রোদঝলমলে সকালে পদ্মাপাড়ে কৃতী শিক্ষার্থীদের পদচারণ

রাজশাহীতে শিখো-প্রথম আলো জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থী সংবর্ধনায় অংশ নিতে জেলার ৩ হাজার ৭২ শিক্ষার্থী নিবন্ধন করেছে
ছবি: প্রথম আলো

রাজশাহীতে টানা কয়েক দিন ধরে মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছিল। আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকেও বলা হয়েছিল, এই মাসজুড়ে বৃষ্টি হবে। তবে আজ বুধবারের সকালটা একটু অন্য রকম। সকাল থেকেই আলোর ঝলকানি। এমন আলোঝলমলে সকালে পদ্মাপাড়ে পদচারণ ঘটেছে কৃতী শিক্ষার্থীদের। তারা সবাই চলতি বছর মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষায় (এসএসসি) কৃতিত্বের সঙ্গে কৃতকার্য হয়েছে। তাদের সংবর্ধনা দিতেই আয়োজন করা হয়েছে শিখো-প্রথম আলো জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থী সংবর্ধনা।

আজ সকালে রাজশাহী নগরের তালাইমারী শহীদ মিনার মাঠে এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। নগরের এই এলাকায় মাঠের পশ্চিম পাশেই প্রথম আলো ট্রাস্ট পরিচালিত আলোর পাঠশালা। ঠিক দক্ষিণেই ভরা পদ্মা।

সকাল সাড়ে আটটার পর থেকেই শিক্ষার্থীরা সংবর্ধনা অনুষ্ঠানস্থলে জমায়েত হতে শুরু করে। পদ্মাপাড়ের এই খোলা মাঠে এসে সবাই বেশ উচ্ছ্বসিত। কেউ সেলফি তুলতে ব্যস্ত। কেউ নিবন্ধনের আমন্ত্রণ কার্ড হাতে নিয়ে বুথের সামনে লাইনে দাঁড়িয়ে উপহারসামগ্রী গ্রহণ করছে। সবার মুখে হাসির ঝিলিক। পরস্পরের গলাগলি, জড়িয়ে ধরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ। কেউ দল বেঁধে এসেছে, কেউ কেউ অভিভাবককে সঙ্গী করেছে।
সকাল ১০টার দিকে বন্ধুসভার সদস্যদের জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় মূল আয়োজন। রাজশাহীর এই আয়োজনে অংশ নিতে ৩ হাজার ৭২ শিক্ষার্থী নিবন্ধন করেছে।

সারা দেশের ৬৪টি জেলায় প্রথম আলোর আয়োজনে ও শিক্ষার ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ‘শিখো’র পৃষ্ঠপোষকতায় জিপিএ-৫ উৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এবারের উৎসবটি পাওয়ার্ড বাই ‘বিকাশ’। সহযোগিতা করছে কনকর্ড গ্রুপ, ফ্রেশ, স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, ইউসিএসআই ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ শাখা ক্যাম্পাস, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, এটিএন বাংলা ও প্রথম আলো বন্ধুসভা।

আজ সকালে বাঘার মীরগঞ্জ গ্রাম থেকে চার শিক্ষার্থী আলিফ আহমেদ, মো. সাফায়েত হোসেন, মো. রাব্বি হোসেন, মো. আবিদ হাসান সংবর্ধনাস্থলে এসেছে। তারা একই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী। এখানে এসে সংবর্ধনার ভেন্যুতে ঘুরছিল তারা। প্রথম আলোকে তারা বলে, এখানে এসে তাদের খুব ভালো লাগছে। আগে থেকেই তারা শিখো-প্রথম আলো শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনার দেওয়ার কথা শুনেছে। এরপর এখানে আসার জন্য তাদের মধ্যেও একটা তাড়না কাজ করেছিল।

