ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সব আদালতে অচলাবস্থা, আইনজীবীদের বিরুদ্ধে কারাবন্দীদের স্লোগান

জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে শত শত বিচারপ্রার্থী নারী-পুরুষ আদালতে এসে হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন। আজ বৃহস্পতিবার সকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া আদালত চত্বরে
ছবি: প্রথম আলো

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা ও দায়রা জজ শারমিন নিগার এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক (জেলা জজ) মোহাম্মদ ফারুককে বদলি ও নাজিরের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মতো জেলার সব আদালত বর্জন কর্মসূচি পালন করছেন আইনজীবীরা। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন জেলার কয়েক হাজার বিচারপ্রার্থী।

দুই বিচারকের বদলি ও এক নাজিরের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে এক মাসের অধিক সময় ধরে জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্যরা দুই আদালত বর্জন করে আসছিলেন। তবে গতকাল বুধবার থেকে আইনজীবীরা দুটি আদালতসহ সব আদালত বর্জন করে আসছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার আইনজীবীদের সাধারণ সভা শেষে আইনজীবীরা ঘোষণা দেন, ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত নতুন এই কর্মসূচি চলবে।

আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে কোনো আদালতেই আইনজীবীদের দেখা যায়নি। তাঁরা নিজ নিজ চেম্বারে অবস্থান করেছেন। আদালত চত্বরেও আইনজীবীদের উপস্থিতি কম দেখা গেছে। সকাল পৌনে ১০টার দিকে জেলা কারাগার থেকে একটি প্রিজন ভ্যানে করে ৬৯ জন কারাবন্দীকে আদালত চত্বরে নিয়ে আসা হয়। তখন তাঁদের আইনজীবীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দিতে দেখা গেছে।

সকাল থেকেই জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে শত শত বিচারপ্রার্থী নারী-পুরুষ আদালতে এসে হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন। আদালতে আসা বিচারপ্রার্থীদের অধিকাংশই আইনজীবীদের কর্মবিরতির ব্যাপারে জানেন না। এমন অনেকেই আজ আদালতে এসেছেন, যাঁরা দুই তিন-মাস আগে আদালতে এসেছিলেন। আজ তাঁদের আদালতে আসার পূর্বনির্ধারিত তারিখ ছিল। পরে আবার কবে তাঁদের আদালতে আসতে হবে, সেটাও জানতে পারছেন না বিচারপ্রার্থীরা।

সাইফুল ইসলাম (২৫) নামের এক যুবক এসেছেন ঢাকা থেকে। তিনি জেলার নাসিরনগর উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের আলিয়ারা গ্রামের বাসিন্দা। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি একটি হত্যা মামলার বাদীর ভাগনে। আজ এসেছিলাম মামলার খোঁজ নিতে, এসে দেখি আদালতে চলছে অচলাবস্থা। বাধ্য হয়ে ফিরে যাচ্ছি।’

আজ সকাল থেকে আদালত চত্বরেও আইনজীবীদের উপস্থিতি কম দেখা গেছে

রুহানা বেগম (৩০) নামের এক নারী এক বছর ধরে হাজতে আছেন। রুহানার সঙ্গে তাঁর দেড় বছরের মেয়ে শিশু আছে। জামিন শুনানির জন্য আজ তাঁকে আদালতে আনা হয়েছিল। তবে আদালতের অচলাবস্থার বিষয়টি জানার পর রুহানা কাঁদতে শুরু করেন। রুহানা প্রথম আলোকে বলেন, ‘অনেক আশা নিয়া আজ আইছিলাম বাচ্চাটা নিয়া মুক্ত অইতে ফারুম। কিন্তু অইল না।’ এ কথা বলেই আবার কাঁদতে শুরু করেন রুহানা।

তবে আদালতে বিচারক ও কর্মকর্তাদের উপস্থিতির খবর পাওয়া গেছে। বিচারকেরা এজলাসে উঠে আবার নেমে তাঁদের খাসকামরায় চলে গেছেন বলে জানা গেছে। জেলা জজ আদালতের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. গোলাম মোস্তফা প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিচারকেরা সকাল ১০টার মধ্যে আদালতে বসেছেন। তবে আইনজীবীরা আদালতে না থাকায় বিচারকেরা আদালত থেকে নেমে গেছেন। তাই আদালত চলছে না।’

আজ বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত আদালত চত্বরে কোনো প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। আদালত চত্বরে আইনজীবীদের কোনো প্রকার সভা-সমাবেশও হয়নি। শান্তিপূর্ণভাবেই আইনজীবীরা তাঁদের ঘোষিত কর্মবিরতি পালন করছেন।

জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক সামসুজ্জামান চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের দাবি পূরণ না হওয়ায় গতকাল থেকে সব আদালতে কর্মবিরতি চলছে। ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সব আদালতে আমাদের সর্বাত্মক কর্মবিরতি চলবে। এর মধ্যে দাবি পূরণ না হলে পরবর্তী সময়ে আবার নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।’ আইনজীবীদের বিরুদ্ধে কারাবন্দীদের স্লোগান দেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এটা বেঞ্চ সহকারীদের (পেশকার) কাজ। তাঁরাই (পেশকার) হাজতিদের এই কাজে উসকে দিয়েছেন।’

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এমরানুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, আদালত চত্বরে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটার আশঙ্কা নেই। পরিবেশ স্বাভাবিক আছে। আদালত চত্বরে টহল পুলিশ দায়িত্ব পালন করছে।