পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করতে না চাওয়ায় মুন্সিগঞ্জের লৌহজং উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়নের দেওয়ানকান্দিতে রাস্তার ওপর আওয়ামী লীগ নেতার নির্মাণ করা ইটের দেয়াল ভেঙে দেওয়া হয়েছে। আজ সোমবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ভূমি কার্যালয় ও স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় ওই দেয়াল ভেঙে ফেলেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রুকসানা খাইরুন নেসা।
ওই আওয়ামী লীগ নেতা হলেন সেলিম দেওয়ান। তিনি কুমারভোগ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুর রশিদ শিকদারের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। দ্বিতীয় ধাপের আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে রশিদ শিকদার একজন সম্ভাব্য প্রার্থী। অভিযোগ উঠেছে যে রশিদ শিকদারের পক্ষে কাজ না করায় গত বৃহস্পতিবার ইটের দেয়াল তুলে দেওয়ানকান্দিতে মানুষ চলাচলের মাটির রাস্তা বন্ধ করেন সেলিম দেওয়ান।
এ নিয়ে গতকাল রোববার প্রথম আলো অনলাইনে ‘পক্ষে না থাকায় ইট তুলে রাস্তা বন্ধ করে দিলেন আওয়ামী লীগ নেতা’ শিরোনামে সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
আজ বিকেলে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায় যে নির্মাণ করা দেয়ালের অধিকাংশ ভেঙে ফেলা হয়েছে। তবে এখনো মাটির ওপর এক ফুট উঁচু দেয়াল রয়েছে। ভুক্তভোগী হোসেন মৃধা বলেন, ‘প্রশাসন রাস্তাটি আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নিচ্ছে। এতে আমরা খুশি। আমরা চাই, রাস্তাটি যেন সব সময় খোলাই থাকে।’
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রুখসানা খাইরুন নেসা বলেন, আজ সকালে দেওয়ানকান্দিতে গিয়ে স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় রাস্তায় করা দেয়ালটি ভেঙে দেওয়া হয়েছে। মানুষের চলাচলের রাস্তা কোনোভাবেই বন্ধ করা যাবে না, এটি ব্যক্তিগত জায়গায় হলেও। আর যেখানে দেয়াল দিয়ে বন্ধ করা হচ্ছিল, সেটি সরকারি খাস খতিয়ানভুক্ত জমি। এখানে কোনোভাবেই দেয়াল রাখা যাবে না।
জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, লৌহজংয়ের খড়িয়া মৌজায় ১০৮ শতাংশ খাসজমি আছে। দেওয়ানকান্দি গ্রামের ওই জমির পাশেই গোয়ালিমান্দ্রা খাল। প্রায় ৫০টি পরিবার গৃহস্থালিসহ নানা কাজে ওই খাল ও খালের পানি ব্যবহার করে। দেড় দশক আগে খালে যাওয়া ও খাল থেকে মূল সড়কে যাতায়াতের জন্য খাসজমিতে প্রায় ২০০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৬ ফুট প্রশস্ত এ মাটির রাস্তা তৈরি করা হয়।
এলাকাবাসী জানান যে নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী চাঁদা দিয়ে ৯৪ হাজার টাকায় রাস্তাটি নির্মাণ করেন তাঁরা। খালপাড়ে বসবাস করা বেদে সম্প্রদায়ের লোকজনও রাস্তাটি ব্যবহার করেন।
রাস্তা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পরিবার-পরিজন নিয়ে ঘরবন্দী হয়ে পড়েছিলেন শিউলি বেগম। প্রশাসন রাস্তা খুলে দেওয়ায় তিনিসহ ভুক্তভোগী সবাই খুশি। শিউলি বেগম বলেন, ‘আমরা প্রশাসনের কাছে অনেক কৃতজ্ঞ। তবে এখনো রাস্তার ওপর এক ফুটের মতো দেয়াল রয়েছে। আমরা চাই, বাকি এক ফুট উঁচু দেয়াল ভেঙে আগের মতো করা হোক।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. জাকির হোসেন বলেন, রাস্তাটিতে কোনো দেয়াল থাকবে না। যেমন ছিল, ওই অবস্থায় ফিরিয়ে আনা হবে।
সংবাদ সম্মেলন
আজ বেলা সাড়ে তিনটায় উপজেলা নির্বাচনে সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থী আবদুর রশিদ শিকদার তাঁর মাইজগাঁও গ্রামের বাড়িতে সংবাদ সম্মেলনে করেছেন। সেলিম দেওয়ানের সঙ্গে তাঁকে জড়িয়ে বিভিন্ন জাতীয় ও স্থানীয় গণমাধ্যমে যেসব সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে, সেগুলো তিনি অসত্য বলে দাবি করেন।
রশিদ শিকদার বলেন, ‘সেলিম দেওয়ান আমার পক্ষে নির্বাচন করছেন। তাঁর মতো অনেকেই আমার সমর্থক। এটা প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর পছন্দ নয়। তাই সেলিমের ব্যক্তিগত সমস্যাকে কেন্দ্র করে নির্বাচনী ফায়দা নিতে আমাকে জড়ানো হয়েছে।’