সংবাদ সম্মেলনে বিল্লাল হোসেন ভূঁইয়া। আজ শনিবার কুমিল্লা নগরের একটি হোটেলে
সংবাদ সম্মেলনে বিল্লাল হোসেন ভূঁইয়া। আজ শনিবার কুমিল্লা নগরের একটি হোটেলে

‘সাবেক আইনমন্ত্রীর প্রভাবে দুই বছরের বেশি সময় ধরে স্থগিত আছে জমি দখলের মামলাটি’

কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলায় অন্যের সম্পত্তি দখল করে বাড়ি নির্মাণের অভিযোগে আদালতের এক পেশকারের পরিবারের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন এক ব্যক্তি। তবে ভুক্তভোগীর অভিযোগ, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের প্রভাব খাটিয়ে মামলাটি দুই বছরের বেশি সময় ধরে স্থগিত রাখা হয়েছিল।

আজ শনিবার দুপুরে নগরের কান্দিরপাড় এলাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেছেন মো.বিল্লাল হোসেন ভূঁইয়া নামের এক ব্যক্তি। অভিযুক্ত ওই ব্যক্তির নাম জসিম উদ্দিন ভূঁইয়া। তিনি চট্টগ্রাম জেলা আদালতের পেশকার হিসেবে কর্মরত। অভিযোগকারী বিল্লাল ও জসিম উদ্দিন সম্পর্কে চাচাতো ভাই।

বিল্লালের দাবি, আইন বিভাগে চাকরির সুবাদে সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে জসিম উদ্দিন ভূঁইয়ার পরিচয় ছিল। সেই পরিচয়ের প্রভাব খাটিয়ে কুমিল্লার আদালতে করা ওই মামলা স্থগিত রাখা হয়। তাঁর ক্রয়কৃত ওই জমি দখল করে বিলাসবহুল একটি বাড়ি নির্মাণ করেন জসিম উদ্দিন।

সংবাদ সম্মেলন বিল্লাল বলেন, ‘২০০৯ সালে আমি উত্তর শ্যামপুর এলাকায় বসতভিটার জন্য ৪ শতক জমি ক্রয় করি। ২০১৬ সালে আমি প্রবাসে গেলে আমার চাচা আবদুস সালাম ও তাঁর ছেলে জসিম উদ্দিন ভূঁইয়া মিলে সেখানে এক শতক জায়গা দখলে নেন। এরপর তাঁদের আরও ৩ শতকসহ মোট ৪ শতক সম্পত্তিতে প্রায় কোটি টাকা খরচ করে আলিশান একটি বাড়ি নির্মাণ করেন। বাড়ির কাজ শুরু করলে আমরা কুমিল্লার আদালতে ২০১৬ সালে একটি মামলা করি। তখন আদালত আমাদের সম্পত্তিতে বাড়ি নির্মাণে নিষেধাজ্ঞা দেয়। কিন্তু তাঁরা সেই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বাড়ি নির্মাণকাজ চালিয়ে যায়। এরপর আমরা পুনরায় একই বছর আদালত অবমাননার আরেকটি মামলা করি জসিমের বাবার বিরুদ্ধে। চার বছর ধরে চলার পর ২০২০ সালে কুমিল্লার সহকারী জজ, বুড়িচং আদালত অবমাননার মামলাটি রহস্যজনক কারণে খারিজ করে দেয়। একই আদালত অদৃশ্য কারণে ২০২২ সালে আমার মূল মামলাটিও অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করে রাখে। ২০২০ সালে খারিজ করে দেওয়া মামলাটি বহাল রাখতে আমরা জেলা জজ আদালতে আপিল করেছি, যা এখনো চলমান।’

বিল্লালের ভাষ্য, ‘পরবর্তী সময়ে খোঁজখবর নিয়ে জানতে পারি, জসিম উদ্দিন চট্টগ্রাম আদালতের পেশকার হওয়ায় তিনি আইন বিভাগের কর্মচারীদের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি করতেন, যার কারণে তাঁর সঙ্গে সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সম্পর্ক ছিল। সেই প্রভাব খাটিয়ে ২০২০ সালে একটি মামলা খারিজ এবং ২০২২ সালে মূল মামলাটি আইনবহির্ভূতভাবে অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করিয়েছেন তিনি। যে বিচারক দুটি মামলার বিষয়ে মনগড়া এসব আদেশ দিয়েছেন, তিনি সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদের নিকটাত্মীয় বলে জানতে পেরেছি। এ জন্য এত দিন ভয়ে এ নিয়ে কথা বলতে পারিনি।’

বিল্লালের এসব অভিযোগকে মিথ্যা ও বানোয়াট বলে দাবি করেছেন অভিযুক্ত জসিম উদ্দিন ভূঁইয়া। তিনি মুঠোফোনে এই প্রতিনিধিকে জানান, ‘তাঁরা মামলা করেছে আমার বাবার বিরুদ্ধে। আমি মামলার বিবাদী নই। তবে সংবাদ সম্মেলনে আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। সাবেক আইনমন্ত্রীর সঙ্গে সখ্যতা তো দূরের কথা পরিচয়ও নেই আমার। মামলাটি স্থগিত হয়ে আছে আইনগতভাবেই। এখানে অদৃশ্য কোনো কারণ নেই। আমি আইন বিভাগের একজন কর্মচারী হয়ে অন্যায় কোনো কাজ করতে পারি না।’

জসিম উদ্দিন ভূঁইয়ার দাবি, যে জায়গাটি নিয়ে মামলা চলছে, সেটি তাঁদের নিজেদের। তাঁর কাছে সব কাগজপত্রও আছে। অযথা তাঁদের পরিবারের বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে।