কুষ্টিয়ায় তপ্ত রোদ আর গরমের মধ্যে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার গণপদযাত্রা করে রাষ্ট্রপতি বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে শিক্ষার্থীরা। কোটার যৌক্তিক সংস্কারের দাবিতে আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে মহামান্য রাষ্ট্রপতিকে জরুরি সংসদ অধিবেশন ডাক দেওয়ার অনুরোধ জানান আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। তবে পদযাত্রার সময় পুলিশ কোনো বাধা দেয়নি।
আজ রোববার সকাল সাড়ে নয়টার দিকে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে এ গণপদযাত্রা শুরু হয়। সেখানে কুষ্টিয়া সরকারি কলেজসহ কয়েকটি কলেজের শিক্ষার্থীরা অংশ নেন।
গণপদযাত্রা শেষে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) সমন্বয়ক মুখলেসুর রাহমান জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে স্মারকলিপি দেন। জেলা প্রশাসক না থাকায় তাঁর পক্ষে ডেপুটি নেজারত কালেক্টর (এনডিসি) মো. মহসীন উদ্দীন স্মারকলিপি গ্রহণ করেন।
শিক্ষার্থীরা বলেন, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি বাসযোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস থেকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা কুষ্টিয়া শহরের চৌড়হাস এলাকায় জড়ো হন। সেখানে আগে থেকে কুষ্টিয়া সরকারি কলেজসহ আরও কয়েকটি কলেজের শিক্ষার্থীরাও আসেন। এরপর সরকারি চাকরিতে সব গ্রেডে কোটার যৌক্তিক সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা চৌড়হাস থেকে গণপদযাত্রা শুরু করেন। মিছিলের সামনে ডিবি পুলিশের একটি দল ছিল।
মিছিলে ‘জেগেছে রে জেগেছে, ছাত্রসমাজ জেগেছে’, ‘মুক্তিযুদ্ধের বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই’, ‘কোটাপদ্ধতি নিপাত যাক, মেধাবীরা মুক্তি পাক’, ‘কোটা না মেধা? মেধা মেধা’, ‘আপস না সংগ্রাম? সংগ্রাম সংগ্রাম’—এমন নানা স্লোগান দেন শিক্ষার্থীরা।
মিছিলটি শহরের ফুলতলা, কাস্টমস মোড়, মজমপুর রেলগেট হয়ে শহরের প্রধান সড়ক এনএস রোডে মুজিব চত্বরে যায়। সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষে পদযাত্রা আবার মজমপুর রেলগেট হয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে গিয়ে শেষ হয়। তবে কোথাও কোনো জায়গায় তাঁরা পুলিশের বাধার মুখে পড়েননি। বরং পুলিশ এই গণপদযাত্রায় সহযোগিতা করেছে।
বেলা ১১টায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ইবির সমন্বয়ক মুখলেসুর রাহমান জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের নিজে দাঁড়িয়ে এনডিসির হাতে স্মারকলিপি তুলে দেন। জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে এই স্মারকলিপি রাষ্ট্রপতির কাছে পৌঁছে দেওয়ার দাবি জানান তিনি।
রাষ্ট্রপতি বরাবর দেওয়া স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘ছাত্রসমাজ আশা রাখে, আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে জাতীয় সংসদে জরুরি অধিবেশন ডেকে সরকারি চাকরিতে সব গ্রেডে কোটার যৌক্তিক সংস্কার করতে উদ্যোগ গ্রহণ করে বাধিত করবেন। অন্যথায় ছাত্রসমাজ নিজেদের অধিকার রক্ষায়, বৈষম্যমুক্ত ও মেধাভিত্তিক বাংলাদেশ নির্মাণে সর্বাত্মক আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়তে বাধ্য হবে।’
স্মারকলিপি গ্রহণ শেষে এনডিসি মো. মহসীন উদ্দীন বলেন, যথাযথ প্রক্রিয়ায় স্মারকলিপি মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো হবে।
এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ইবির সমন্বয়ক মুখলেসুর রাহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘যে অচল অবস্থা চলছে, তার সমাধান একমাত্র মহামান্য রাষ্ট্রপতি জরুরি সংসদ অধিবেশন ডেকে সমাধান করতে পারেন। এ জন্য গণপদযাত্রা শেষে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে। পরবর্তী সময়ে আরও কোনো কর্মসূচি থাকলে কেন্দ্রীয় নির্দেশে তা বাস্তবায়ন করা হবে।’