ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী, তাঁর স্ত্রী মাউশির সাবেক মহাপরিচালক ফাহিমা খাতুনসহ আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের ৩৫০ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে আরেকটি হত্যা মামলা হয়েছে। গতকাল সোমবার রাতে সদর থানায় জাবির হোসেন মিয়া নামে এক ব্যক্তি মামলাটি করেন। সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোজাফফর হাসেন মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
জাবির হোসেন সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার চারহাবিবপুরের লোলাচর গ্রামের বাসিন্দা। তিনি বর্তমানে সদর উপজেলার সুহিলপুর বাজার এলাকায় বসবাস করেন। ২০২১ সালের ২৭ মার্চ কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের নন্দনপুর বাজার থেকে চার কিলোমিটার উত্তরে সদর উপজেলার বুধলে গুলিতে জাবিরের ছেলে বাদল মিয়া নিহত হন।
উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ (সদর ও বিজয়নগর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। ৫ আগস্টের পর থেকে তিনি আত্মগোপনে আছেন। এ নিয়ে সাবেক মন্ত্রী মোকতাদিরের বিরুদ্ধে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৯টি মামলা হলো। এর মধ্যে ছয়টি হত্যা, একটি গুম ও দুটি বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে দায়ের করা হয়েছে।
মামলার আসামিদের মধ্যে আছেন মোকতাদিরর সহধর্মিণী মাউশির সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক ফাহিমা খাতুন, জেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ও সাবেক পৌর মেয়র হেলাল উদ্দিন, সাংগঠনিক সম্পাদক মহসিন মিয়া, আইনবিষয়ক সম্পাদক ও জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক জহিরুল ইসলাম, দপ্তর সম্পাদক মনির হাসেন, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি লোকমান হোসেন, সাধারণ সম্পাদক সাইদুজ্জামান আরিফ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এইচ এম আল আমিন আহমেদ, শহর ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক সৈয়দ রনি, জায়েদুল হক, জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহাদাৎ হোসেন, জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান বিল্লাল মিয়া, সদর উপজেলা যুবলীগের সভাপতি আলী আজম, সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন, বাসুদেব ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান মোবাশ্বের আলম, সাদেকপুরের ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান এ কে এম আবদুল হাই, মাছিহাতার চেয়ারম্যান আল আমিন প্রমুখ। মামলায় শিক্ষক ইউপি চেয়ারম্যানসহ অজ্ঞাতনামা ১০০ থেকে ১২০ জনকে আসামি করা হয়।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ২০২১ সালের ২৬ মার্চ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরকে কেন্দ্র করে সারা দেশে আন্দোলন হয়। ২৭ মার্চ সদর উপজেলার নন্দনপুর বাজারে মিছিল বের করে। সেখানে আওয়ামী লীগের ক্যাডাররা জড়ো হয়ে বিষয়টি মামলার প্রধান আসামি ও তাঁর স্ত্রীকে অবগত করেন। বেলা তিনটার দিকে মামলার প্রধান আসামি মোকতাদির চৌধুরী ও দ্বিতীয় আসামি ফাহিমা সদর উপজেলার বুধলে থাকা তৌহিদী জনতা ও ছাত্র-শিক্ষকের মিছিলে গুলি করে মানুষ হত্যা করে মিছিল ছত্রভঙ্গ করার হুকুম দেন। তাঁদের হুকুমে আওয়ামী লীগের একটি মিছিল ঘটনাস্থলে পৌঁছে চায়নিজ রাইফেল, নাইন এমএম পিস্তলসহ রড, চায়নিজ কুড়াল, হকিস্টিক, বইঠা দিয়ে জনতার মিছিলে এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণসহ ভাঙচুর চালায়। তারা ব্যাপক ক্ষতিসাধন করে গানপাউডার দিয়ে আশপাশের বিভিন্ন দোকানপাট পুড়িয়ে ফেলে। একপর্যায়ে মিছিলটি ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। আসামিদের ছোড়া গুলিতে বাদল মিয়ার শরীরের বিভিন্ন স্থানে মারাত্মক জখম হয়। সন্ধ্যা ছয়টার দিকে উদ্ধার করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে প্রশাসনিক নির্দেশে ময়নাতদন্ত ছাড়াই বাদলের লাশ গ্রামের বাড়ি নিয়ে লালারচর কবরস্থানে দাফন করা হয়।