রুমিন ফারহানা আতঙ্কে আ.লীগ দিশাহারা

হাফিজুর রহমান মোল্লা
হাফিজুর রহমান মোল্লা

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির সদস্য, ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার সাবেক মেয়র জেলার প্রবীণ রাজনীতিবিদ হাফিজুর রহমান মোল্লা। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল ও আশুগঞ্জ) আসনের উপনির্বাচনে বিএনপির দলছুট নেতা উকিল আবদুস সাত্তার ভূঁইয়ার সঙ্গে দীর্ঘদিন তিনি রাজনীতি করেছেন। এই উপনির্বাচনের সার্বিক পরিস্থিতির বিষয়ে বিএনপির অবস্থান নিয়ে প্রথম আলো কথা বলেছে তাঁর সঙ্গে।

প্রশ্ন

প্রথম আলো: আশুগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী আবু আসিফ আহমেদ গত শুক্রবার থেকে ‘নিখোঁজ’। বিএনপির কাউকে এ বিষয়ে কিছু বলতে বা তাঁর পাশে দাঁড়াতে কিংবা কোনো কর্মসূচি দিতে দেখা যায়নি কেন?

হাফিজুর রহমান মোল্লা: আজকে পত্রিকা পড়ে এটি জানতে পারলাম। তিনি আমাদের দল থেকে পদত্যাগ করেছেন। দল তাঁকে বহিষ্কৃতও করেছে। আওয়ামী লীগ স্বতন্ত্র প্রার্থী সাত্তার সাহেবকে (উকিল আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া) নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে জনগণকে পরিচ্ছন্ন নির্বাচন দেখানো জন্য। পরিচ্ছন্ন নির্বাচনের আকাশে যে মেঘ, আকাশ যে অন্ধকার, তারা তা তাকিয়ে দেখে না। গণতন্ত্রকে হত্যা করার যত প্রক্রিয়া আছে, তারা সবই করছে।

প্রশ্ন

প্রথম আলো: আবু আসিফ কি আসলেই নিখোঁজ, নাকি ভয়ে আত্মগোপনে। আপনার কী মনে হয়?

হাফিজুর রহমান মোল্লা: যে লোকটি তিন দিন ধরে ঘরে নেই, তাঁকে তো নিশ্চয় গুম করা হয়েছে। কিংবা রাষ্ট্রীয় পর্যায় থেকে তাঁকে বাধাগ্রস্ত করে নিখোঁজ করা হয়েছে। আবু আসিফের মতো লোক তিন দিন ধরে গায়েব। নির্বাচন কমিশন যদি মানুষের নিরাপত্তা দিতে না পারে, সেখানে তাদের ব্যর্থতা স্পষ্ট। যখন একজন মনোনয়নপত্র দাখিল করেন, নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব তাঁকে নিরাপত্তা দেওয়া। যেখানে কোনো নিরাপত্তা নেই, সেখানে কী ভোট হবে, সেটা আমরা বুঝি।

প্রশ্ন

প্রথম আলো: আবু আসিফ দীর্ঘদিন বিএনপি করেছেন। তাঁর প্রতি বিএনপি কেন ন্যূনতম সমবেদনা দেখাল না?

হাফিজুর রহমান মোল্লা: পদত্যাগ করলে দল তো আর তাঁর পাশে থাকবে না। দল তো একটি কমান্ডের মধ্যে চলে। আমাদের একটি কমান্ড আছে। এর বাইরে আমরা যেতে পারি না। সীমা অতিক্রম করতে পারি না। দলের বাইরে গিয়ে যদি কেউ কিছু করতে চাই, তাঁকে দলত্যাগ করতে হবে। নির্বাচন করা আসিফের ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। এখন সে কী করছে না করছে, সেটি তাঁর বিষয়। আসিফ ও সাত্তার সাহেবের ক্ষেত্রে আমাদের কিছুই বলার নেই। আমরা বলছি, গণতন্ত্রের প্রক্রিয়ায় সাত্তার সাহেবকে ভোট দেওয়া বেআইনি হবে। সেই হিসেবে জনগণকে ভোটকেন্দ্রে না যাওয়ার আহ্বান করছি। কারণ, এখানে গণতন্ত্রের প্রক্রিয়া নেই।

প্রশ্ন

প্রথম আলো: বিএনপি থেকে আবদুস সাত্তারকে প্রতিহত করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু মাঠে বিএনপির নেতা-কর্মী কেউই নেই।

হাফিজুর রহমান মোল্লা: মল্লযুদ্ধে প্রতিহতের ঘোষণা দেওয়া হয়নি। জনগণকে আহ্বান করেছি, যেন ভোটকেন্দ্রে না যান। এতে প্রমাণিত হবে মানুষ এই নির্বাচন চায় না। সবচেয়ে বড় কথা হলো, বর্তমান সরকার রুমিন (বিএনপির সংরক্ষিত আসনের সাবেক সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানা) আতঙ্কে। রুমিন ফারহানার আতঙ্কে আওয়ামী লীগ আজকে দিশাহারা।

প্রশ্ন

প্রথম আলো: ১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত রুমিন ফারহানাকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েছে আওয়ামী লীগ...

হাফিজুর রহমান মোল্লা: এগুলো পেশিশক্তির ব্যাপার। এটি নির্বাচিত সরকার না। জনগণের প্রতিনিধি নয় তারা। মধ্যরাতের নির্বাচনে প্রশাসনের মাধ্যমে তারা এসেছে। প্রশাসনের ওপর তারা নির্ভর করে। তারা যা মন চায়, তাই করছে। আজকে একে গায়েব করবে, কালকে ওরে গায়েব করবে, ওকে ফুটা করে দেবে—এসবই তো হচ্ছে। আমরা মনে করি না আবদুস সাত্তারকে নিয়ে ভাবনার কিছু আছে। তিনি আমাদের দল থেকে চলে গেছেন। এটি তাঁর ব্যক্তিগত ব্যাপার। তাঁকে নিয়ে আবার নতুন করে এই শাসনে প্রতিষ্ঠিত করে রুমিনকে দমাবে, সেই শক্তি সরকারের নেই। রুমিন রুমিনই।

প্রশ্ন

প্রথম আলো: বিএনপির সাবেক অনেক নেতা আবদুস সাত্তারের সঙ্গে আছেন।

হাফিজুর রহমান মোল্লা: সাত্তারের সঙ্গে নির্বাচনে যাঁরা আছেন, তাঁরা দলছুট নেতা। দলের ভেতরে তাঁদের অস্তিত্ব নেই। দলছুট নেতারা যে কাজ করবেন, এসব নিয়ে দলের মাথাব্যথা নেই। দলের ভেতরে থেকে যাঁরা সাত্তারের পক্ষে কাজ করবেন, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

প্রশ্ন

প্রথম আলো: আবদুস সাত্তারের নির্বাচন নিয়ে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠন কী ভাবছে?

হাফিজুর রহমান মোল্লা: সাত্তার সাহেব তাঁর জীবনের চরম কোনো ভুল যদি করে থাকেন, এটিই করেছেন। তাঁর রাজনৈতিক ইতিহাসে যদি কোনো কলঙ্কজনক অধ্যায় থেকে থাকে, সেটি হলো বিএনপি থেকে পদত্যাগ করে নির্বাচনে যাওয়া। তাঁর শেষটা ভালো হলো না।