নওগাঁর নিয়ামতপুরে পড়েছে কাকলি সিকদার, সামীমা খাতুন ও কুহেলী সিকদার। এবার তারা উচ্চমাধ্যমিকে রাজশাহীর বিভিন্ন কলেজে ভর্তি হবে। তারা বলে, রাজশাহীতে টানা কয়েক দিন ধরে বৃষ্টি হচ্ছে। এ কারণে খুব চিন্তা হচ্ছিল  বৃষ্টি হলে অনুষ্ঠান হবে কী করে। কিন্তু সকাল থেকেই রোদ। কাকলি বলে, এখানে এসে সবার সঙ্গে দেখা হচ্ছে। ভালো লাগছে।

রাজশাহী নগরের গোরহাঙ্গা এলাকার বাসিন্দা নাসির উদ্দিন নাতনিকে নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন। কথা বলতেই বললেন, একসময় গ্রামে ভালো ফল করলে গ্রামের সবাই ভিড় করত। একটা অন্য রকম সংবর্ধনা হয়ে যেতে। মাঝে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নও করা হয়নি। এই আয়োজন শিক্ষার্থীদের কোমল মনে উৎসাহের সঞ্চার হবে।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. আবদুল মান্নান, প্রথম আলোর নির্বাহী সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফ, প্রথম আলোর রাজশাহীর নিজস্ব প্রতিবেদক আবুল কালাম মুহম্মদ আজাদ, স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলার সিনিয়র এক্সিকিউটিভ সালমুন ইকরাম প্রমুখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী তথাপি আজাদ।

রাজশাহী নগরের তালাইমারী শহীদ মিনার মাঠে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এসে নিজেদের উচ্ছ্বাসের কথা জানিয়েছে শিক্ষার্থীরা

প্রথম আলোর নির্বাহী সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফ বিশ্ব বিখ্যাত ব্যক্তিদের জীবনের গল্প শুনিয়ে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে উদ্দীপনামূলক বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, ‘সফলতার একাকিত্ব আছে। সফল হতে প্রতিযোগিতা করে অনেককে পেছনে ফেলতে হয়। তবে সার্থকতা হচ্ছে সফলতার চেয়ে বড়। বিল গেটসকে যিনি পড়িয়েছেন, তাঁর কত বড় সার্থকতা। সফল যে হয়, সে একা হয়, কিন্তু যে সার্থক সে সবাইকে নিয়েই হয়। তোমরা সফল হবে সার্থকতা অর্জনের জন্য। সফলতার পরের ধাপ হচ্ছে সার্থকতা। পড়াশোনার পাশাপাশি গান শোনা, গাছ লাগাতে হবে, প্রকৃতিকে ভালোবাসতে হবে। ভালো মানুষ হতে হবে।’

স্বাগত বক্তব্যে প্রথম আলোর রাজশাহী নিজস্ব প্রতিবেদক আবুল কালাম মুহম্মদ আজাদ বলেন, ‘পাশেই প্রমত্ত পদ্মা। আজকের অনুষ্ঠানের জন্য এই স্থান বেছে নেওয়া হয়েছে। বিশাল কিছু না দেখলে বড় হওয়া যায় না। আমরা চেয়েছি, শিক্ষার্থীরা পদ্মা নদীর দিকে তাকাবে। এর বিশালতা অনুভব করবে। পদ্মার মতো দুর্বার, উত্তাল হবে। ভালো মানুষ হবে। আজকের দিন আনন্দের, উৎসবের, বন্ধু বাড়ানোর দিন।’

বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মান্নান শিক্ষার্থীদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তুলে ধরেন। যুদ্ধ-সংগ্রামের বর্ণনা দেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের সময়ে এত সুযোগ-সুবিধা ছিল না। আজকে তোমরা সেই সুযোগ পেয়েছ। ডিজিটাল বাংলাদেশের শেষ দিকে। এখন স্মার্ট বাংলাদেশ সামনে। এর কারিগর তোমরাই। তোমরাই সোনার বাংলা গড়বে। তোমরা ভালো মানুষ হয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করবে।’

সংবর্ধনা অনুষ্ঠানজুড়ে রাজশাহী শিল্পকলা একাডেমির শিল্পীসহ স্থানীয় শিল্পীরা নাচগান পরিবেশনা করেন। অনুষ্ঠানের শেষে থাকছে বাঁধন চন্দ্র মোদকের পরিবেশনা।