মামলা
মামলা

হিজলায় মাছঘাট লুটের মামলার আসামি তালিকা থেকে সাংবাদিকদের বাদ দেওয়ার আবেদন বাদীর

বরিশালের হিজলা উপজেলায় ১০টি মাছঘাট লুট করার অভিযোগে হওয়া মামলা থেকে স্থানীয় ছয় সাংবাদিকের নাম বাদ দেওয়ার আবেদন করেছেন বাদী। মামলায় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সাংবাদিকদের আসামি করায় সমালোচনার সৃষ্টি হলে গতকাল বুধবার রাতে বাদী আবদুল গাফফার তালুকদার থানায় ওই আবেদন করেন।

আবদুল গাফফার হিজলা উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক। গতকাল থানায় দায়ের করা মামলায় তিনি অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগ নেতা নজরুল ইসলামের নেতৃত্বে গত ২৮ জুলাই মেঘনা নদীতীরের জানপুর, চরকিল্লা, খালিসপুর, কেউরিয়া, সাওয়া-সৈয়দপুর ও পূর্বমান্দা এলাকার আবদুল গাফফারের ১০টি মাছঘাট ও আড়তে হামলা চালানো হয়। এ সময় হামলাকারী ব্যক্তিরা কুপিয়ে-পিটিয়ে বেশ কয়েকজনকে আহত করেন। পরে এসব আড়ত ও ঘাট থেকে অর্ধকোটি টাকা, সাতটি মাছ ধরার ট্রলার, কয়েকটি জেনারেটরসহ অন্য মালামাল লুট করে নিয়ে যান।

নজরুল ইসলাম হিজলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও হিজলা-গৌরাব্দি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান। মামলায় তাঁকে প্রধান আসামি করে মোট ১০০ জনকে আসামি করা হয়। এর মধ্যে স্থানীয় ছয় সাংবাদিকের নামও উল্লেখ করা হয়। এ ঘটনায় স্থানীয় সাংবাদিকদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এ নিয়ে গতকাল প্রথম আলো অনলাইনে ‘হিজলায় ১০টি মাছঘাট লুটের মামলা, আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে ৬ সাংবাদিক আসামি’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

=স্থানীয় সাংবাদিকেরা জানান, এই প্রতিবেদন প্রকাশের পর গতকাল গভীর রাতে মামলার বাদী বিএনপি নেতা আবদুল গাফফার তালুকদার স্থানীয় কয়েকজন সাংবাদিককে নিয়ে হিজলা থানায় যান। এ সময় তিনি মামলায় ছয় সাংবাদিককে আসামির তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার আবেদন করেন।

আবদুল গাফফার তালুকদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘মামলায় ছয় সাংবাদিককে আসামি করা হয়েছে, সেটা আমি জানতাম না। যাঁদের কাছে মামলার অভিযোগ লেখার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, তাঁরা ভুল করে ওই ছয়জনের নাম আসামি তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন। সেটা আপনাদের মাধ্যমে জানতে পেরে আমি থানায় গিয়ে ওই ছয়জনের নাম আসামির তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার জন্য ওসির কাছে আবেদন করেছি। আশা করি, এখন আর ভুল–বোঝাবুঝি থাকবে না।’

হিজলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম প্রথম আলোকে বলেন, মামলায় ছয় সাংবাদিককে আসামি করা হয়েছে। বাদী ওই ছয়জনকে বাদ দেওয়ার জন্য আবেদন করেছেন। এখন পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

স্থানীয় মৎস্য ব্যবসায়ীদের একটি সূত্র জানায়, মেঘনা নদীর ২২ কিলোমিটার অংশ হিজলা উপজেলার পাশ দিয়ে বয়ে গেছে। এই অংশে অসংখ্য টংঘর গড়ে ইলিশ ধরা ও বেচাকেনার কাজ চলে। বছরে কয়েক শ কোটি টাকার মাছ বেচাকেনা হয় এই ঘাটগুলোয়। এলাকাটি দেশের ষষ্ঠ ইলিশের অভয়ারণ্য। এই বিশাল মাছের সাম্রাজ্য আগে নিয়ন্ত্রণ করতেন স্থানীয় তিন আওয়ামী লীগ নেতা। গত ৫ আগস্টের পর আওয়ামী লীগের নেতারা আত্মগোপনে চলে যান। এরপর বিএনপির স্থানীয় তিন নেতা এসব মাছঘাটের নিয়ন্ত্রণ নেন।

হিজলা প্রেসক্লাবের সভাপতি দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমরা কখনো কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত নই। তারপরও সাংবাদিকদের রাজনৈতিক মামলায় জড়ানোর কারণ কী, তা জানি না। এটা মতপ্রকাশের স্বাধীনতার প্রতি চরম আঘাত। তারপরও মামলার আসামি থেকে সাংবাদিকদের নাম বাদ দেওয়ার আবেদন করেছেন বাদী, এটা ইতিবাচক।’