বিএনপির সমাবেশের আশপাশে হামলা, আ.লীগ বলছে ‘কোন্দল’, পুলিশ বলছে ‘শান্তিপূর্ণ’

নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি ও ভোলায় গুলিতে দুই নেতা নিহত হওয়ার প্রতিবাদে বিএনপির সমাবেশ। আজ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বরিশালের উজিরপুরে
ছবি: সংগৃহীত

নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি ও ভোলায় গুলিতে দুই নেতা নিহত হওয়ার প্রতিবাদে বরিশালের উজিরপুরে বিএনপি আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে আসার পথে ও সমাবেশস্থলের আশপাশে হামলার ঘটনা ঘটেছে। বিএনপি নেতারা বলছেন, লাঠিসোঁটা ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের হামলায় তাঁদের ৪০ নেতা–কর্মী আহত হয়েছেন।

আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে বিক্ষিপ্তভাবে এসব হামলার ঘটনা ঘটে। তবে হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, বিএনপির দলীয় কোন্দলের কারণে হামলার ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ জানিয়েছে, বিএনপির সমাবেশ ‘শান্তিপূর্ণভাবে’ শেষ হয়েছে।

বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সন্নিকটে বালু মাঠে প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করে উজিরপুর উপজেলা বিএনপি। এতে সভাপতিত্ব করেন বরিশাল দক্ষিণ সাংগঠনিক টিমের প্রধান ও জেলা বিএনপির সদস্য মো. নাসির জমাদ্দার। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক কাজী রওনুকুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি ছিলেন বরিশাল জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মো. মজিবুর রহমান ও সদস্যসচিব আকতার হোসেন।

বিএনপির নেতা-কর্মীরা বলছেন, বেলা ১১টায় সভায় খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে আসার পথে সাতলা, ডাবেরকুল, সদরের টেম্পোস্ট্যান্ড, পৌরসভা ডাকবাংলো ও বেলতলা এলাকায় বিএনপি নেতা-কর্মীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। বেলা সাড়ে ১১টায় সভা শুরুর কিছুক্ষণের মধ্যে সভার আশপাশেও হামলা চালিয়ে নেতা-কর্মীদের মারধর করা হয়। যদিও শেষ পর্যন্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, উজিরপুর পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রিপন মোল্লা, তাঁর ভাই উজিরপুর পৌর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক শিন মোল্লা, উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও পৌর সভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর অসীম উকিল, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. রিয়নের নেতৃত্বে প্রায় ৫০-৬০ জন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী লাঠিসোঁটা ও ধারাল অস্ত্র নিয়ে বিভিন্ন স্থানে হামলা চালান। হামলাকারীরা পিটিয়ে ও কুপিয়ে কমপক্ষে ৪০ নেতা-কর্মীকে আহত করেছেন। প্রায় ২০ জনকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হলে সেখানে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা দ্বিতীয় দফায় হামলা চালালে আহত ব্যক্তিরা হাসপাতাল ছেড়ে গোপনে চিকিৎসা নেন। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে গুরুতর দুজনকে বরিশাল শের–ই–বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

বিএনপি নেতা শহিদুল ইসলাম বলেন, সমাবেশে আসার পথে আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীর সঙ্গে পুলিশও হামলা চালায়। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন উজিরপুর উপজেলা শ্রমিক দলের আহ্বায়ক মো. কাইয়ুম খান (৪০), উপজেলা কৃষক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক জহিরুল ইসলাম (৩২), সাতলা ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আল আমিন (৫০), তাঁর গাড়িচালক আবদুল্লাহ (৪০), সাতলা ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন (২৮), সদস্য রুবেল হোসেন (৩০), পৌর শ্রমিক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জুম্মন হোসেন (২৯), সহসম্পাদক কাওছার হোসেন (২৭) প্রমুখ।

হামলা চালানোর অভিযোগ অস্বীকার করেছেন পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রিপন মোল্লা, পৌর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক শিন মোল্লা ও উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি অসীম উকিল। তাঁদের দাবি, হামলার সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের কোনো নেতা–কর্মী জড়িত নন। বিএনপির নিজ দলীয় কোন্দলে নিজেদের মধ্যে হামলার ঘটনা ঘটেছে।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র মো. গিয়াস উদ্দিন ব্যাপারীও বলেছেন, বিএনপি মিথ্যাবাদী দল। তাই নিজেদের মধ্যে হামলার ঘটনা ঘটলেও আওয়ামী লীগের ওপর দোষ চাপাচ্ছে।

উজিরপুর মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মমিন উদ্দিনও বিএনপি নেতাদের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, হামলায় পুলিশ জড়িত থাকা তো দূরের কথা, কোনো হামলার ঘটনা ঘটেনি। বিএনপি শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করেছে।