সুনামগঞ্জ সদর উপজেলায় ধারারগাঁও থেকে ব্রাহ্মণগাঁও পর্যন্ত সড়কের দূরত্ব মাত্র তিন কিলোমিটার। পৌর শহরের উত্তর প্রান্ত থেকে সড়কটি সুরমা নদীর তীর হয়ে চলে গেছে। বন্যায় সুরমা নদীর তীর উপচে সড়কের ওপর দিয়ে প্রবল স্রোত বয়ে যায়। এতে সড়কের অন্তত আটটি স্থান ভেঙে গেছে। ওই সড়ক দিয়ে চলাচলকারী কয়েকটি গ্রামের মানুষ এখন পড়েছে দুর্ভোগে।
শুধু এই একটি সড়ক নয়, সুনামগঞ্জে দুই দফা বন্যায় গ্রামীণ অনেক সড়ক ক্ষতবিক্ষত হয়ে গেছে। ভাঙাচোরা সড়কে চলাচল করতে গিয়ে ভোগান্তি পোহাচ্ছে লোকজন। আবার অনেক স্থানে এখনো সড়ক নিমজ্জিত আছে বন্যার পানিতে।
সওজ ও এলজিইডি সূত্রে জানা গেছে, সুনামগঞ্জে দুই দফা বন্যায় এখন পর্যন্ত প্রায় ৬০০ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে এটি চূড়ান্ত হিসাব নয়, এ ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে। মাঝখানে পানি কিছুটা কমায় এ হিসাব করা হয়েছিল। কিন্তু এখন আবার পানি বেড়ে যাওয়ায় অনেক সড়ক নিমজ্জিত হয়েছে। তাই বন্যার পানি পুরোপুরি নামার পর আবার ক্ষয়ক্ষতি নির্ধারণ করা হবে।
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার ধারারগাঁও-ব্রাহ্মণগাঁও সড়কের খাইমতিয়র এলাকার বাসিন্দা আবু সুফিয়ান বলেন, নদীর পানির তোড়ে সড়কের কিছু স্থান ধসে গেছে, আবার কোনো কোনো স্থান একেবারে ভেঙে গেছে। এখন সড়ক দিয়ে কোনো যানবাহন চলতে পারছে না। যাত্রীদের ধারারগাঁও থেকে খাইমতিয়র পর্যন্ত এসে বাকি পথ হেঁটে যেতে হয়।
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার কুরবাননগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল বরকত জানান, তাঁর ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে ধারারগাঁও-খামইতিয়র সড়কের কয়েকটি স্থান ভেঙে গেছে।
নদীর পানির তোড়ে সড়কের কিছু স্থান ধসে গেছে, আবার কোনো কোনো স্থান একেবারে ভেঙে গেছে। এখন সড়ক দিয়ে কোনো যানবাহন চলতে পারছে না।আবু সুফিয়ান, সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার বাসিন্দা
সদর উপজেলা সুরমা নদীর উত্তর পাড়ের সৈয়দপুর গ্রামের বাসিন্দা শিক্ষক এ কে এম শামসুল ইসলাম জানান, তাঁদের এলাকা থেকে জেলা শহরে যাতায়াতের প্রধান সড়কটি প্রায় ২০ দিন ধরে নিমজ্জিত। কোনো কোনো স্থানে সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পাহাড়ি ঢলের পানি এসে সড়ক ডুবিয়ে দেয়।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) সুনামগঞ্জ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এই প্রতিষ্ঠানের আওতাধীন গ্রামীণ সড়ক বেশি। বন্যায় এসব সড়ক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৯ জুলাই পর্যন্ত ৫০০ কিলোমিটার সড়কের ক্ষতি হওয়ার তথ্য পেয়েছে তারা। তবে অনেক সড়কে এখনো পানি থাকায় ক্ষয়ক্ষতির হিসাব নেওয়া যায়নি। সেতু–কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৩৮টি। এ পর্যন্ত পাওয়া ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক সংস্কার, সেতু ও কালভার্ট সংস্কার করতে ৯২৬ কোটি টাকার প্রয়োজন। তবে ক্ষতি ও ব্যয় আরও বাড়বে।
এখন পর্যন্ত যে হিসাব পাওয়া গেছে, সে অনুযায়ী ব্যয় ধরে একটি প্রস্তাব ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে।মো. আনোয়ার হোসেন, নির্বাহী প্রকৌশলী, এলজিইডি, সুনামগঞ্জ
সওজ সুনামগঞ্জের তথ্য অনুযায়ী, বন্যায় তাদের আওতাধীন ১১৫ কিলোমিটার সড়কের ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে ছাতক-সিলেট সড়কের ছাতক-গোবিন্দগঞ্জ অংশ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যার পানির প্রবল স্রোত গেছে সড়কের ওপর দিয়ে। এ সড়কের কয়েকটি স্থানের মাটি ও গাছপালা ধসে গেছে। সড়কের সুফিনগর, ছাতক পৌর শহরের ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের সামনের অংশ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়ক, সুনামগঞ্জ-তাহিরপুর সড়ক, সুনামগঞ্জ-জামালগঞ্জ সড়কের ক্ষতি হয়েছে। অনেক স্থানে সেতু ও কালভার্টেও সংযোগ সড়ক ধসে গেছে। কোনো কোনো স্থানে জরুরি কাজ করে সড়ক সচল রাখার চেষ্টা করছে তারা। ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদে সংস্কারে সম্ভাব্য ব্যয় হবে ৩২৫ কোটি টাকা।
ছাতক উপজেলা বাসিন্দা হারুনুর রশিদ বলেন, বন্যা হলেই প্রথম ছাতক-গোবিন্দগঞ্জ সড়ক তলিয়ে ছাতক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। এ সড়কের যেসব স্থান নিচু, সেখানে উঁচু করার পরিকল্পনা করতে হবে। না হলে ভোগান্তি থেকেই যাবে। বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা শক্তিয়ারখলা এলাকার বাসিন্দা মো. এরশাদ মিয়া বলেন, সুনামগঞ্জ-তাহিরপুর সড়কের শক্তিয়ারখলা এলাকা সবার আগে ঢলের পানিতে ডুবে। এখনো পানি আছে। মানুষ চরম ভোগান্তিতে আছে।
এলজিইডির সুনামগঞ্জ কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমরা যে হিসাব পেয়েছি, সেটা পূর্ণাঙ্গ নয়। এই ক্ষয়ক্ষতি আরও বাড়বে। তবে এখন পর্যন্ত যে হিসাব পাওয়া গেছে, সে অনুযায়ী ব্যয় ধরে একটি প্রস্তাব ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। আমাদের বলা হয়েছে, ২০২২ সালের বন্যার পর যে প্রকল্প নেওয়া হয়েছে, সেখান থেকেও আমরা সড়ক সংস্কার করতে পারি।’