সখীপুরে বন বিভাগের উচ্ছেদের বিরুদ্ধে বিএনপির মশালমিছিল

টাঙ্গাইলের সখীপুরে আটিয়া বন অধ্যাদেশ বাতিলের দাবি ও বন বিভাগের উচ্ছেদের বিরুদ্ধে উপজেলা বিএনপি মশাল মিছিল বের করে। শুক্রবার সন্ধ্যায় পৌর শহরের তালতলা চত্বরে
ছবি: প্রথম আলো

আটিয়া বন (সংরক্ষণ) অধ্যাদেশ, ১৯৮২ বাতিলের দাবি এবং বন বিভাগের বিরুদ্ধে বাড়িঘর উচ্ছেদের প্রতিবাদে টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলা বিএনপি মশালমিছিল ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে। আজ শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় সখীপুর পৌর শহরের প্রাণকেন্দ্র তালতলা চত্বরে এ কর্মসূচি পালন করা হয়।

এর আগে বিকেলে উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে একই দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ কর্মসূচি পালিত হয়। আগামীকাল শনিবার বিকেলে বিএনপির ১১টি ইউনিয়ন ও পৌরসভা শাখার সম্মিলিতভাবে শহরের তালতলা চত্বরে একই দাবিতে প্রতিবাদ সমাবেশ হবে। প্রতিবাদ সমাবেশ কর্মসূচি সফল করতে আজ সারা দিন উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে মাইকিং করা হয়েছে।

মশালমিছিল শেষে তালতলা চত্বরে আয়োজিত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা শাজাহান সাজু। বক্তব্য দেন পৌর বিএনপির সভাপতি নাসির উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক মীর আবুল হাশেম আজাদ, উপজেলা যুবদলের সভাপতি ফরহাদ ইকবাল, সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন, উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক একবর হোসেন প্রমুখ।

সমাবেশে উপজেলা বিএনপির সভাপতি শাজাহান সাজু বলেন, ‘একই দেশে বনের দুই আইন থাকতে পারে না। সখীপুরের মানুষের মরণ ফাঁদ আটিয়া বন অধ্যাদেশ-৮২ বাতিল না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন ও কর্মসূচি চলতেই থাকবে। দেহে একদিন বিন্দু রক্ত থাকতে একটি বাড়িও ভাঙতে দেওয়া হবে না।’

সখীপুরে বন বিভাগের বিরুদ্ধে বাড়িঘর উচ্ছেদের প্রতিবাদে গজারিয়া ইউনিয়নের কীর্তনখোলা বাজারে স্থানীয় বিএনপির বিক্ষোভ মিছিল। শুক্রবার বিকেলে

তিন দশক ধরে এ অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে বিভিন্ন সময় আন্দোলন করেছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা। সম্প্রতি বন বিভাগের নেতৃত্বে যৌথ বাহিনী টাঙ্গাইলের বিভিন্ন উপজেলায় বনের জমিতে গড়ে ওঠা বাড়িঘর ও অবৈধ স্থাপনায় উচ্ছেদ অভিযান চালায়। আগামী রোববার থেকে সখীপুরেও উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে—এই মর্মে বন বিভাগ গতকাল বৃহস্পতিবার দিনব্যাপী মাইকিং করে। পরে বিকেলে উপজেলা বিএনপি দলীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত জরুরি সভায় বন বিভাগের উচ্ছেদের প্রতিবাদে আজ থেকে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত হয়।

উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান সবুর রেজা জানান, আজ বিকেলে ইউনিয়ন বিএনপির আয়োজনে কাকড়াজান ইউনিয়নের তৈলধারা বাজারে, বহেরাতৈল ইউনিয়নের বহেরাতৈল বাজারে, গজারিয়া ইউনিয়নের কীর্তনখোলা বাজারে, যাদবপুর ইউনিয়নের নলুয়া বাজারে, হাতীবান্ধা ইউনিয়নের তক্তারচালা বাজারে, কালিয়া ইউনিয়নের কচুয়া বাজারে, বড়চওনা ইউনিয়নের বড়চওনা বাজারে, দারিয়াপুর ইউনিয়নের শোলাপ্রতিমা স্টেশনে, হতেয়া-রাজাবাড়ী ইউনিয়নের হতেয়া বাজারে, বহুরিয়া ইউনিয়নের কালিদাস বাজারে একযোগে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ কর্মসূচি পালিত হয়।

এ প্রসঙ্গে টাঙ্গাইল বন বিভাগের বহেরাতৈল রেঞ্জ কর্মকর্তা আমিনুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘উপজেলার বহেড়াতৈল রেঞ্জের ৫টি বিট কার্যালয়ের আওতায় ২০ হাজার ৮৭৮ দশমিক ৭৬ একর গেজেটভুক্ত বনভূমি রয়েছে। এর মধ্যে জবরদখলে আছে ৩ হাজার ২৪৪ দশমিক ৫৬ একর। হতেয়া রেঞ্জের ৫টি বিটের আওতায় ১৪ হাজার ৮৬৮ দশমিক ৯৮ একর গেজেটভুক্ত বনভূমির ৬ হাজার ৫৪৭ দশমিক ২৩ একরই জবরদখলে রয়েছে। এ ছাড়া বাঁশতৈল রেঞ্জের ৫টি বিটের মধ্যে শুধু নলুয়া বিটটি সখীপুর উপজেলায় পড়েছে। এই বিটের আওতায় ৪ হাজার ৬৭৯ একর বনভূমির মধ্যে ২ হাজার ৪০০ একর, অর্থাৎ অর্ধেক জমিই বেদখলে। উপজেলার সীমানার মধ্যে ১১টি বিটে প্রায় ৪০ হাজার বনভূমির মধ্যে প্রায় ১২ হাজার ভূমি বেদখলে, অর্থাৎ সখীপুরে মোট বনভূমির প্রায় এক–তৃতীয়াংশ বন বিভাগের দখলে নেই। এ কারণে সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বনভূমি উদ্ধার করে বনায়ন করার। তবে আমরা বনের জমিতে থাকা পুরোনো বাড়িঘর, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মাদ্রাসা উচ্ছেদ করব না।’ বিএনপির কর্মসূচি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।’