মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার শতবর্ষী বামন্দী হাট গবাদিপশুতে ভরে ওঠে। বিক্রেতারা অপেক্ষা করছেন কাঙ্ক্ষিত ক্রেতার। গতকাল বিকেলে
মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার শতবর্ষী বামন্দী হাট গবাদিপশুতে ভরে ওঠে। বিক্রেতারা অপেক্ষা করছেন কাঙ্ক্ষিত ক্রেতার। গতকাল বিকেলে

মেহেরপুরে শেষ সময়েও কোরবানির পশুর দাম কমেনি

মেহেরপুরে কোরবানির পশুর দাম তুলনামূলকভাবে বেশি বলে অভিযোগ করেছেন ক্রেতারা। তাঁরা বলছেন, কোরবানির পশু হিসেবে গরু কেনার বিষয়টি মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। বাধ্য হয়ে তাই ছোট ছোট পশু কিনছেন অনেকেই। কেউ কেউ আবার একাধিক অংশীদার মিলে একটি গরু কিনছেন। চাহিদার বিপরীতে পশুর সংখ্যা বেশি হলেও দাম এবার সহনীয় পর্যায়ে নেই। খামারি ও গরুর মালিকদের দাবি, পশুর লালন-পালন ও খাদ্যের খরচ বাড়ার কারণে পশুর দাম তুলনামূলকভাবে বেশি।

মেহেরপুরে জেলার সবচেয়ে বড় পশুর হাট গাংনী উপজেলার শতবর্ষী বামন্দী পশুর হাট ঘুরে এসব তথ্য জানা গেছে। গতকাল শুক্রবার ছিল হাটের দিন। সরেজমিনে দেখা যায়, কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে হাট গবাদিপশুতে ভরে উঠেছে। নিজেদের পছন্দের পশুটি খুঁজে নিচ্ছেন ক্রেতারা।

অন্যদিকে বিক্রেতারা অপেক্ষা করছেন কাঙ্ক্ষিত ক্রেতার। সপ্তাহে দুদিন পশুর হাট বসে। সাধারণ সময়ে দিনে অন্তত ১৫ হাজার গরু কেনাবেচা হয় বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের। ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা ক্রেতাদের সরব উপস্থিতিতে সরগরম হয় হাটটি। আর পবিত্র ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে এবার প্রতি হাটে ৩০ হাজারের বেশি পশুর উপস্থিতির তথ্য জানানো হয়েছে।

জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে জেলায় দুই লাখ গরু বিক্রি হতে চলেছে। জেলায় ৪৫টি বড় খামার রয়েছে। তা ছাড়া কৃষকেরা গরু পালনে লাভ বেশি হওয়ায় প্রতিটি বাড়িতে একটি-দুটি করে গরু পালন করেন। তাঁদের সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি। এসব এলাকায় হোলস্টাইন ফ্রিজিয়ান, শাহিওয়াল গরু, পাকিস্তানি, রেড ইন্ডিয়ান জাতের গরু পালন করা হয়।

হাটে ১১টি গরু এনেছেন মালসহদহ গ্রামের গরু খামারি আমিনুল ইসলাম। এগুলোর বেশির ভাগ ফ্রিজিয়ান জাতের। তিনি বলেন, প্রতিবছর গো খাদ্যের দাম বাড়ে। এসব গরুকে প্রতিদিন দুবার করে গোসল করাতে হয়। গোয়ালঘরে বৈদ্যুতিক পাখা সার্বক্ষণিক চলে। সব মিলিয়ে বর্তমানে গরুর খামারিরা খুব ভালো অবস্থায় নেই। তার ওপর গ্রামের কৃষকেরাও বাড়িতে গরু পালন করেন।

খামারি ও গরুর মালিকদের দাবি, পশুর লালন-পালন ও খাদ্যের খরচ বাড়ার কারণে পশুর দাম তুলনামূলকভাবে বেশি

উপজেলার নওদা হাফানি গ্রামের বাসিন্দা আজগর মিয়া বছরে দুটি গরু পালন করেন বাড়িতে। এক বছর লালন–পালন করে কোরবানির ঈদে তা বিক্রি করে দেন। গতকাল হাটে তিনিও গরু নিয়ে আসেন। দুটি গরুর ওজন ছয় মণের কাছাকাছি হবে বলে ধারণা করছেন ক্রেতারা। গরু দুটিকে প্রতিদিনই বিচালি, ভুট্টা, নেপিয়ার ঘাস, খৈল খেতে দিতে হয়। প্রতিদিন ৫০০ টাকার মতো খরচ আছে এসব গরুর পেছনে। এরপর গরুকে গোসল দেওয়া, মাঠে চরাতে নিতে হয়। তাই পশু বিক্রি করে এসব খরচ ওঠাতে চান বিক্রেতারা।

পশু বিক্রেতাদের এমন মনোভাবের বিপরীতে ক্রেতারা বলছেন ভিন্ন কথা। তাঁদের অভিযোগ, হাটটিতে পশুর দাম তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি হাঁকছেন বিক্রেতারা। গাংনী উপজেলা শহরের একটি বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা মামনুর রহমান অভিযোগ করেন, হাটে পশুর আমদানি পর্যাপ্ত হলেও খামারি ও ব্যবসায়ীরা ‘যুক্তি করে’ গরুর দাম বেশি হাঁকছেন; যা আগের বছরের চেয়ে অনেক বেশি। পাঁচ মণের একটি গরুর দাম হাঁকা হচ্ছে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা; যা মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য লাগামছাড়া। এ কারণে কোরবানির জন্য তিনি ছাগল কেনার চিন্তাভাবনা করছেন।

মেহেরপুর পৌর শহরের বাসিন্দা ও ব্যবসায়ী রিপন হোসেন বলেন, একটি গরু একজনের পক্ষে কিনে কোরবানি দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এ কারণে আশপাশের কয়েকটি পরিবার মিলে একটি সাড়ে তিন মণ ওজনের গরু কিনেছেন। এমন ওজনের গরুর দাম নিল ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা। গত বছর দাম ছিল ১ লাখ ১০ হাজার টাকা।
সার্বিক বিষয়ে বামন্দী পশুর হাটের ইজারাদার সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘সিন্ডিকেটের বিষয়ে আমরা কিছু বলতে পারব না। তবে সিন্ডিকেট রয়েছে, এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। গত বছরের তুলনায় এবার গরুর দাম ৩০–৪০ হাজার টাকা বেশি দেখা যাচ্ছে।’

এখনই গরুর দাম নিয়ন্ত্রণের সময় এসেছে বলে মনে করেন জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা সাঈদুর রহমান। তিনি বলেন, মেহেরপুর মূলত কৃষিনির্ভর এলাকা। এলাকার মানুষ কৃষিকাজের পাশাপাশি বাড়িতে গরু–ছাগল পালন করে থাকেন।