শঙ্কা রূপ নিল বাস্তবে, যানজটে ভোগান্তি চরমে

টানা বৃষ্টিতে ডুবে গেছে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের বিভিন্ন অংশ। গর্তে পড়ে আটকে যায় কাভার্ড ভ্যান। সৃষ্টি হয় দীর্ঘ যানজট। গতকাল দুপুরে টঙ্গী বাজার এলাকায়
ছবি: খালেদ সরকার

শঙ্কা ছিল ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে হওয়া বৃষ্টির পানি জমবে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে। বিশেষ করে রাজধানীর বিমানবন্দর থেকে গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত অংশে দুর্ভোগ পৌঁছাবে চরমে। হয়েছেও তা–ই। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বৃষ্টি শুরু হওয়ার পর গত সোমবার ও গতকাল মঙ্গলবার—এ দুই দিন তীব্র যানজটে নাকাল হতে হয়েছে এ পথে চলাচলকারী যাত্রীসহ পরিবহনকর্মীদের।

বিআরটি (বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট) প্রকল্পের কাজের কারণে এমনিতেই ঢাকার আবদুল্লাহপুর থেকে চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত সড়ক সংকুচিত হয়ে পড়েছে। এর ওপর বিভিন্ন অংশ খানাখন্দে ভরা। সামান্য বৃষ্টি হলেই সেসব খানাখন্দে পানি জমে যায়। সড়কের পাশের নালাও নোংরা-আবর্জনায় প্রায় ভরা। এতে নালার পানি উপচে ওঠে সড়কে। এতে তৈরি হয় যানজটের।

প্রকল্প কর্তৃপক্ষ সড়কটি বিভিন্ন সময় মেরামত করার প্রতিশ্রুতি দিলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। সোমবারের টানা বৃষ্টিতে সড়কটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। গতকালও সকালের দিকে বৃষ্টি হয়। এতে গতকালও যানজটের ভোগান্তি এড়ানো যায়নি।

গাজীপুর মহানগর পুলিশের ভাষ্য, এক সপ্তাহ বা তারও বেশি সময় ধরে বৃষ্টি না থাকায় পুরো সড়ক শুকনো ছিল। প্রকল্প কর্তৃপক্ষ চাইলে এ সময়ে সড়কটির ভাঙা অংশ মেরামত করে নির্বিঘ্নœযান চলাচল নিশ্চিত করতে পারত। কিন্তু তারা এসবের কিছুই করেনি। এর মধ্যে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের পূর্বাভাস পাওয়ার পর থেকেই তারা ভোগান্তির আশঙ্কা করছিল।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গাজীপুর মহানগর ট্রাফিক পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, ‘কোনো কারণে বৃষ্টি হলে বা বৃষ্টি হবে—এমন আভাস পেলেই সড়কটি নিয়ে চিন্তায় পড়ে যাই আমরা। সংকুচিত লেন, গর্ত ও তার সঙ্গে প্রবল বৃষ্টিপাতের কারণে সড়কটিতে এখন চরম দুর্ভোগ।’

এ অবস্থায় বিকল্প সড়ক ব্যবহারের কথা জানিয়েছে গাজীপুর ও ঢাকা মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ। দুই বিভাগই আলাদা ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে যাত্রীদের সতর্ক করেছে। পোস্ট দুটিতে সড়কের গর্তের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

জানতে চাইলে গাজীপুর মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (ট্রাফিক) মো. আলমগীর হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘বৃষ্টি হলেই সড়কে খানাখন্দের কারণে ভোগান্তি দেখা দেয়। এর মাঝে সোমবারের ভারী বৃষ্টিতে অবস্থা বেশি খারাপ হয়ে পড়ে। তাই যাত্রীদের সতর্ক করতেই আমরা ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছি।’

