এক বছর আগে বাঁধটি নির্মাণ করা হয়। এখন মজবুত বাঁধটিও ঝুঁকির মুখে পড়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে খুলনার কয়রা উপজেলার হরিণখোলা এলাকায় গত সোমবার ভোরে একটি বাঁধের ৫০ মিটার অংশ ধসে যায়। আতঙ্কিত গ্রামবাসী স্বেচ্ছাশ্রমে তাৎক্ষণিক মাটি ফেলে বাঁধটি টিকিয়ে রাখেন। গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নিয়োজিত শ্রমিকেরা বাঁধটি মেরামত শুরু করেন। তবে তাঁরা বাঁধ মেরামতে পাশের একটি বাঁধের মাটি ব্যবহার করছেন।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, পাশ্ব৴বর্তী মজবুত বাঁধের মাটি কেটে ও জিও ব্যাগ তুলে ধসে যাওয়া বাঁধ মেরামত করা হচ্ছে। এতে ধসে যাওয়া বাঁধের পাশের মজবুত বাঁধটিও ঝুঁকির মুখে পড়বে। তাৎক্ষণিক মাটি না পাওয়ায় মূল বাঁধের মাটি কেটে ধসে যাওয়া স্থান মেরামত করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পাউবো।
গতকাল সকালে কয়রা সদর ইউনিয়নের হরিণখোলা এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, প্রায় ১০০ শ্রমিক কোদাল দিয়ে মজবুত বাঁধের মাটি কেটে ধসে যাওয়া স্থানে ফেলছেন। এ সময় বাঁধের ঢাল থেকে জিও ব্যাগ তুলে নিতেও দেখা যায়। সেখানে পাউবোর কোনো কর্মকর্তাকে পাওয়া যায়নি।
হরিণখোলা গ্রামের বাসিন্দা আবদুল খালেক বলেন, সোমবার গ্রামবাসী মজবুত বাঁধ না কেটে পাশের জমি থেকে মাটি নিয়ে বাঁধ মেরামতের কাজ করেছে। তবে গতকালে সকালে পাউবোর লোকজন আসলে মজবুত বাঁধ কাটা শুরু হয়।
মুঠোফোনে খুলনা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শাহনেওয়াজ তালুকদার বলেন, জরুরি মুহূর্তে মাটি না পাওয়ায় মূল বাঁধের মাটি কেটে ধসে যাওয়া স্থান মেরামত করা হচ্ছে। জোয়ারের প্রভাব কমলে চরের মাটি কেটে সব বাঁধ পুনর্নির্মাণ করা হবে।
এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এক বছর আগে এই বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। সে সময় নির্মাণকারীরা নদী থেকে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু তুলে বাঁধ উঁচু করেছেন। পরে বাঁধের দুই পাশের ঢালে মাটি দিয়ে বালু ঢেকে দেওয়া হয়। স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, জোয়ারে চাপে ধীরে ধীরে ঢালের মাটি সরে গিয়ে মূল বাঁধ সহজে ধসে গেছে। বাঁধটি পরিকল্পিতভাবে করা হলে এত তাড়াতাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হতো না। এ অবস্থায় ধসে যাওয়া বাঁধ ঠেকাতে মূল বাঁধের মাটি কেটে নেওয়ায় পুরো এলাকা ঝুঁকির মুখে পড়বে। নদীতে জোয়ারের চাপ বাড়লে বা আরেকটি দুর্যোগ এলে বাঁধের ওই স্থানেও ভাঙনের শঙ্কা দেখা দেবে।
পাউবো সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালে সেপ্টেম্বরে জাইকার অর্থায়নে হরিণখোলা এলাকার ৬০ মিটার ক্লোজার এবং ১ হাজার ৬৪০ মিটার রিং ডাইক নির্মাণ করা হয়।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আবুল কালাম শেখ বলেন, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের সময় বাঁধের ওই স্থানে ভেঙে যায়। একই সঙ্গে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে প্রায় দুই কিলোমিটার বাঁধ। সে সময় পাউবো ওই বাঁধটি মেরামতের উদ্যোগ নেয়। কিন্তু অপরিকল্পিত পন্থায় বাঁধটি নির্মাণ করার ফলে বছর না যেতেই বাঁধটি ফের ভাঙনের শঙ্কার মুখে পড়েছে। পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী শাহনেওয়াজ তালুকদার বলেন, জাইকার অর্থায়নে ভিন্ন ডিজাইনে বাঁধটি নির্মাণ করা হয়েছিল। মাটির সংকট থাকায় প্রথমে বাঁধের মাঝের স্থানে ড্রেন কেটে বালু দিয়ে ভরাট করা হয়। পরে দুই পাশে মাটির ওয়াল নির্মাণ করা হয়েছে। এটি নতুন প্রযুক্তি। আগামীতে এ প্রযুক্তিতেই সব বাঁধ নির্মাণ করা হবে।