কুষ্টিয়ার খোকসায় আওয়ামী লীগ নেতাকে নির্যাতনের ঘটনায় জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতির বিরুদ্ধে মানববন্ধন। শুক্রবার বেলা ১১টায় খোকসা বাসস্ট্যান্ড এলাকায়
কুষ্টিয়ার খোকসায় আওয়ামী লীগ নেতাকে নির্যাতনের ঘটনায় জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতির বিরুদ্ধে মানববন্ধন। শুক্রবার বেলা ১১টায় খোকসা বাসস্ট্যান্ড এলাকায়

খোকসায় আ.লীগ নেতাকে নির্যাতন, জেলা সভাপতির গ্রেপ্তারের দাবিতে বিক্ষোভ

কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আলমগীর হোসেনকে তুলে নিয়ে বাড়িতে আটকে রেখে নির্যাতনের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেছেন স্থানীয় নেতা-কর্মীরা। কর্মসূচি থেকে অভিযুক্ত জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সদর উদ্দিন খানকে দল থেকে বহিষ্কার ও গ্রেপ্তারের দাবি জানানো হয়।

আজ শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে খোকসা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় এ বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধনের আয়োজন করে উপজেলা আওয়ামী লীগের একাংশ। খোকসা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বাবুল আখতারের নেতৃত্বে হাজারো নেতা-কর্মী ঘণ্টাব্যাপী ব্যানার-ফেস্টুন হাতে নিয়ে মানববন্ধন করেন।

এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সদর উদ্দিন খান নিজ বাড়িতে আওয়ামী লীগের নেতা আলমগীর হোসেনকে আটকে নির্যাতন করেন বলে অভিযোগ ওঠে। ঘটনার পর খোকসা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তিনি প্রাথমিক চিকিৎসা নেন এবং সন্ধ্যায় খোকসা থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেন। আলমগীরকে ভয় দেখিয়ে মোটরসাইকেলে তুলে নেওয়ার ৩ মিনিটের একটি ভিডিও ফুটেজ প্রথম আলোর কাছে এসেছে।

আলমগীরের অভিযোগ, আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে সদর উদ্দিন খানের ভাই রহিম খান চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করবেন। নির্বাচনে তাঁর পক্ষে কাজ করতে বলেন সদর উদ্দিন খান। এ ছাড়া বর্তমান চেয়ারম্যান ও খোকসা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বাবুল আক্তারের পক্ষে নির্বাচন করতে নিষেধ করেন। সেটি না মানায় তাঁকে তুলে নিয়ে নির্যাতন করা হয়।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সদর উদ্দিন খান গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ ধরনের ঘটনা আমার জানা নাই। আমি বাড়িতে ছিলাম না। উপজেলা নির্বাচনের তফসিল হয়েছে। এখন কত কথা শোনা যাবে, তাঁর সব কথা তো সত্যি নয়।’

কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আলমগীর হোসেন। বৃহস্পতিবার খোকসা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে

ওই ঘটনার প্রতিবাদে আজ খোকসা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ চত্বর থেকে উপজেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের একাংশ বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলটি কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী সড়কের খোকসা বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে মানববন্ধন করে। নেতা-কর্মীরা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সদর উদ্দিন খান ও তাঁর ভাই-ভাতিজার নামে করা অভিযোগটি দ্রুত মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করে আসামিদের গ্রেপ্তারের দাবি জানান।

মানববন্ধনে ভুক্তভোগী আলমগীর হোসেন অভিযোগ করে বলেন, থানায় লিখিত অভিযোগ দিলেও পুলিশ প্রধান আসামি সদর উদ্দিন খানের নাম বাদ দিয়ে মামলা রেকর্ডের চেষ্টা করছে। পুলিশ যদি সদর উদ্দিন খানকে বাদ দেয়, তাহলে তিনি আর মামলা করবেন না। তাঁকে তুলে নিয়ে আটকে নির্যাতনের ঘটনায় দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা ও আল্লাহর ওপর বিচারের ভার ছেড়ে দেবেন।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বাবুল আখতার বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকে খোকসায় সদর উদ্দিন খান আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ওপর অমানুষিক নির্যাতন শুরু করেন। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তাঁর ভাই রহিম খানকে বিজয়ী করতে তিনি এ অপকর্ম হাতে নিয়েছেন। এটা নিয়ন্ত্রণ করা না–করা গেলে ভবিষ্যতে হত্যার মতো ঘটনা ঘটবে। এর দায়ভার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নিতে হবে। তিনি বলেন, ‘অপকর্মের কারণে সদর উদ্দিন খানকে দল থেকে বহিষ্কারের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি। তিনি যে অপকর্ম করেছেন, তার বিচার করতে হবে। তাঁকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করতে হবে। তা না হলে খোকসাতে আওয়ামী লীগ করার লোক খুঁজে পাওয়া যাবে না। আলমগীরের মামলা দ্রুত রুজু করা হোক। অন্যথায় থানা ঘেরাও করা হবে।’

মানববন্ধনে অন্যদের মধ্যে বেতবাচড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম, আমবাড়িয়া ইউপির চেয়ারম্যান আকমল হোসেন, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ইমরান হোসেন, সাধারণ সম্পাদক মুনসী তাজবির আহম্মেদ প্রমুখ বক্তব্য দেন।

দলীয় সূত্র জানায়, সম্প্রতি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বাবুল আকতারের এক পথসভায় বক্তব্য দেওয়ার সময় আলমগীর হোসেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সদর উদ্দিন খানকে প্রতিহত করার ঘোষণা দেন। ওই ক্ষোভ থেকে তাঁকে তুলে নিয়ে নির্যাতনের ঘটনা ঘটতে পারে বলে নেতা-কর্মীরা ধারণা করছেন।

খোকসা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আননূর যায়েদ প্রথম আলোকে বলেন, পুলিশ অভিযোগটি নিয়ে বিস্তারিত তদন্ত করছে। দ্রুত তদন্ত করে এ ঘটনায় ব্যবস্থা নেবে পুলিশ।