ময়মনসিংহের ত্রিশালে ‘ফেসবুকে ঘোষণা দিয়ে’ দেওয়ানবাগ পীরের দরবারে হামলা ও ভাঙচুরের চেষ্টার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় হামলাকারী ও দরবারের লোকজনের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ইটপাটকেল নিক্ষেপে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চেষ্টায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। আজ রোববার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত এসব ঘটনা ঘটে।
এর আগে গত শুক্রবার নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলায় দেওয়ানবাগী পীরের দরবারে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, এরপরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে তৌহিদী জনতার ব্যানারে ছড়ানো হয়, ত্রিশালে দেওয়ানবাগ পীরের দরবার রোববার ভাঙা হবে। গতকাল শনিবার বিষয়টি ফেসবুকে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। ত্রিশাল উপজেলার আমিরাবাড়ি ইউনিয়নের গোপালপুর গ্রামে বাবে বরকত দেওয়ানবাগ শরীফ ১৯৯৮ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী, পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ফেসবুকে ঘোষণা দেওয়ায় গতকাল ভোর থেকে বিভিন্ন এলাকার মানুষ দেওয়ানবাগী পীরের দরবারে যেতে শুরু করেন। স্থানীয় কাশিগঞ্জ বাজার এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের আটকানোর চেষ্টা করে। কিন্তু বাধা উপেক্ষা করে জনতা বাবে বরকত দেওয়ানবাগ শরীফের ফটকের কাছে চলে যায়। বিক্ষুব্ধ ব্যক্তিরা দেওয়ানভাগ শরীফের প্রধান ফটক ও সীমানাপ্রাচীর ভেঙে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করেন। এ সময় ভেতরে থাকা দরবারের ভক্ত–অনুরাগীরা মরিচের গুঁড়া, স্প্রে, ইটপাটকেল ও মার্বেল নিক্ষেপ করে প্রতিহত করার চেষ্টা করেন। বাইরে থেকে বিক্ষুব্ধ জনতাও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। একপর্যায়ে বিক্ষুব্ধ জনতা উত্তেজিত হয়ে মূল ফটকের বাইরে থাকা দরবারের একটি ঘরে ভাঙচুর চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে বেলা দুইটার দিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিক্ষুব্ধ জনতাকে সরিয়ে দেয়।
এ ঘটনার পর উপজেলা প্রশাসন, সেনাবাহিনী ও পুলিশ স্থানীয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, বিএনপি, জামায়াতসহ ইসলামী দলগুলোর সঙ্গে এলাকায় বৈঠক করে। সভায় স্থানীয় মানুষদের পক্ষ থেকে তিন দফা দাবি জানানো হয়। এগুলো হচ্ছে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের সাইনবোর্ড এলাকায় সড়ক ও জনপথ বিভাগের জমি থেকে দেওয়ানবাগ শরীফের তোরণ সরাতে হবে। দেওয়ানবাগ শরীফের ভেতর অবস্থান করা মুরিদদের কাছ থেকে দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করতে হবে এবং ইসলামবিরোধী কার্যকলাপ বন্ধ রাখতে হবে।
সভায় উপস্থিত ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ত্রিশাল শাখার সভাপতি ইব্রাহিম খলিলুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, ‘দেওয়ানবাগ শরীফ রোববার ভাঙা হবে, যে যেখানে আছেন সবাই শরিক হন’—এমন একটি ফেসবুক স্ট্যাটাসের ভিত্তিতে মানুষ জড়ো হতে শুরু করেন। এর সঙ্গে ইসলামী দলগুলোর কোনো সম্পৃক্ততা নেই। ত্রিশালের বহিরাগত লোকজন এসে এটি করেছেন। তবে তাঁরা তিনটি দাবি জানিয়েছেন, সেগুলো প্রশাসন মেনে নিয়েছে।
দেওয়ানবাগ শরীফের মিডিয়া সেলের কো-অর্ডিনেটর সৈয়দ মেহেদী হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘স্থানীয় মৌলবাদীরাই হামলা চালিয়েছে। ইটপাটকেল নিক্ষেপে আমাদের ১২০ জন আহত হয়েছেন। তবে তাদের হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়নি।’ তিনি আরও বলেন, দীর্ঘদিন দরবারের কার্যক্রম চললেও এবারই এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। নারায়ণগঞ্জের দরবারে হামলার রেশ ধরে এখানেও হামলা হয়েছে। বর্তমানে মৌলবাদীরা মাজার ভেঙে দেওয়ার প্রক্রিয়া চালাচ্ছে।
ত্রিশাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জুয়েল মাহমুদ বলেন, বেলা দুইটার দিকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। সেখানে গিয়ে ও উপজেলা পরিষদে বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তি ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে বসে তাঁদের বোঝানো হয় যেন সবাই শান্তিপূর্ণ অবস্থানে থাকেন। কেউ যেন আইন হাতে তুলে না নেন। তিনি আরও বলেন, ফেসবুকের মাধ্যমে ছড়িয়ে এই হামলা হয়। হয়তো ফেক আইডি থেকে শুরু হয়ে পরে এটি ছড়িয়ে পড়ে। মানুষের যে তিনটি দাবি ছিল, সেগুলোর বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
ত্রিশাল থানার ওসি কামাল হোসেন বলেন, মানুষের অভিযোগ, দরবার শরীফে অসামাজিক কার্যকলাপ হয়। ভোর সাতটার দিকে লোকজন জড়ো হয়ে হামলার চেষ্টা করে। বেশি ক্ষয়ক্ষতি করতে পারেনি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে বেলা একটার দিকে। দফায় দফায় লোকজনকে বুঝিয়ে শান্ত করা হয়। এলাকায় পুলিশ মোতায়েন রাখা হয়েছে।