দলে পক্ষ তিনটি। নেতৃত্বে আছেন রাজী মোহাম্মদ ফখরুল, রৌশন আলী ও দেবীদ্বার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ।
কুমিল্লার দেবীদ্বার উপজেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি নিয়ে অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে। পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে দলের ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতা-কর্মীরা অন্তর্ভুক্ত না হওয়ায় কমিটির কার্যক্রম স্থগিত করেছেন কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ম রুহুল আমিন। এ নিয়ে দেবীদ্বারে আওয়ামী লীগের বিবদমান পক্ষগুলোর মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৬ সালের ২ আগস্ট জয়নুল আবেদীনকে সভাপতি ও এ কে এম মনিরুজ্জামানকে সাধারণ সম্পাদক করে দেবীদ্বার উপজেলা আওয়ামী লীগের ৭১ সদস্যবিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়। এরপর ২০২২ সালের ২ সেপ্টেম্বর উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন হয়। এতে এ কে এম সফিউদ্দিনকে সভাপতি, এ কে এম মনিরুজ্জামানকে জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি, মোস্তফা কামাল চৌধুরীকে সাধারণ সম্পাদক, হুমায়ুন কবির ও এজাজ মাহমুদকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও প্রথম সদস্য করা হয় আবদুল মতিন সরকারকে।
সফিউদ্দিন গুনাইঘর উত্তর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সদস্য ছিলেন। তিনি কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রৌশন আলীর অনুসারী। মোস্তফা কামাল চৌধুরী কুমিল্লা উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের কৃষি ও সমবায় সম্পাদক। তিনি কুমিল্লা-৪ (দেবীদ্বার) আসনের সংসদ সদস্য রাজী মোহাম্মদ ফখরুলের অনুসারী।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে উপজেলা আওয়ামী লীগের অন্তত তিনজন সদস্য বলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগে তিনটি পক্ষ আছে। পক্ষ তিনটির নেতৃত্বে আছেন রাজী মোহাম্মদ ফখরুল, রৌশন আলী এবং কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও দেবীদ্বার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ। গত ১৫ জানুয়ারি উপজেলা আওয়ামী লীগের ৭১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটির অনুমোদন দেন রুহুল আমিন ও রৌশন আলী। ২২ জানুয়ারি কমিটির বিষয়টি জানাজানি হয়। এতে রৌশন আলীর অনুসারীরা বেশির ভাগ পদে স্থান পান। এতে ক্ষুব্ধ হন দলের পদবঞ্চিত নেতা-কর্মীরা। পরে ২৬ জানুয়ারি প্রথমে কমিটির কার্যক্রম স্থগিত করার নির্দেশ দেন রুহুল আমিন। এরপরও ঘোষিত কমিটি কাজ শুরু করে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ৪ ফেব্রুয়ারি দুপুরে পদবঞ্চিত নেতা-কর্মীরা দেবীদ্বার পৌর এলাকার আওয়ামী লীগের নেতা মুজিবুর রহমানের বাড়িতে সংবাদ সম্মেলন করেন।
ওই সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ঘোষিত কমিটির ৬৬ জনই নানাভাবে আলোচিত, সমালোচিত ও রৌশন আলীর অনুসারী। পরে ৭ ফেব্রুয়ারি রুহুল আমিন কমিটির কার্যক্রম স্থগিত করেন। একই সঙ্গে সাত দিনের মধ্যে কমিটি পুনর্গঠনের নির্দেশ দেন।
এ প্রসঙ্গে আবুল কালাম আজাদ বলেন, পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে দলের ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতারা নেই। রাজী মোহাম্মদ ফখরুলের মুঠোফোনে কল করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।
রুহুল আমিন বলেন, একতরফা কমিটি গঠন করায় কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপনের নির্দেশে কমিটির কার্যক্রম স্থগিত করা হয়। কমিটি পুনর্গঠনের জন্য বলা হয়। রৌশন আলীর মুঠোফোনে গতকাল শুক্রবার বিকেলে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি সাড়া দেননি। পরে খুদে বার্তা পাঠানো হলেও তিনি সাড়া দেননি। তবে পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদনের পর তিনি বলেছিলেন, দলের ত্যাগী ও স্বচ্ছ নেতাদের মূল্যায়ন করা হয়েছে। তাঁরা কার আত্মীয়, সেটা দেখা হয়নি; দল করেন, সেটা দেখা হয়েছে। কমিটিতে মাদকাসক্তদের রাখা হয়নি।
রৌশন আলীর অনুসারী সফিউদ্দিন প্রশ্ন রেখে বলেন, কুমিল্লা উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি নিজেই কমিটি অনুমোদন দিয়েছেন। আবার নিজেই স্থগিত করেন কীভাবে?