সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলং এলাকায় একটি গাছ থেকে লজ্জাবতী বানর ধরে এনেছিলেন এক ব্যক্তি। পরে দুদিন ধরে পালছিলেন ঘরে, খাওয়াচ্ছিলেন কলা। খবর পেয়ে বন বিভাগের কর্মীরা বিলুপ্তপ্রায় লজ্জাবতী বানরটিকে উদ্ধার করেছেন।
আজ সোমবার দুপুরে গোয়াইনঘাটের শান্তিনগর এলাকার আবু হানিফ মিয়ার বাড়ি থেকে বন বিভাগের জাফলং বিটের কর্মীরা লজ্জাবতী বানরটি উদ্ধার করেন। উদ্ধার অভিযানে জাফলং বন বিট কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান নেতৃত্ব দেন।
বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, আজ সকালে তাঁরা জানতে পারেন গত দুদিন ধরে জাফলংয়ের শান্তিনগর এলাকায় আবু হানিফ মিয়ার বাড়িতে একটি লজ্জাবতী বানর আটকে রাখা হয়েছে। খবর পেয়ে তাঁরা আবু হানিফ মিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁকে বুঝিয়ে বানরটি ছেড়ে দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানান। একই সঙ্গে তাঁকে জানানো হয় প্রচলিত বন্য প্রাণী আইনে যেকোনো বন্য প্রাণী লালনপালন, ধরা এবং হত্যা করা দণ্ডনীয় অপরাধ।
লজ্জাবতী বানর লাজুক বানর নামেও পরিচিত। আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘ (আইইউসিএন) লজ্জাবতী বানরকে বিপন্নপ্রায় প্রাণী হিসেবে লাল তালিকাভুক্ত করেছে। এটি দেশের ক্ষুদ্রতম বানর–জাতীয় প্রাণী। লজ্জাবতী বানর মূলত বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের চিরসবুজ বনের বাসিন্দা। এগুলো নিশাচর ও বনের গভীরে উঁচু গাছে থাকতে পছন্দ করে। দিনে গাছের খোঁড়লে বা ঘন পাতার আড়ালে ঘুমিয়ে কাটায়। বিরল, নিশাচর ও লাজুক হওয়ায় দিনে সহজে চোখে পড়ে না। এগুলো গাছে গাছেই থাকে এবং সহজে মাটিতে নামে না। অত্যন্ত ধীরগতিতে চলাফেরা করে। এগুলো সাধারণত ফল, পাতা, উদ্ভিদের কষ বা নির্যাস ইত্যাদি খায়। মাঝেমধ্যে বড় কীটপতঙ্গ, পাখির ডিম-ছানা, সরীসৃপও খেয়ে থাকে।
আবু হানিফ মিয়ার ছেলে শেখ ফরিদ মিয়া জানান, দুই দিন আগে রাস্তা দিয়ে যাওয়ার পথে জঙ্গলের পাশে বানরের মতো ওই প্রাণীকে দেখতে পান তিনি। প্রথমে একটু ভয় পেয়েছিলেন। পরে আরও একজনের সহযোগিতায় প্রাণীটিকে ধরে বাড়িতে নিয়ে আসেন। প্রাণীটিকে ধরতে গেলে তাঁর হাতে কামড় দেওয়ার চেষ্টা করে। প্রথমে প্রাণীটিকে চিনতে না পারলেও পরে লজ্জাবতী বানর বলে জানতে পারেন। প্রাণীটিকে খাবার হিসেবে কলা দিয়েছেন। বানরটিকে পরিবারের সদস্যরাসহ তিনি লালনপালন করছিলেন। বন বিভাগ কর্তৃপক্ষ তাঁদের বোঝানোর পর তাঁরা বানরটি তাদের হাতে তুলে দিয়েছেন।
জাফলং বন বিট কর্মকর্তা মো. হাবিবুর রহমান বলেন, বানরটিকে উদ্ধার করে বন বিভাগের কার্যালয়ে নেওয়া হয়েছে। বানরটিকে খাবার দিয়ে সারী রেঞ্জের জাফলং সংরক্ষিত বনাঞ্চলে অবমুক্ত করা হয়েছে।