সরেজমিন ঘুরে দেখে এবং সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে ট্রাফিক পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত সোমবার সারা দিনই থেমে থেমে যান চলাচল করেছে। ওই দিন সড়কে গাড়ির চাপ কিছুটা কম ছিল। তবে গতকাল সকাল থেকে গাড়ির চাপ বাড়ায় দেখা দেয় দীর্ঘ যানজট। ঢাকামুখী সড়কের বোর্ডবাজার থেকে টঙ্গীর মিলগেট এবং ময়মনসিংহমুখী সড়কের রাজধানীর বনানী থেকে টঙ্গীর কলেজগেট পর্যন্ত দেখা দেয় তীব্র যানজট। বৃষ্টির পানি কিছুটা কমলে বেলা তিনটার দিকে যান চলাচল কিছুটা স্বাভাবিক হয়।

গত ১৫ আগস্ট উত্তরায় গাড়ির ওপর গার্ডার পড়ে পাঁচজনের নিহত হওয়ার ঘটনার পর থেকে বিআরটি প্রকল্পের কাজ বন্ধ রয়েছে। তবে গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সড়কটির গাজীপুরের বিভিন্ন অংশে ইট, বালু, সিমেন্টসহ অন্যান্য নির্মাণসামগ্রী অগোছালোভাবে পড়ে থাকতে দেখা যায়। এতে কোথাও কোথাও সড়ক সংকুচিত হয়ে পড়েছে। কোথাও তৈরি হয়েছে খানাখন্দ। এসব খানাখন্দে জমে আছে পানি। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা টঙ্গীর মিলগেট এলাকায়। সেখানে গাড়ি চলছে এক লেনে। এর ওপর ওই লেনও পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে উভয়মুখী সড়কে দেখা দিয়েছে দীর্ঘ যানজট।

দুপুর ১২টার দিকে আবদুল্লাহপুর মোড়ে দেখা যায় অনেক মানুষের ভিড়। কারও হাতে ব্যাগ, কারও কোলে শিশু, কারও বা মাথায় বস্তা। দীর্ঘক্ষণ এক জায়গায় আটকে থাকায় অনেকেই বাস থেকে নেমে হেঁটে গন্তব্যে রওনা দিয়েছেন।

কথা হয় গাজীপুরের শ্রীপুরগামী আসমা আক্তার নামের এক যাত্রীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘সকাল নয়টায় খিলক্ষেত থেকে গাড়িতে উঠেছি। সাড়ে ১০টায় গাড়ি আসে হাউস বিল্ডিংয়ে। এরপর আর গাড়ি আগায়ই না। তাই বাধ্য হইয়্যাই হেঁটে রওনা দিসি।’ আসমা যাবেন টঙ্গীতে।

ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের যানজটের প্রভাব পড়তে দেখা গেছে আবদুল্লাহপুর মোড় থেকে ঢাকা-সিরাজগঞ্জ সড়কে, টঙ্গীর কামারপাড়া সড়ক ও টঙ্গী-ঘোড়াশাল আঞ্চলিক সড়কে। এসব সড়কেও যানবাহন চলাচলে ছিল ধীরগতি।

জানতে চাইলে বিআরটি প্রকল্পের পরিচালক মহিরুল ইসলাম খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘সড়কে এখন স্থায়ী নির্মাণকাজ চলছে। নভেম্বর মাসের মধ্যে পুরো কাজ শেষ হবে। তখন আর ভোগান্তি থাকবে না।’

সড়কের এমন রুগ্‌ণ দশায় গাড়িচালকেরাও বিরক্ত। কিশোরগঞ্জগামী অনন্যা পরিবহনের একটি বাসের চালক মো. ইউসুফ আলী বলেন, ‘সড়কের ভাঙাচুরায় ঝাঁকির কারণে শরীর আর মানে না। মাঝেমধ্যে শরীরে জ্বর¦আইস্যা যায়। তা ছাড়া গাড়ির যন্ত্রপাতিও ঠিক থাকছে না। এই ভোগান্তির শেষ কবে, আল্লাহই ভালো জানেন!’