ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিমের (আনার) মৃত্যুর খবর শুনে তাঁর বাড়ির সামনে ভিড় করেছেন আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীরা। আজ বুধবার বেলা ১১টার পর ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ শহরের নিশ্চিন্তপুর এলাকায় আসেন তাঁরা।
পরিবার ও দলীয় সূত্রে জানা যায়, ১২ মে আওয়ামী লীগের দলীয় সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম চিকিৎসার জন্য দর্শনা সীমান্ত দিয়ে ভারতে যান। ১৪ মে পর্যন্ত পরিবারের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ ছিল। তবে ১৬ মে সংসদ সদস্যের মুঠোফোন থেকে আনোয়ারুল আজিমের ব্যক্তিগত সহকারী আবদুর রউফের কাছে ফোন আসে। তিনি ফোন ধরতে পারেননি। পরে আবার তিনি ফোন করলে মুঠোফোনটি বন্ধ পান। এর পর থেকে সংসদ সদস্যের সঙ্গে যোগাযোগবিচ্ছিন্ন। আনোয়ারুল আজিমের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস গত রোববার বিকেলে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কার্যালয়ে গিয়ে তাঁর বাবার নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি জানান। পশ্চিমবঙ্গে আনোয়ারুল আজিম খুন হয়েছেন বলে আজ তথ্য পেয়েছে বাংলাদেশের পুলিশ।
আনোয়ারুল আজিমের মৃত্যুর খবর পেয়ে আজ বেলা ১১টার পর কালীগঞ্জ শহরের নিশ্চিন্তপুর এলাকার বাড়ির সামনে আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীরা আসতে শুরু করেন। কিছুক্ষণের মধ্যে ওই এলাকা লোকারণ্য হয়ে যায়। পাশে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে নেতা–কর্মীরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। দুপুর ১২টার দিকে আসেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইসরাত জাহান ও কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আবু আজিফ।
চারতলা ওই বাড়িতে ছোট মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে থাকতেন আনোয়ারুল আজিম। বাড়ির নিচতলা গুদাম হিসেবে ব্যবহৃত হয়। দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় বসবাসের কক্ষ। চতুর্থ তলায় রান্নাঘর। স্বজনেরা জানান, এই বাসা থেকে ১২ মে সকালে বের হন আনোয়ারুল আজিম। যাওয়ার সময় বলে যান তিনি ভারতে চিকিৎসার জন্য যাচ্ছেন।
আওয়ামী লীগের উপজেলা শাখার যুগ্ম সম্পাদক ও সুন্দরপুর-দুর্গাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ওহিদুজ্জামান বলেন, সংসদ সদস্যের মৃত্যুতে গোটা কালীগঞ্জের মানুষ একজন প্রাণের নেতাকে হারাল। তাঁর ধারণা, মূলত ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বের কারণে তাঁকে হত্যা করা হয়েছে। তাঁরা ভারত থেকে মরদেহ ফেরত পাওয়ার অপেক্ষায় আছেন। এরপর জানাযা শেষে পরবর্তী কর্মসূচির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
কালীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আশরাফুল আলম সাংবাদিকদের জানান, আনোয়ারুল আজিম এলাকায় জনপ্রিয় ছিলেন। এ কারণে একটি মহল চক্রান্ত করে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। যথাযথ তদন্তের মাধ্যমে হত্যার কারণ ও হত্যাকারীদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানান তিনি।
আনোয়ারুল আজিমের গ্রামের বাড়ি কালীগঞ্জ উপজেলার পার-শ্রীরামপুর গ্রামে। ১৯৮৮ সালে তৎকালীন বিএনপি নেতা ও পরে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আবদুল মান্নানের হাত ধরে রাজনীতিতে আসেন। ১৯৯২ সালে কালীগঞ্জ পৌরসভা গঠিত হলে আনোয়ারুল আজিম কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। ১৯৯৫ সালে আবদুল মান্নান বিএনপি ছেড়ে আওয়ামী লীগে যোগ দেন। তখন আনোয়ারুল আজিমও আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যুক্ত হন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে তাঁরা দুজনই এলাকায় আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় হন। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় এলে আনোয়ারুল আজিম ভারতে চলে যান। সেখানে দীর্ঘদিন অবস্থানকালে তিনি ২০০৪ সালে কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এরপর তিনি দেশে ফিরে আসেন।
২০০৯ সালের নির্বাচনে আবদুল মান্নান আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে সংসদ সদস্য এবং আনোয়ারুল আজিম কালীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান থাকা অবস্থায় তাঁর সঙ্গে আবদুল মান্নানের বিরোধ হয়। ২০১৪ সালে দলীয় মনোনয়ন নিয়ে ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আনোয়ারুল আজিম। টানা তিনবার তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।