উত্তেজনা। ‘শিংওয়ালা ধূমকেতু’ কিংবা ‘ডেভিল কমেট’ দেখবেন। স্বেচ্ছাসেবকেরা ভিড় সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন। মাইকে একজন করে নাম ডাকা হচ্ছে। তিনি ভিড় ঠেলে বেরিয়ে এলে স্বেচ্ছাসেবকেরা তাঁকে টেলিস্কোপের কাছে নিয়ে যাচ্ছেন।
আজ রোববার বিকেল থেকে টি-বাঁধে এমন উত্তেজনা লেগে ছিল। রাজশাহী অ্যাস্ট্রোনমি সেন্টার ও বাংলাদেশ অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের যৌথ উদ্যোগে আজ সন্ধ্যা সোয়া ছয়টা থেকে সাড়ে সাতটা পর্যন্ত পদ্মা নদীর পাড়ে টি-বাঁধে ধূমকেতু পর্যবেক্ষণ ক্যাম্পের আয়োজন করা হয়।
আগেই ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল, আকাশ মেঘমুক্ত থাকা সাপেক্ষে পর্যবেক্ষণ ক্যাম্পটি পরিচালিত হবে। ধূমকেতু পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি বৃহস্পতি গ্রহ ও চাঁদ দেখার আয়োজন থাকবে। কিন্তু আজ আকাশে মেঘ থাকায় দর্শনার্থীরা শুধু চাঁদ দেখতে পেয়েছেন।
রাজশাহী অ্যাস্ট্রোনমি সেন্টারের সভাপতি আহসান কবির (লিটন) প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা ৯ ইঞ্চি টেলিস্কোপের মাধ্যমে ধূমকেতু পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা করেছেন। আকাশ পরিষ্কার না থাকায় তাঁরা আপাতত শুধু চাঁদ দেখাচ্ছেন। আরও আধ ঘণ্টা পর বৃহস্পতি গ্রহ দেখানো যাবে। তিনি বলেন, ‘বিজ্ঞানচর্চায় পৃথিবী অনেক এগোলেও আমরা অনেক পিছিয়ে আছি। তাই বলে আমাদের যুবসমাজ কিছু করতে পারবে না, তা নয়। তাঁরা নতুন কিছু করে ফেলতে পারেন। তাঁদের ভেতরে সেই স্বপ্ন ঢুকিয়ে দিতে এই আয়োজন করা হয়েছে।’
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী সাবরিনা আজম টেলিস্কোপ থেকে চোখ তুলে বললেন, ‘শুধু চাঁদই দেখা হলো। শিংওয়ালা ধূমকেতু দেখতে পেলাম না। এত আগ্রহ নিয়ে ভিড় ঠেলে এসে কোনো লাভ হলো না। তবে চাঁদটাকে একটু অন্য রকমভাবে দেখা হলো।’ রাজশাহী মহানগর কলেজের উচ্চমাধ্যমিকের শিক্ষার্থী সঞ্জীব মজুমদারও দেখলেন। তিনিও বললেন, ‘একটি সাদা বৃত্ত ছাড়া কিছুই দেখতে পাইনি।’
রাজশাহীর গোদাগাড়ী থেকে সোহানুর রহমান নামের এক সেনাসদস্য এসেছেন। তিনি দেখার পর প্রতিক্রিয়ায় বললেন, ‘একটা বড় চাঁদ দেখলাম।’ সন্ধ্যা ৭টা ২০ মিনিটে ক্যাম্প গুটিয়ে নেওয়া হয়। তাঁদের ঘোষণা অনুযায়ী, ২০০ জন নাম নিবন্ধন করেছিলেন। এর বাইরে কেউ দেখার সুযোগ পাননি।
ঢাকার আদাবরে একটি তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন ফারুক হোসেন (৩০)। ধূমকেতু দেখার জন্য তিনি ঢাকা থেকে এসেছেন। দেখার সুযোগ না পেয়ে আক্ষেপ করলেন। তিনি বললেন, ঢাকা থেকে শুধু এটা দেখার জন্য এসেছিলেন। সকালে এসে বাইরে ঘোরাঘুরি করেছেন। এখানে এসে দেখার সুযোগ পেলেন না। তিনি বলেন, নাম নিবন্ধনের কথা আগে বলা উচিত ছিল। তার মতো অনেক মানুষ ধূমকেতু দেখতে এসে মন খারাপ করে ফিরে গেছেন।
ধূমকেতুটির কিতাবি নাম ‘১২ পি/পন্স-ব্রুকস’। তবে অনেক জ্যোতির্বিজ্ঞানী ধূমকেতুটির নাম দিয়েছেন ‘শিংওয়ালা ধূমকেতু’ কিংবা ‘ডেভিল কমেট’। এমন নামকরণের কারণ এটি সূর্যের কাছাকাছি এলে উত্তাপে একটি লেজ তৈরি করে, তখন ধূমকেতুটি দেখতে কিছুটা শিংয়ের মতো মনে হয়। প্রায় ৭১ বছর পর ২১ এপ্রিল শিংওয়ালা ধূমকেতুটি সূর্যের সবচেয়ে কাছে অবস্থান করার কথা। বাংলাদেশ অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ২১ এপ্রিল সূর্যাস্তের সময় থেকে ঘণ্টাখানেক ধূমকেতুটি আকাশে অবস্থান করবে।