শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও মিথ্যাচারের অভিযোগে বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য শরীফ মো. আনিছুর রহমানকে দল থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। গতকাল রোববার দিবাগত রাত পৌনে ১টায় নগর আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক হেমায়েত উদ্দিন সেরনিয়াবাত স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বরিশাল সিটি করপোরেশনের ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর আনিছুর রহমান এবারও কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তিনি সিটি করপোরেশনের বর্তমান মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাদিক আবদুল্লাহর বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া ১০ জন কাউন্সিলরদের মধ্যে অন্যতম। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রক্রিয়ার শুরু থেকেই এই ১০ কাউন্সিলর আবুল খায়ের আবদুল্লাহ ওরফে খোকন সেরনিয়াবাতের পক্ষে অবস্থান নেন। তাঁরা মেয়র পদে খায়ের আবদুল্লাহর পক্ষে দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ ও জমা দিয়েছিলেন।
নগর আওয়ামী লীগের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে, শরীফ মো. আনিছুর রহমানকে সংগঠনবিরোধী কার্যকলাপের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে এবং শতভাগ মিথ্যা কথা প্রচার করায় বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যপদ থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হলো।
বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তালুকদার মো. ইউনুস গতকাল রাত পৌনে ১২টার দিকে তাঁর ফেসবুক পোস্টে এই বহিষ্কারের বিষয়ে জানান। সেখানে তিনিও সংগঠনবিরোধী কার্যকলাপের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ ও মিথ্যাচারের বিষয়টি উল্লেখ করেন।
এর আগে গতকাল বিকেলে বরিশাল নগরের ২৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সিটি নির্বাচনে ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী মো. সাফিন মাহামুদ সংবাদ সম্মেলনে আনিছুর রহমান এবং তাঁর লোকজনের বিরুদ্ধে প্রচার-প্রচারণায় বাধা দান ও ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগ আনেন। প্রায় একই সময়ে নিজ নির্বাচনী কার্যালয়ে সাফিন মাহামুদের বিরুদ্ধে নৌকার পোস্টার ছেঁড়াসহ আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার অভিযোগ তুলে সংবাদ সম্মেলন করেন আনিছুর রহমান।
সংবাদ সম্মেলনে আনিছুর রহমান সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র আবুল খায়ের আবদুল্লাহকে পরাজিত করার লক্ষ্যে আর্থিক লেনদেন, প্রার্থীর বিরুদ্ধে দলীয় বিভিন্ন ব্যক্তির অবস্থান তুলে ধরার পাশাপাশি জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতির সম্পর্কে নানা মন্তব্য করেন। আনিছুর রহমান আরও অভিযোগ করেন, তিনিসহ সিটি করপোরেশনের বর্তমান পরিষদের ১০ জন কাউন্সিলর বর্তমান মেয়র সাদিক আবদুল্লাহর পক্ষ ত্যাগ করে দূরে চলে যাওয়ায় তাঁদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে এবারের নির্বাচনে দল থেকে কাউন্সিলর প্রার্থী দাঁড় করানো হয়েছে।
বহিষ্কারের সিদ্ধান্তের বিষয়ে নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম জাহাঙ্গীরের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তালুকদার মো. ইউনুস আজ সোমবার প্রথম আলোকে বলেন, আনিছুর রহমান দলের শৃঙ্খলাবিরোধী কার্যকলাপে জড়িত থাকায় সদস্যপদ থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। তিনি দলের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করেছেন। এ জন্য তাঁর বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
কী ধরনের মিথ্যাচার করেছেন, এ প্রশ্নের জবাবে তালুকদার মো. ইউনুস বলেন, ‘দলের নেতাদের বিরুদ্ধে তিনি (আনিছুর) কুৎসা করেছেন, মিথ্যা, কাল্পনিক অভিযোগ তুলে বক্তব্য দিয়েছেন, যা দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গ করেছে।’
বহিষ্কারের বিষয়ে জানতে চাইলে শরীফ মো. আনিছুর রহমান আজ সকালে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি সত্য বলায় আমাকে দল থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। আমরা যে ১০ জন কাউন্সিলর মেয়র সাদিক আবদুল্লাহর পক্ষ ত্যাগ করেছিলাম, সেই ১০টি ওয়ার্ডেই আওয়ামী লীগের প্রার্থী করা হয়েছে আমাদের জব্দ করার জন্য। এখন আপনারা বোঝেন, এরা নির্বাচন করার টাকা পায় কোথায়? তাঁদের আসল উদ্দেশ্য কী? এটা প্রকাশ করাতেই আমাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তবে রাজনীতি করতে হলে বহিষ্কার-তিরস্কার থাকবে। তাতে কিছুই আসে যায় না।’