‘তৃণমূল বিএনপি থেকে নয়, স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেব’

জামিন পাওয়ার পর সৈয়দ এ কে একরামুজ্জামান। গতকাল সোমবার দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া আদালত প্রাঙ্গণে
ছবি: প্রথম আলো

বিএনপি থেকে সদ্য বহিষ্কৃত কেন্দ্রীয় নেতা সৈয়দ এ কে একরামুজ্জামান তৃণমূল বিএনপি থেকে নয়, স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন বলে জানিয়েছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করব, এটা জানতে পেরে বিএনপি আমাকে বহিষ্কার করেছে। তবে বিএনপির এ সিদ্ধান্তের বিষয়ে আমার বলার কিছু নেই। এটা (নির্বাচন করা) আমার একান্তই ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত।’

একরামুজ্জামান বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ছিলেন। মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে কেন্দ্রীয় বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করেন। দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর আগে গতকাল সোমবার ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ (নাসিরনগর) আসন থেকে তিনি মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন।

একরামুজ্জামান নাসিরনগর উপজেলার বাসিন্দা ও আর এ কে সিরামিকসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। এর আগে একরামুজ্জামান অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী এবং নবম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেন।

দলীয় নেতা-কর্মীরা বলেন, সোমবার দুপুর ১২টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তৃতীয় আদালতে পুলিশের করা বিস্ফোরক আইনের একটি মামলায় হাজির হয়ে জামিনের আবেদন করেন একরামুজ্জামান। জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. রকিবুল হাসান শুনানি শেষে তাঁর জামিন আবেদন মঞ্জুর করেন। এরপর বেলা তিনটার দিকে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ (নাসিরনগর) আসন থেকে একরামুজ্জামান স্বতন্ত্র প্রার্থীর জন্য মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও জেলা বিএনপির বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির সদস্য জহিরুল হক বলেন, বিএনপি দলীয়ভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যাবে না। একরামুজ্জামান দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। তিনি দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছেন। দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে যাওয়ায় তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। দলের সিদ্ধান্তের বাইরে যিনিই যাবেন, সবার বিরুদ্ধে একই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে সৈয়দ এ কে একরামুজ্জামান বলেন, ‘আমি আশা করেছিলাম, বিএনপি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে আসবে। কিন্তু বিএনপি দলীয়ভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এবারও নির্বাচনে যাবে না। আর আমি স্বতন্ত্রপ্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করতেই পারি। কারণ, জাতীয়ভাবে নাসিরনগরের গুরুত্ব দেশের কাছে কতটুকু, আমি জানি না। তবে আমার কাছে নাসিরনগরের মানুষের অনেক আশা-আকাঙ্ক্ষা রয়েছে। আমি তাদের সেই আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে চাই। এই জনপদের মানুষের জন্য কিছু করতে চাই।’

সরকারের সঙ্গে তাঁর সমঝোতার হয়েছে—এমন গুঞ্জন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি সরকারের কাছ থেকে আশ্বাস পেয়েছি যে আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। তাই নির্বাচনে যাচ্ছি।’

দলীয় কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকে একরামুজ্জামান ৬০ হাজার ৭৩৪ ভোট পান। আওয়ামী লীগের প্রার্থী নৌকা প্রতীকে ১ লাখ ১ হাজার ১১০ ভোট পেয়ে জয়ী হন। এর আগে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সৈয়দ এ কে একরামুজ্জামান ধানের শীষ প্রতীকে পেয়েছিলেন ৮৫ হাজার ৩৮৮ ভোট। আওয়ামী লীগের প্রার্থী প্রয়াত ছায়েদুল হক নৌকা প্রতীকে ৯৯ হাজার ৮৮৬ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছিলেন।

উল্লেখ্য, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য বি এম ফরহাদ হোসেন। তিনি আওয়ামী লীগ থেকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পেয়েছেন।