যশোর সদর উপজেলার আব্দুলপুর মাঠের নিজের খেতে ফুলকপির গাছের পরিচর্যা করছেন কৃষক আমিন উদ্দিন
যশোর সদর উপজেলার আব্দুলপুর মাঠের নিজের খেতে ফুলকপির গাছের পরিচর্যা করছেন কৃষক আমিন উদ্দিন

রঙিন ফুলকপিতে বেশি লাভ, খুশি কৃষক

যশোর সদর উপজেলার দুই হেক্টর জমিতে এবার রঙিন ফুলকপি চাষ করা হয়েছে। গত বছর প্রথমবার এই কপি চাষ করে সফল হয়েছেন আমিন উদ্দিন।

একই মাঠে কাছাকাছি ফুলকপির দুটি খেত। খেত দুটিতে সবুজ পাতার ভেতর থেকে উঁকি দিচ্ছে রঙিন ফুলকপি। একটি খেতের ফুলকপির রং গোলাপি, অপরটির হলুদ। বাহারি রঙের ফুলকপি দুটির নামও সুন্দর। গোলাপি রঙের ফুলকপির নাম ভ্যালেন্টিনা আর হলুদ রঙের ফুলকপির নাম ক্যারোটিনা।

নতুন দুটি জাতের এই রঙিন ফুলকপি প্রথমবার চাষ করে সফল হয়েছেন কৃষক আমিন উদ্দিন (৪৩)। যশোর সদর উপজেলার পোলতাডাঙ্গা গ্রামে বাড়ি আমিন উদ্দিনের। উপজেলার আবদুলপুর মাঠে তিনি এই ফুলকপির চাষ করেছেন।

উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্র জানায়, দুটি জাতের ফুলকপির মধ্যে গোলাপি রঙের ফুলকপির নাম ভ্যালেন্টিনা ও হলুদ রঙের ফুলকপির নাম ক্যারোটিনা। সদর উপজেলার এবার দুই হেক্টর জমিতে এই দুই জাতের ফুলকপি চাষ হয়েছে। সাদা ফুলকপির চেয়ে এই দুই জাতের রঙিন ফুলকপিতে পুষ্টিগুণ বেশি। দেখতেও সুন্দর। গতানুগতিক সাদা রঙের ফুলকপির চেয়ে রঙিন ফুলকপির বাজারমূল্য বেশি।

গত সোমবার দুপুরে আবদুলপুর মাঠে আমিনের খেত দুটিতে গিয়ে দেখা গেছে, কিছুটা লম্বা সবুজ পাতার আড়ালে ফুটে আছে রঙিন ফুলকপি। একটি খেতে ফুটে আছে গোলাপি রঙের ফুলকপি এবং অপরটিতে হলুদ রঙের ফুলকপি।

খেতে দাঁড়িয়ে আমিন উদ্দিন জানান, তিনি গত বছর ভারত থেকে ১১ হাজার টাকায় ভ্যালেন্টিনা ও ক্যারোটিনা জাতের ফুলকপির বীজ আনেন। গত বছর তিনি ভ্যালেন্টিনা জাতের বীজ থেকে তিন হাজার চারা উৎপাদন করেন। পরীক্ষামূলকভাবে তিন শতক জমিতে ৪০০ চারা লাগান। বাকি চারা তিনি পাঁচ টাকা করে বিক্রি করে দেন। তিনি জানান, সব মিলিয়ে তিন শতক জমিতে তাঁর চার হাজার টাকা খরচ হয়। তিনি ২৮ হাজার টাকার ভ্যালেন্টিনা জাতের ফুলকপি বিক্রি করেন।

আমিন উদ্দিন আরও জানান, এবার তিনি সাড়ে ১৬ শতক জমিতে ২ হাজার ভ্যালেন্টিনা এবং ১০ শতক জমিতে ১ হাজার ৩০০টি ক্যারোটিনা জাতের ফুলকপির চারা লাগিয়েছেন। এতে তাঁর খরচ হয়েছে ২৭ হাজার টাকা। ভ্যালেন্টিনা জাতের ফুলকপি দুই থেকে আড়াই কেজি এবং ক্যারোটিনা জাতের ফুলকপি এক কেজি থেকে এক কেজি ২০০ গ্রাম পর্যন্ত ওজন হয়েছে। তিনি প্রতিটি ভ্যালেন্টিনা ৭০ থেকে ৮০ টাকায় এবং ক্যারোটিনা ৪০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি করছেন।

এ পর্যন্ত তিনি ৩০ হাজার টাকা ভ্যালেন্টিনা জাতের ফুলকপি এবং ১৫ হাজার টাকার ক্যারোটিনা জাতের ফুলকপি বাজারে বিক্রি করেছেন। এখনো খেতে যে ফুলকপি আছে, তাতে তিনি ২০ হাজার টাকা ভ্যালেন্টিনা জাতের ফুলকপি এবং ৩৫ হাজার টাকা ক্যারোটিনা জাতের ফুলকপি বিক্রি করতে পারবেন।

এই দুই জাতের চাষের ফুলকপি চাষের পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে আমিন উদ্দিন বলেন, ‘ভ্যালেন্টিনা ও ক্যারোটিনা জাতের ফুলকপি সাধারণ ফুলকপির মতোই পরিচর্যা করতে হয়। অল্প জমিতে এই ফুলকপি চাষ করে বেশি লাভ পাওয়া যায়। আমার কাছ থেকে চারা নিয়ে এলাকায় আরও কয়েকজন কৃষক অন্তত পাঁচ বিঘা জমিতে এই দুই জাতের রঙিন ফুলকপি চাষ করছেন।’

যশোর সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাসান আলী বলেন, ‌‘ফুলকপির জাত দুটি পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ। রঙিন এই ফুলকপিতে আছে বিটা ক্যারোটিন, যা শরীরে ভিটামিন এ-তে পরিণত হয়।