প্রসূতির লাশ নিয়ে কুষ্টিয়ায় ক্লিনিকের সামনে স্বজনদের বিক্ষোভ

কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে নোভা ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সামনে শুক্রবার বিক্ষোভ হয়
ছবি: প্রথম আলো

চার দিনের ব্যবধানে কুষ্টিয়ার কুমারখালী পৌরসভা এলাকায় নোভা ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অস্ত্রোপচার করা দুই প্রসূতির মৃত্যুর হয়েছে। এক প্রসূতির লাশ নিয়ে শুক্রবার দুপুর ১২টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত ক্লিনিক অবরুদ্ধ করে বিক্ষোভ করেন তাঁর স্বজন, শিক্ষার্থী ও এলাকার লোকজন।

স্বজনদের অভিযোগ, ভুয়া চিকিৎসক দিয়ে অস্ত্রোপচার করার কারণে তাঁরা মারা গেছেন। ঘটনার পর থেকেই ক্লিনিকের মালিক বদর উদ্দিনসহ সেখানকার কর্মরত সবাই পালিয়েছে।

পরে খবর পেয়ে সেখানে অভিযান পরিচালনা করে উপজেলা প্রশাসন। অভিযানে ক্লিনিকে নানা অসংগতি থাকায় তা অনির্দিষ্টকালের জন্য সিলগালা করা হয়। অভিযান পরিচালনা করেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আমিরুল আরাফাত। এ সময় জেলা সিভিল সার্জন মো. আকুল উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন।

মারা যাওয়া ওই দুই নারী হলেন উপজেলার যদুবয়রা ইউনিয়নের যদুবয়রা গ্রামের রিপন শেখের স্ত্রী বৃষ্টি খাতুন (২৫)। তিনি শুক্রবার সকাল ৮টার দিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। অপরজন নন্দলালপুর ইউনিয়নের বেলঘোড়িয়া গ্রামের আবদুর রশিদের মেয়ে মর্জিনা খাতুন (২৭)। তিনি ১৮ আগস্ট রাতে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান।

দুপুরে ক্লিনিকের সামনে গিয়ে দেখা যায়, ক্লিনিক চত্বরে উপচেপড়া ভিড়। একটি অ্যাম্বুলেন্সের মধ্যে রাখা রয়েছে বৃষ্টি খাতুনের লাশ। অ্যাম্বুলেন্সের সামনে একটি ভ্যানের ওপর এক নারীর কোলে রয়েছে বৃষ্টির এক দিন বয়সী কন্যা। পাশেই আহাজারি করছেন স্বজনেরা।

ক্লিনিকের সামনে স্বজনদের আহাজারি

বৃষ্টির মা চায়না খাতুন বলেন, গত বৃহস্পতিবার বেলা ৩টার দিকে মেয়েকে নোভা ক্লিনিকে নেন। তখন সেখানে অস্ত্রোপচারের কথা বলা হয়। বিকেল সাড়ে ৫টার মেয়ের অস্ত্রোপচার হয়। কিন্তু রক্ত দেওয়ার কথা বলে বৃষ্টির সঙ্গে তাঁদের দেখা করতে দেওয়া হচ্ছিল না। রাত ৯টা পর্যন্ত তিন ব্যাগ রক্ত দেওয়া হয়। এরপর হঠাৎ রাত তিনটার দিকে তড়িঘড়ি করে ক্লিনিকের মালিক বদর উদ্দিন তাঁদের একটি মাইক্রোবাসে করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ নিয়ে যান। সেখানে সকাল ৮টার দিকে বৃষ্টি মারা যান। তাঁদের সঙ্গে ক্লিনিকের দুজন নার্সও ছিলেন।

চায়না আরও বলেন,‘আমার মেয়েকে মেরে ফেলেছে তারা। আমি সঠিক বিচার চাই। আর কারও মায়ের বুক যেন খালি করতে পারে ওরা।’

বাবা সাইফুল শেখ অভিযোগ করে বলেন, ‘ভুয়া চিকিৎসক দিয়ে ক্লিনিকের মালিক আমার মেয়েকে সিজার করিয়েছেন। সিজারের সময় একাধিক নাড়ি কেটে ফেলা হয়েছে বলে শুনেছি। আমি থানায় মামলা করব।’

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য গতকাল নোভা ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক বদর উদ্দিনের মুঠোফোনে কল করা হলেও তা বন্ধ থাকায় তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি। সিভিল সার্জন আকুল উদ্দিন বলেন, মাত্র চার দিনের ব্যবধানে দুজন প্রসূতির মৃত্যুর খবর পেয়ে ক্লিনিকটি পরিদর্শন করা হয়েছে। লাশ ময়নাতদন্তের পরে মৃত্যুর সঠিক কারণ জানানো যাবে। জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আমিরুল আরাফাত বলেন, অল্প সময়ের ব্যবধানে দুজনের মৃত্যুর অভিযোগ এবং নানা অসংগতি থাকায় অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লিনিকটি সিলগালা করা হয়েছে। নিহত নারীদের স্বজনদের থানায় মামলা করার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

বিকেল সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত কেউ থানায় আসেননি বলে জানিয়েছেন কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আকিবুল ইসলাম। তিনি বলেন, এই বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।