‘আমার বাবা তো কোনো পক্ষে ছিল না। কোনো দল করত না। কখনো ঝগড়াঝাঁটিতেও যাইত না। তাহলে আমার বাবারে কেন মারল?’ এভাবেই আক্ষেপ করছিলেন মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার আধারা ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে নিহত পথচারী মনির হোসেন মোল্লার মেয়ে শিউলি আক্তার।
নিহত মনির হোসেন মোল্লা (৬৫) মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার আধারা ইউনিয়নের বকুলতলা এলাকার প্রয়াত মোতালেব মোল্লার ছেলে। তাঁর দুই ছেলে ও চার মেয়ে। দুই ছেলে প্রবাসে থাকেন। আজ মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে মনির হোসেন মোল্লার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির উঠানে স্বজনদের জটলা। মাঝখানে বসে বিলাপ করছেন নিহত ব্যক্তির স্ত্রী, সন্তান ও বোনেরা। তাঁদের সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন স্বজন ও প্রতিবেশীরা।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সদর উপজেলার আধারা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সুরুজ মিয়া এবং ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আলী হোসেনের অনুসারীদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে। তাঁদের মধ্যে একাধিকবার সংঘর্ষ হয়েছে। গতকাল সোমবার দুপুরে ইউনিয়নটির বকুলতলা এলাকায় দুই পক্ষের লোকজনের মধ্যে তুচ্ছ বিষয় নিয়ে কথা-কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে তাঁরা সংঘর্ষে জড়ান। বিকেলের দিকে উভয় পক্ষ গোলাগুলি শুরু করে। এ সময় তাদের ছোড়া গুলিতে মনির হোসেন মোল্লাসহ ১৫ থেকে ২০ জন আহত হন। রাত সাড়ে নয়টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মনির হোসেন মারা যান।
এ বিষয়ে আধারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, দুটি পক্ষকে নিয়ন্ত্রণের জন্য মীমাংসা করতে অনেকবার চেষ্টা করা হয়েছে। পক্ষ দুটি খুবই উগ্র। কারও কথাই শোনে না। বারবার তারা রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে জড়াচ্ছে।
মনির হোসেন মোল্লার মেয়ে শিউলি আক্তার বলেন, ‘আমার বাবার সব সময় বাড়িতেই থাকতেন। নামাজের সময় শুধু মসজিদে যেতেন। গতকাল আমার বাবা নামাজ পড়তে গেলেন। নামাজ শেষে বাড়ির কাছাকাছি চলে এসেছিলেন। গুলি করে তাঁকে লাশ করে ফেলা হলো।’
নিহত ব্যক্তির স্ত্রী মঞ্জু বেগম খানিক পরপর বিলাপ করছিলেন। তিনি বলছিলেন, ‘এলাকায় কিছুদিন পরপর পক্ষ দুটি সংঘর্ষে জড়ায়। তাদের কারণে আমরা এলাকায় শান্তিমতো থাকতে পারি না। আমার স্বামীকে সংঘর্ষের সময় বাইরে যেতে নিষেধ করেছিলাম। সে বলেছিল, সে কোনো দলাদলিতে নেই। তাকে কেউ কিছু বলবে না। নামাজ শেষে বাড়িতে ফিরে আসবে। অথচ এই নিরীহ মানুষটাকেই গুলি করে মেরে ফেলল।’
মুন্সিগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তারিকুজ্জামান আজ বেলা তিনটার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, ‘নিহতের ঘটনায় এখনো কোনো অভিযোগ দাখিল হয়নি। পরিবারটির সঙ্গে কথা বলেছি। লাশ এখনো ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। লাশ দাফনের পর পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ দেওয়া হবে। তবে ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের ধরতে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।’