রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাবু ভাই বাকি দিয়ে বন্ধ হওয়া হোটেলটি খুলেছেন

আর্থিক সহযোগিতা ও কিছু খদ্দেরের বাকির টাকা পেয়ে আবার দোকান চালু করেছেন ‘বাবু ভাই’। রোববার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ জিয়াউর রহমান হলের সামনে
ছবি: প্রথম আলো

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বাকি দিয়ে বন্ধ হয়ে যাওয়া বাবু হোটেল আজ রোববার সকালে খোলা হয়েছে। বাকির কারণে ২১ দিন বন্ধ থাকার পর দুজনের আর্থিক সহযোগিতা পেয়ে এবং পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হওয়ার পর কিছু খদ্দের তাঁদের বাকি পরিশোধ করায় তিনি হোটেলটি চালু করেছেন।

বাকি দেওয়ার কারণে তহবিল শূন্য হয়ে যাওয়ায় গত ২০ ডিসেম্বর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাবু হোটেল বন্ধ করে দেওয়া হয়। এ নিয়ে প্রথম আলোসহ বেশ কিছু গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়। এরপর আমেরিকাপ্রবাসী ও রেলের একজন কর্মকর্তা হোটেলমালিক মানিক হোসেন ওরফে বাবুকে ২৫ হাজার টাকা পাঠান। এদিকে পত্রপত্রিকায় খবর প্রকাশিত হওয়ার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাকি খাওয়া শিক্ষার্থীরাও কিছু টাকা পরিশোধ করেছেন। তাঁদের মধ্যে সর্বোচ্চ একজন সাড়ে সাত হাজার টাকা পরিশোধ করেছেন। এই টাকা পাওয়ার পর আজ সকালে হোটেল খোলা হয়েছে।

সকালে হোটেলে গিয়ে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা ছাড়াও বাইরের খদ্দের সকালের নাশতা করতে হোটেলে বসেছেন। সকাল পৌনে ১০টা পর্যন্ত ৩৫ জন সকালের নাশতা করেছেন। দোকানের কর্মচারী মনা বলেন, এখন পর্যন্ত নাশতা করতে আসা কোনো বাকি চাননি। হোটেলে প্রায় ১০০ জনের সকালের নাশতার ব্যবস্থা করা হয়েছে। নাশতার জন্য আগের মতোই পরোটা, খিচুড়ি, ভাত, রুটি ব্যবস্থা করা হয়েছে।

পাশাপাশি দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। হোটেলমালিক মানিক হোসেন ওরফে বাবু সকালে হোটেলে আসেননি। যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, হোটেলের জন্য বাজার করছেন। বাজার করা শেষ হলে তিনি হোটেলে আসবেন। তিনি বলেন আমেরিকাপ্রবাসী এক ব্যক্তি ১০ হাজার টাকা এবং রেলওয়ের এক ব্যক্তি ১৫ হাজার টাকা পাঠিয়েছিলেন। ইতিমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাকি খাওয়া শিক্ষার্থীরা খুচরা কিছু বাকি পরিশোধ করেছেন। একজনের বাকি পেয়েছেন সাড়ে সাত হাজার টাকা। এই টাকা নিয়েই তিনি আজ সকাল থেকেই হোটেল খুলেছেন।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ জিয়াউর রহমান হলের সামনে বাবুর হোটেলটি অবস্থিত। এই হোটেলের ভেতর দিয়ে হলের শিক্ষার্থীরা ঢুকে পেছন দিয়ে বের হয়ে ক্যাম্পাসে যান। সকালে হোটেলের ভেতর দিয়ে যাওয়ার সময় অনেকেই বলে ওঠেন ‘আরে হোটেল খোলা’।

শহীদ জিয়াউর রহমান হলের আবাসিক শিক্ষার্থী আবু সায়েম সকালের নাশতা করছিলেন। তিনি বলেন, এই হোটেল বন্ধ থাকার কারণে তাঁদের সাময়িক সমস্যা হয়েছে। ক্যানটিনে খেয়েছেন, এমনকি নিজে রুমে রান্না করে খেয়েছেন। কখনো ক্যানটিনে ভালো না লাগলে বা নিজে রান্না করার সময় না পেলে হোটেলে খেতেন। বাকি খাইয়ে বাবু ভাইয়ের তহবিল শূন্য হওয়ার কারণে হোটেল বন্ধ করে দিয়েছিলেন এটা তিনি জানেন। দোকান খোলার পর ভালো লাগছে বলে জানান। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান ভবনের কাজ চলছে এই হোটেলের পাশেই। সবাই বাবু হোটেলেই খাওয়াদাওয়া সেরে নিতেন। এই ২১ দিন বন্ধ থাকার কারণে তাঁরা বিপাকে পড়েছিলেন। সকালে পাঁচজন নির্মাণশ্রমিককে নাশতা করতে দেখা যায়।

তাঁদের মধ্যে আবদুল্লাহ বলেন যে কয়েক দিন দোকান বন্ধ ছিল। তাঁরা পাশের একটি দোকান থেকে সকালে কলা ও রুটি খেয়েছেন। খুবই বিড়ম্বনায় ছিলেন।

বাবুর হোটেলে মোট ১৪ জন কর্মচারী কাজ করেন। আজ দোকান খোলার দিনে সাতজন কর্মচারী এসেছেন। কর্মচারী মনা জানান, এখন বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ রয়েছে, তাই খদ্দের কম। খোলা হয়েছে এই খবর অনেকেই জানেন না। হোটেল ভালোভাবে চালু হলে অন্য কর্মচারীরাও কাজে যোগদান করবেন।