সারা দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করতে একটি স্বার্থান্বেষী মহলের উসকানিতে ২ মার্চ থেকে ৪ মার্চ পঞ্চগড়ে বর্বরোচিত হামলা করা হয়েছে বলে জানান পুলিশ সুপার এস এম সিরাজুল হুদা। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে পুলিশ সুপার এ তথ্য দেন।
পুলিশ সুপার এস এম সিরাজুল হুদা বলেন, সারা বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য ২ থেকে ৪ মার্চ পঞ্চগড়ে বর্বরোচিত নাশকতার কাণ্ড ঘটানো হয়। ধর্মীয় অনুভূতিকে কাজে লাগিয়ে একটি মহলের অপস্বার্থ বাস্তবায়নে ২০২৩ সালে দেশের রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহ সামনে রেখে আক্রমণ করা হয়।
পুলিশ সুপার বলেন, পুলিশের ওপর হামলা করা হয়েছে। থানা আক্রমণের চেষ্টার, ট্রাফিক পুলিশের কার্যালয় পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। বয়স্ক কনস্টেবলকে পুড়িয়ে মারার চেষ্টা করা হয়েছে। র্যাবের গাড়ি পোড়ানো হয়েছে, মানুষের ঘরবাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছে। দীর্ঘ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে প্রশিক্ষিত ক্যাডাররা পেট্রল, গানপাউডার নিয়ে এ আক্রমণ করে। পুলিশের তৎপরতার কারণে দ্রুত নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ঘটনার দিন (শুক্রবার) ৩৭০ জন পুলিশ, ৬৪ জন র্যাবসহ ৫ প্লাটুন বিজিবি দায়িত্ব পালন করছিল। সেই দিন মসজিদসহ শহরের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা কঠোর নজর রেখেছিলেন। আহমদিয়া সম্প্রদায়ের জলসাস্থলে সাত থেকে আট হাজার লোক অবস্থান করছিল। সেখানে কয়েক হাজার ব্যক্তি চারপাশ থেকে আক্রমণ করার চেষ্টা করেছে। জেলা প্রশাসক, বিজিবিসহ পুলিশ গিয়ে তাঁদের রক্ষা করা সম্ভব হয়। এ ঘটনায় পুলিশ কোনো গুলি চালায়নি। গুলি চালালে ব্যাপক প্রাণহানি হতো এবং সারা দেশে তার ব্যাপক প্রভাব পড়ত।
পুলিশ সুপার এস এম সিরাজুল হুদা বলেন, ‘পঞ্চগড়ের শান্তিপ্রিয় মানুষকে খেপিয়ে তুলে যে স্বার্থান্বেষী মহল সারা দেশকে অস্থিতিশীল করার প্রচেষ্টা চালিয়েছে, তাঁদের আমরা এক এক করে আইনের আওতায় আনব। তবে কোনো সাধারণ নিরীহ মানুষকে হয়রানি করব না। যারা ঘটনায় জড়িত, তাঁরাই শুধু আতঙ্কে থাকবে, সাধারণ নিরপরাধ মানুষের মধ্যে কোনো আতঙ্ক থাকবে না।’ প্রকৃত অপরাধীদের ধরতে তিনি গণমাধ্যমকর্মীসহ সাধারণ মানুষের সহযোগিতা চান।
পুলিশ সুপার আরও বলেন, পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের কারণে জেলার পরিবেশ বর্তমানে স্বাভাবিক আছে। এখন পর্যন্ত ১৩টি মামলা নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে বিশেষ ক্ষমতা আইনে চারটি, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি, হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় একটি মামলা নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া অন্য মামলাগুলো পুলিশ করেছে। প্রকৃত নাশকতাকারীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। গোয়েন্দা তথ্য যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে প্রকৃত দোষীদের ধরা হচ্ছে। ইতিমধ্যে ভিডিও ফুটেজ দেখে ১৬৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ঘটনায় কোনো নিরপরাধ মানুষকে হয়রানি করা হচ্ছে না।
সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) এস এম শফিকুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) রাকিবুল ইসলাম, সদর থানার ওসি আবদুল লতিফ মিঞা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।